বিহারের (Bihar) পূর্ণিয়া (Purnea) জেলায় তিন সন্তানসহ আত্মঘাতী এক মহিলার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবি (communal claim) করা হয়েছে ভাইরাল ক্লিপটি বাংলাদেশে (Bangladesh) হিন্দু (Hindu) সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের দৃশ্যের।
তিন শিশু ও এক মহিলার মৃতদেহসহ ২৭ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে ঘটনাটি বাংলাদেশের ময়মনসিংহের গীরিপুরের।
বাংলাদেশে ২৫ নভেম্বর হিন্দু সাধু চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির পর সাম্প্রদায়িক হিংসার পারদ সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা ঢাকা ছাড়ার পর থেকে, সংখ্যালঘু, বিশেষতঃ হিন্দুদের লক্ষ্য করে সেদেশে হওয়া ৮৮টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার কথা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। ইতিমধ্যে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলমও জানিয়েছেন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভিডিওটির স্পর্শকাতর বিষয়বস্তুর জন্য বুম তথ্য যাচাইয়ে সেটি অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে এক ব্যবহারকারী ফেসবুকে ক্যাপশনে দাবি করেছেন, "এটা আজকের ময়মনসিংহের- গীরিপুরের ঘটনা এলাকার স্থানীয় কিছু লোক হিন্দুদের বাড়িতে গিয়ে হামলা, ধর্ষণ, ভাংচুর করে।"
আর্কাইভ দেখুন এখানে।
ভিডিওটি এক্সেও অনুরূপ দাবিসহ একাধিক বার শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই: ভাইরাল ভিডিও বিহারের, বাংলাদেশের নয়
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে কিওয়ার্ড সার্চ করে এক ব্যবহারকারীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ৮ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে ভাইরাল ভিডিওটি আপলোড করা দেখতে পায়। ওই পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, "কিলপাড়া গ্রাম, পিয়াজি পঞ্চায়েত পূর্ণিয়া জেলার দুর্ঘটনা।" পোস্টটি দেখুন এখানে।
এরপর, আমরা ইউটিউবে বিহারের এক স্থানীয় সাংবাদিকের চ্যানেল বিসি২৪ নিউজে ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্যসহ ৭ নভেম্বরের একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই।
প্রতিবেদন অনুসারে ঘটনাটি বিহারের রোটা পুলিশের অধীনে কিলপাড়া গ্রামের। ভিডিও থেকে জানা যায় মৃত তিন শিশু আত্মঘাতী ববিতা দেবীর সন্তান।
ইউটিউব প্রতিবেদনটি আরও জানায়, একই পরিবারের চারজনের খুন-আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বাচ্চাদের বাবা, রবি শর্মার অনুপস্থিতিতে। শর্মা বলেন, "আমি একটি মন্দিরের মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। রাত দশটার কাছাকাছি আমি বাড়ি ফিরে দরজা খুলে চারজনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই।"
বুম বিসি২৪ নিউজের সাংবাদিক বাল কিশোরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনাটি নিশ্চিত করেন। কিশোর বুমকে বলেন, "মৃতদেহগুলির ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আমরা গ্রামটিতে যাই। আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি ঘটনাটি পূর্ণিয়ার কিলপাড়া এলাকায় ঘটেছে।" প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
এছাড়াও, আমরা গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক ভাস্কর, জাগরণ, নবভারত টাইমস বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মতো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনাটি সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন পাই। নবভারত টাইমসের রিপোর্ট অনুসারে, মহিলাটি প্রথমে তার তিন সন্তানের গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করে। পরে, একই ভাবে নিজেও আত্মহত্যা করে। চারটি দেহ বাড়ির একটি ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।"
নবভারত টাইমস রোটা পুলিশ স্টেশনের হাউস অফিসার জ্ঞান রঞ্জনকে উদ্ধৃত করে রিপোর্ট করেছে মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার কারণে মহিলার চিকিৎসা চলছিল। বুম রঞ্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানান এটি রোটা এলাকার কিলপাড়া গ্রামে ঘটেছে।
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং: জাগৃতি তৃষা)