সোশাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) খাবারের খরচ নিয়ে মনগড়া তথ্যকে তথ্যের অধিকার আইন (RTI) (আরটিআই) বলে পাওয়া তথ্য বলে দাবি করা হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দৈনিক খাবারের (food expenses) জন্য খরচ হয় ৪১ হাজার ৫ শত ৭৯ টাকা।
বুম দেখে এই ধরণের কোনও আরটিআইয়ের প্রত্যুত্তর (RTI query) দেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা নেই। গণমাধ্যমেও এব্যাপারে কোনও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি সহ গ্রাফিক পোস্টটিতে লেখা হয়েছে, "আরটিআই মারফত জানা গেছে আমাদের ফকির মোদীর একদিনের খাওয়া খরচ মাত্র ৪১ হাজার ৫ শত ৭৯ টাকা।"
গ্রাফিক পোস্টটি শেয়ার করে ফেসবুক ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "তার আমলে দেশে গরীব মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি রেকর্ড করছে। তার আমলে বেকার সমস্যা রেকর্ড করছে। সেই মানুষের খাওয়া খরচ দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। ধিক্কার ধিক্কার চরম জানাই। #ভারতবাসীকে_বাঁচতে_দিন #মোদীজী_পদত্যাগ_করুন #resign_pm_modi #ResignModi
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দৈনিক খাবারের খরচ", "দৈনিক খরচের আরটিআই" প্রভৃতি কিওয়ার্ড গুগলে সার্চ করে দেখে এই বিষয়ে কোনও আরটিআই প্রকাশিত হয়নি। গণমাধ্যমে এব্যাপারে কোনও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি।
মনগড়া লেখা
বুম নিউজ ক্রাব নামের ওয়েবপোর্টালের দুটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়। একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম, "মোদীজি একদিনের খাবারের জন্য কত টাকা খরচ করেন।" বুম দেখে ওই প্রতিবেদনে আরটিআই-থেকে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়নি। প্রতিবেদনটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বুম নিউজ ক্রাবকে ভিত্তি করে নিউজ অ্যাগ্রিগেটর অ্যাপ ডেইলি হান্টের আরেকটি প্রতিবেদন দেখে । ওই প্রতিবেদনে নিউজ ক্রাব-এর প্রতিবেদন বলে উল্লেখ করা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে আরটিআই-এ পাওয়া তথ্য বলে উল্লেখ করা নেই। আমরা নিউজ ক্রাব ওয়েবাসাইটে অবশ্য ওই প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি। ডেউলি হান্টের প্রতিবেদনটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
প্রধানমন্ত্রীর ওয়েবাসাইটে উল্লেখ নেই তথ্যের
বুম প্রধানমন্ত্রীর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যের অধিকার আইন মারফত জানানো বিভিন্ন তথ্যের তালিকা খুঁজে দেখে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর খাবারের খরচ (meal expenses) বাবদ আরটিআই মারফত তথ্য প্রদানের কথার উল্লেখ নেই।
২০১৫ সালে অন্য আরেকটি আরটিআই আবেদনে তথ্য জানতে চাওয়া হয়, প্রধানমন্ত্রী কি ধরণের, কতগুলো গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেছেন ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে। ২০১৫ সালের মে মাসে একই তথ্য জানতে চেয়ে সিলিন্ডার খরচের পরিমাণ ও বিলের জেরক্স কপি চাওয়া হয়। ২০১৫ মাসে আরটিআই করে ওই বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর জন্য কেনা মশলা ও সবজির খরচের বিল চাওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট এই সব তথ্যের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর রান্না ঘরের ঘরচ ব্যক্তিগত বিষয় তা সরকারের ব্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বলে এই বিষয়ে কোনও তথ্য প্রদান করা সম্ভব নয়।
এই বিষয়ে আরটিআই জবাব না মেলা নিয়ে দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে।
তথ্যের অধিকার আইনের সীমাবন্ধতা
২০১৫ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের পাশ করা তথ্যের অধিকার আইনের কতগুলি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আইনের ৮(১) নং ধারা, ৯ নং ধারা, ২৪ নং ধারা অনুযায়ী কোন কোন বিষয়ে আরটিআই আইন কার্যকরী হবে না বা আরটিআই আইনের অধীন তথ্য জানতে চাওয়া হলে জবাব মিলবে না তা উল্লেখ করা আছে।
আরটিআই আইনের ৮(১) নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, সার্বভোমত্ব, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সংক্রান্ত এবং পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কূটনৈতিক সম্পর্কের পরিপন্থী বিষয়; বাণিজ্য, ব্যবসার গোপনীয়তা অথবা মেধা সম্পদ সম্পর্কিত বিষয়ের তথ্যের অধিকার আইন বলবৎ না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তথ্য প্রদানের ফলে কোনও ব্যক্তির প্রাণহানি, তদন্তের স্বার্থে আঘাত লাগতে পারে অথবা ব্যক্তিগত বিষয় যা জনস্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় সেরকম ক্ষেত্রে আরটিআই আবেদন কার্যকরি নয়।
৯ নং ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনার অথবা রাজ্যের তথ্য আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাত্বাধিকার লঙ্ঘনকারী কোনও বিষয়ে জবাব না দিতে।
আবার ২৪ নং ধারা অনুযায়ী নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থার মানব অধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতি ব্যাতিরেকে তথ্য না প্রকাশ না করার কথা বলা হয়েছে।
কোন কোন বিষয় দেখিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে আরটিআই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তা জানা যাবে দ্য হিন্দুর-এই প্রতিবেদনে।
সূত্র:
ইন্ডিয়ানকানুন ওয়ার্জি, পিএমইন্ডিয়া গভ ইন, জর্নালিজম থ্রু আরটিআই: ইনফর্মেশন ইনভেস্টিগেশন ইমপ্যাক্ট শ্যামলাল যাদব, সেজ প্রকাশন
আরও পড়ুন: বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে ভারত সরকার গত ৫ বছর কোনও ঋণ নেয়নি? একটি তথ্য-যাচাই