বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) প্রজাতন্ত্র দিবসে একটি ভিডিও টুইট করেছেন, যাতে দেখানো হযেছে, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা পূর্ণচন্দ্র বাউরি (Purnachandra Bauri) দলীয় পতাকার সামনে দাঁড়িযে জাতীয় সঙ্গীত (National Anthem) গাইছেন। শুভেন্দু ওই ভিডিও টুইট করে দাবি করেছেন, তৃণমূল নেতা প্রজাতন্ত্র দিবসে জাতীয় পতাকার পরিবর্তে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন।
কিন্তু বুম দেখলো, 26 জানুযারি আদৌ তেমন কিছু ঘটেনি। বরং দলীয় পতাকার পাশাপাশি জাতীয় পতাকাও তৃণমূল কংগ্রেস উত্তোলন করেছে এবং যে দণ্ডটিতে জাতীয় পতাকা টাঙানো হয, দলীয় পতাকার দণ্ডের চেয়ে সেটি আরও উঁচুই ছিল। আমরা পূর্ণচন্দ্র বাউরির সঙ্গেও যোগাযোগ করি, যিনি আমাদের জানান, ওই দিন তাঁরা জাতীয় পতাকাই তুলেছিলেন, কিন্তু শুভেন্দুর টুইট করা ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে সেটিকে দেখানো হয়নি।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে কেবল দেখানো হযেছে, পূর্ণচন্দ্র তাঁর দলীয় সহকর্মীদের সঙ্গে গলা খুলে জাতীয সঙ্গীত গাইছেন আর টিএমসি-র একটি দলীয় পতাকা উড়ছে।
শুভেন্দুর টুইট করা ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওটির ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে—"এটা লজ্জাজনক যে, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের প্রাক্তন বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি এবং অন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে এ ভাবে জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা করা হয়েছে। ওরা এমনকী জাতীয় পতাকারও অসম্মান করেছে তার বদলে দলের পতাকা তুলে।"
টুইটটি দেখা যাবে এখানে।
ওই একই ভিডিও একই ভুল ক্যাপশন দিযে অন্যান্য দক্ষিণপন্থী বিবরণেও ভাইরাল করা হয়েছে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
লোকমত নিউজ এবং এশিয়ানেট নিউজেবল শুভেন্দুকে উদ্ধৃত করে এই বিষয়টি ভুলভাবে রিপোর্ট করেছে।
আরও পড়ুন: না, অখিলেশ যাদব নিজেকে রাবণের সঙ্গে তুলনা করেননি
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, ভাইরাল ভিডিওর এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, কেননা ওই ঘটনাটির অন্য অনেক ছবি রয়েছে, যাতে পূর্ণচন্দ্র বাউরি ও তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা জাতীয় এবং দলীয় দুটি পতাকাই তুলেছেন, যদিও ভাইরাল ভিডিওতে সেটা দেখানো হয়নি।
শুভেন্দুর দেওযা সূত্র অনুসরণ করেই আমরা 'রঘুনাথপুর' এবং 'পূর্ণচন্দ্র বাউরি', এই মূল শব্দগুলি বসিযে তল্লাশি চালিয়ে দেখেছি এমন কিছু ছবি ও ভিডিও, যাতে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে প্রজাতন্ত্র দিবসে জাতীয পতাকা তোলার দৃশ্য স্পষ্ট। শুধু তাই নয়, জাতীয় পতাকাকে য়ে দণ্ডটিতে টাঙানো হয়েছে, সেটি দলীয় পতাকার দণ্ডের চেয়েও অনেক লম্বা।
আমরা পূর্ণচন্দ্র বাউরির সঙ্গেও যোগাযোগ করি, যিনি আমাদের জানান, তাঁরা প্রথমে জাতীয পতাকাই উত্তোলন করেছিলেন যদিও তাঁদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, "বিজেপির নেতারা আমাদের নিযে ভুল খবর প্রচার করতে সমর্থ হয়নি, কেননা আমাদের কাছে প্রমাণ রযেছে, ওই দিনের ঘটনার ছবিও আছে। আমরা সংবিধান এবং আইনের শাসন মেনে চলি। ওরা ইচ্ছা করেই আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে এমন একটা ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করছে, যাতে তেরঙা জাতীয় পতাকাটা দেখা য়াচ্ছে না।"
রঘুনাথপুর টিএমসি-র ফেসবুক পেজ 'রঘুনাথপুরের গর্ব মমতা' 26 জানুয়ারি তারিখেই বিজেপিকে জবাব দিতে অনুষ্ঠানের বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেছে। সেখানে আমরা জাতীয পতাকা উড়ছে দেখতে পাচ্ছি, যেটা ভাইরাল হওযা ভিডিওয় অনুপস্থিতl
একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, "আজ একটা পোস্ট এর সত্যতা কে বিকৃত করে,pic crop করে তুমুল ঝড় তুলেছে কিছু দালাল, তাঁদের বলবো সাহস থাকলে পুরো ভিডিওটা দিন, আমি না হয় আসল চিত্র গুলো দিলাম"l
পূর্ণচন্দ্র বাইরির ফেসবুক পেজেও প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও পোস্ট করা হযেছে, যাতে তাঁকে ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয পতাকা তুলতে দেখা যাচ্ছে। সেখানে তিনি ভিডিওর ক্যাপশন দিয়েছেন, "গতকাল বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী যে ভাবে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন তৃণমূল কংগ্রেসকে অবমাননা করার চেষ্টা করেছিল একটি ভিডিওর মাধ্যমে, সেই মুহূর্তের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ভিডিওটি সকলকে দেখার অনুরোধ রইলো"I
অনুষ্ঠানটির বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তুলনা করলে এটা স্পষ্ট হযে যায় যে, প্রজাতন্ত্র দিবসের ওই অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা তোলা হয়েছিল। যে ভিডিওটি ভাইরাল করে টুইট করা হয, তাতেও একটি শাদা রঙের বৃত্ত দেখতে পাওযা যাচ্ছে, যেখানে জাতীয় পতাকাটি লাগানো ছিল, কিন্তু যেটি ভিডিওতে দেখানো হয়নি।
নীচের ছবিগুলো থেকেই আমরা দেখতে পাই যে অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা ও তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় পতাকা দুই-ই ছিল এবং জাতীয় পতাকা না তুলে তৃণমূলের পতাকা তোলার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি।