সাম্প্রদায়িক রঙ চড়িয়ে হোয়াটসঅ্যাপ ও সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে একটি ভিডিও। তাতে ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ প্রজাতন্ত্র দিবসে (Republic Day) এক মহিলাকে 'ভারত মাতার' ছবির ফ্রেম ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে মহারাষ্ট্রের থানেতে। ওই বার্তাগুলিতে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, ওই মহিলা হলেন একজন মুসলমান (Muslim) যিনি ওই দিন ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলনে বাধা দেন।.
বুম থানে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে যে, ভাইরাল ভিডিওর ওই মহিলা মুসলমান নন। তাছাড়া, উনি মানসিক রোগে ভুগছেন এবং মাঝেমধ্যেই ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়ে পড়েন।
ভিডিওটিতে, ভারত মাতার ছবির ফ্রেম সিকিউরিটি গার্ডদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে এক মহিলাকে। তার ফলে, ওই সিকিউরিটি গার্ড ও পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি বাগবিতণ্ডায়ও জড়িয়ে পড়েন।
শেয়ার করা ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "এটা ২৬ জানুয়ারির অনুষ্ঠান। ভারত মাতার ছবিতে মালা দেওয়ার কাজে বাধা দিচ্ছেন এক মুসলমান মহিলা। অতি বেশি স্বাধীনতা এই স্বেচ্ছাচারিতার জন্ম দিয়েছে। তাঁদের মতবাদকে পরাস্ত করার জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করতে সরকারকে বাধ্য করবে এই নির্বোধরা।"
দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
ওই বিভ্রান্তিকর ক্যাপশন সমেত ভিডিওটি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে।
ভিডিওটি বুমের হেল্পলাইন নম্বরেও আসে।
আরও পড়ুন: কর্নাটক হিজাব বিতর্ক: সাংবাদিক রানা আয়ুব ও রাজনীতিক নাজমা নাজিরের ছবি ছড়াল মুসকান বলে
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির প্রধান ফ্রেমগুলি আলাদা করে নিয়ে আমরা 'ইনভিড উই ভেরিফাই গুগুল এক্সটেনশন'-এর সাহায্যে গুগুলে সার্চ করি। তার ফলে, ওই ভিডিওটির 'রিপ্লাই' বা মতামত বিভাগে থানে পুলিশের একটি মন্তব্য আমাদের নজরে আসে।
২৭ জানুয়ারি, ২০২২ করা ওই মন্তব্যে থানে পুলিশ জানায় যে, কাপুরবওডি থানায় ওই মহিলার বিরুদ্ধে 'নন কগনিজিবল অপরাধ'-এর বা এনসি'র (গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার করা যায় না এমন অপরাধ) অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে।
NC has been registered against this women in Kapurbawdi police station.
— Thane City Police (@ThaneCityPolice) January 27, 2022
এরপর প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করার ফলে ওই ঘটনার ওপর কিছু মারাঠি সংবাদ প্রতিবেদন সামনে আসে। তাতে বলা হয়, মহারাষ্ট্রের থানের লোধা অমারাতে তোলা হয় ভিডিওটি। সেখানে একটি বাড়িতে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের সময়, সিকিউরিটি গার্ডদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন এক মহিলা।
২৮ জানুয়ারি, ২০২২ প্রকাশিত মহারাষ্ট্র টাইমস-এর রিপোর্টে বলা হয় যে, সিকিউরিটি গার্ডদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার পর ওই মহিলা তাঁদের হাত থেকে ভারত মাতার ছবি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এবং তাঁদের সঙ্গে মারামারিও করেন। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, উনি মানসিক রোগে ভুগছেন এবং থানের পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে 'নন কগনিজিবল' অপরাধের মামলা শুরু করেছে।
যেখানে ওই মহিলার বিরুদ্ধে 'নন কগনিজিবল' অপরাধের মামলা নথিভুক্ত করা হয়, থানের সেই কাপুরবওডি থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে বুম। ওই থানার একজন পুলিশ আধিকারিক বুমকে নিশ্চিত করে জানান যে, ওই মহিলা মুসলমান নন। এবং উনি মানসিক রোগে ভুগছেন ও মাঝে মাঝেই বাগবিণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
তাঁর মানসিক অসুখের কথা বিবেচনা করে বুম ওই মহিলার নাম প্রকাশ করছে না।
"ভাইরাল ভিডিওর ওই মহিলা মানসিক অসুখে ভুগছেন। এবং লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া করার জন্য আগেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। উনি মুসলমান নন। উনি একজন পাঞ্জাবি হিন্দু। ওই দিন আমরা তাঁর বিরুদ্ধে এনসি দায়ের করি। উনি এখন বাড়িতে আছেন। এবং আমাদের লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, উনি আর এমন কাজ করবেন না," বুমকে বলেন ওই পুলিশ আধিকারিক।
আরও পড়ুন: হিজাব বিতর্ক: মিথ্যে দাবিতে ছড়াল ছেলেদের গেরুয়া পাগড়ি ফেরানোর ভিডিও