নেপালের একটি নাইট-ক্লাবে তোলা কংগ্রেস (Congress) নেতা রাহুল গাঁধীর (Rahul Gandhi) একটি ভিডিও ছড়িয়ে প্রচার করা হচ্ছে যে, তিনি নেপালে (Nepal) গিয়ে চিনের (China) রাষ্ট্রদূত (Ambassador) হাউ ইয়ানকি-র (Hou Yanqi) সঙ্গে পার্টি করছেন।
ভিডিওটি ভাইরাল করা হয় তখন, যখন রাহুল সিএনএন-এর আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা সুমনিমা উদাস-এর (যিনি আবার মায়ানমারে নেপালের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ভীম উদাসের কন্যাও) বিয়ের অনুষ্ঠানে কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলেন।
বুম দেখলো যে, ভিডিওতে যে-মহিলাকে রাহুলের সঙ্গে দেখা গেছে, তিনি আদৌ চিনা কূটনীতিক হাউ ইয়ানকি নন, বরং সুমনিমারই এক বান্ধবী। সুমনিমা নিজেও বুম-কে জানিয়েছেন যে, এই মহিলা তাঁর বন্ধু এবং হংকং-এর বাসিন্দা এবং সেখানে সিএনএন-এর ব্যুরোয় কাজ করতেন।
এ ছাড়াও আমরা নববধূ সুমনিমা-র ভাই সম্যক উদাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করি, যিনি আমাদের জানান যে, ওই মহিলা কোনও চিনা কূটনীতিক নন। যে নাইট-ক্লাবে অনুষ্ঠানটি হয়েছিল, তার মালিকও আমাদের জানিয়েছেন যে, অনুষ্ঠানের জন্য আগে থেকেই ক্লাবটি সংরক্ষণ করা ছিল, যাতে নববধূর পরিচিত জনেরাই উপস্থিত থাকতে পারেন।
৩ মে তারিখেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী এক নাইট-ক্লাবে এক মহিলার সঙ্গে কথা বলছেন, এমন একটি ভিডিও ভাইরাল করা হয়। অচিরেই দ্বিতীয় একটি ভিডিও-ও ভাইরাল করা হয়, যাতে রাহুলকে তাঁর মোবাইল ফোন পরীক্ষা করতে দেখা যায় এবং তাতেও ওই মহিলাকে পটভূমিতে দেখানো হয়।
জনৈক শেফালি বৈদ্য ওই ভিডিও থেকে একটি স্ক্রিনশট এবং অন্য একটি ভিডিও থেকে চিনা রাষ্ট্রদূত হাউ ইয়ানকি-র একটি স্ক্রিনশট তুলে একসঙ্গে টুইট করে লেখেন, "এই মহিলার সঙ্গেই কি রাহুল গাঁধী নেপালে পার্টি করছিলেন? এমনি-ই জিগ্যেস করছি!"
এর আগেও বুম শেফালি বৈদ্যর ছড়ানো ভুয়ো তথ্যের পর্দাফাঁস করেছে।
শেফালি বৈদ্যর টুইটটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
ভারতীয় জনতা পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা এবং বেশ কিছু দক্ষিণপন্থী টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও রাহুল গাঁধীর সঙ্গে চিনা রাষ্ট্রদূতকে একসঙ্গে দেখিয়ে ভুয়ো প্রচার চালানো হয়েছে। সেই সব টুইটে মনগড়া অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, রাহুল গাঁধী একজন চিনার সঙ্গে দহরম-মহরম করছেন, যা নাকি ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক।
টুইটটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
বিজেপির দিল্লির নেতা কপিল মিশ্র এবং আম আদমি পার্টির বিধায়ক নরেশ বালিয়াও একই ভুয়ো দাবি টুইট করেছেন, যদিও নরেশ পরে তাঁর টুইটটি মুছে দেন।
দক্ষিণপন্থী সংবাদমাধ্যম 'অপ-ইন্ডিয়া' তেলেঙ্গানার এক কংগ্রেস নেতাকে উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে, যাতে রাহুলের সঙ্গের মহিলাকে চিনা রাষ্ট্রদূত বলে ভুয়ো গুজব ছড়ানো হয়েছে।
টুইটটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন এখানে।
বিজেপির সোশাল মিডিয়ার ভারপ্রাপ্ত অমিত মালব্যও একই ভুয়ো পোস্ট ছড়িয়েছেন।
মালব্যর টুইটটি দেখুন এখানে।
আরও পড়ুন: কর্নাটকের মুসকান খান নিহত ভুয়ো দাবিতে ছড়াল কাশ্মীরের ২০১৭ সালের ছবি
তথ্য যাচাই
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়া শুরু হতেই কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা জানিয়ে দেন, নেপালে এক সাংবাদিক বন্ধুর বিয়ের নিমন্ত্রণ রাখতেই রাহুল কাঠমান্ডু গিয়েছিলেন।
এর পরই আমরা ফেসবুকে খোঁজ লাগিয়ে ভুপেন কানওয়ারের পোস্ট করা দুটি ভিডিও পাই, যেগুলি ২ মে পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিও দুটি ভুপেনের নিজের তোলা কিনা, সেটা স্পষ্ট নয়, তবে স্থান হিসাবে কাঠমান্ডুর 'লর্ড অফ ড্রিংকস' নাইট-ক্লাবের উল্লেখ করা হয়েছে।
আমরা ওই নাইট-ক্লাবের সিইও রবিন শ্রেষ্ঠ-র সঙ্গে যোগাযোগ করি, যিনি বলেন, তাঁর যতদূর জানা আছে, তাতে রাহুল গাঁধী এবং আরও কয়েকজন অতিথি সুমনিমা উদাসের বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে ওই ক্লাবে উপস্থিত হয়েছিলেন। "ভিডিওটি ওই নাইট-ক্লাবেই তোলা এবং সেখানে রাহুলের সঙ্গে সুমনিমার বন্ধুরাও হাজির ছিলেন। সব মিলিয়ে ১৮ জনের মতো অতিথির জন্য ক্লাবটি সংরক্ষণ করা হয়। আমি যত দূর জানি, ওখানে কোনও চিনা কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন না।"
ও কোনও চিনা কূটনীতিক নয়। আমরা যখন হংকংয়ে সিএনএনে একসঙ্গে কাজ করতাম তখন থেকে আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু: সুমনিমা বলেন বুমকে
আমরা বিয়ের কনে সুমনিমা উদাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম, যিনি সাফ-সাফ বলে দিলেন—"ভাইরাল ভিডিওতে যে মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে, সে কোনও চিনা কূটনীতিক নয়। সে আমার ঘনিষ্ঠতম বন্ধুদের একজন। আমরা একসাথে হংকংয়ে কাজ করতাম। তবে ও চায় না যে ওর নাম এখানে প্রকাশ হোক।
উপরন্তু আমরা কনে সুমনিমার ভাই সম্যক উদাসের সঙ্গেও কথা বলি। তিনিও জানান, মেয়েটি কন্যাপক্ষের তরফে অনুষ্ঠানে হাজির ছিল, কারণ সে তাঁর বোন সুমনিমার বন্ধু। "ও আদৌ কোনও চিনা কূটনীতিক নয়, বরং আমার বোন সুমনিমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, হংকংয়ে সিএনএন-এর হয়ে কাজ করার সময় থেকে। পেশাগতভাবে ও একজন চিত্রনাট্যকার, তবে নিজের নাম প্রকাশে ও ইচ্ছুক নয়।"
আরও পড়ুন: নরেন্দ্র মোদী ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের বৈঠকে নেহরুর ছবি ভুয়ো