রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে পশ্চিমবঙ্গে ১৬ মে থেকে বহাল হওয়া লকডাউন বিধি নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য শেয়ার করা হল সোশাল মিডিয়ায়।
বুম দেখে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই বার্তাটি বিভ্রান্তিকর আর তার সঙ্গে রাজ্য সরকারের লাগু করা প্রকৃত লকডাউন বিধির সঙ্গে তথ্যের অসঙ্গতি রয়েছে।
১৫ মে শনিবার রাজ্যের মুখ্য সচিব আলাপন বন্দোপাধ্যায় নবান্নে দুপুরে প্রেস কনফারেন্স ডেকে জানান রাজ্য সরকার কার্যত সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করছে রবিবার থেকে। ৮ দফা ভোটের শেষ দুই পর্ব মিটতে না মিটতেই আঞ্চলিক ভাবে বিভিন্ন এলাকায় বাজারের সময় নিয়ন্ত্রণের পথে হেঁটেছিল রাজ্য প্রশাসন। ৫ মে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই একগুচ্ছ আংশিক লকডাউন বিধি বলবৎ করার কথা জানান তিনি। করেনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস না পাওয়ায় কার্যত সম্পূর্ণ লকডাউনের পথে হাঁটল রাজ্য সরকার। শনিবার বিস্তারিত বিধি নিষেধ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করার কথা জানান মুখ্য সচিব।
"রাজ্য সরকারের নতুন নির্দেশনা" শিরোনামে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বিভ্রান্তিকর গ্রাফিক পোস্টটিতে লেখা হয়েছে—
- "দুপুর ১ টা পর থেকে দোকান বন্ধ।
- সাপ্তাহিক হাট বাজার ১৫ দিনের জন্য বন্ধ।
- ১৫ দিনের জন্য সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় বন্ধ।
- সকল শিক্ষানুষ্ঠান ১৫ দিনের জন্য বন্ধের ঘোষণা।
- বিবাহ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান মাত্র ১০ জন লোকের অনুমতি।
- কোন ধরনের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান করতে পারবেন না।
- শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে ১০ জনের অনুমতি।
- সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান ১৫ দিনের বন্ধ।
- অটোরিক্সা, ট্যাক্সিতে চালীসহ দুজন যাত্রী অনুমতি।
- মহিলা এবং শিশুর জন্য দুচাকা বাহনে দুজন ওঠা নিষেধ।
- আগামীকাল সকাল ৫টা থেকে শুরু হবে নতুন নিয়ম।"
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ভাইরাল ভুয়ো পোস্ট
বুম দেখে ওই একই দাবি সহ গ্রাফিক পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনাকালে নয়, গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসার এই ছবিটি ২০১৫ সালের
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ১৫ মে জারি করা লকডাউন বিধিগুলি ভিন্ন। বুম মুখ্য সচিব আলাপন বন্দোপাধ্যায় ওই দিনের প্রেস কনফারেন্স সংক্রান্ত প্রতিবেদন যাচাই করে দেখে ভাইরাল পোস্টতে উল্লেখ করা বিধিগুলির অধিকাংশ বিভ্রান্তিকর।
কলকাতা পুলিশের তরফে সম্পূর্ণ লকডাউন বিধির ৩ পাতার নির্দেশ টুইট করা হয়। ১৫ মে সরকারের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ১৬ মে সকাল ৬ টা থেকে ৩০ মে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত লকডাউনের বিধিগুলি কার্যকর থাকবে।
নিচে লকডাউন বিধির মূল অংশ দেওয়া তুলে দেওয়া হল।
বন্ধ থাকবে
- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক কলেজ, আইটিআই, আঙ্গনওয়াড়ি সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
- সরকারি-বেসরকারি অফিস।
- শপিং মল, বার,রেস্তোরাঁ,স্পা, বিউটি পার্লার, সিনেমা হল, জিম, সুইমিং পুল, স্পোর্টস কমপ্লেক্স।
- পার্ক, চিড়িয়াখানা, সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
- লোকাল ট্রেন, মেট্রো, বাস, ফেরি চলাচল। শুধুমাত্র জরুরী পরিষেবা সংক্রান্ত যাতায়াত বাদ দিয়ে।
- ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্যাক্সি, অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকবে শুধুমাত্র জরুরী পরিষেবা যাতায়াত ছাড়া।
- স্বাস্থ্য চিকিৎসা সংক্রান্ত পণ্য, করোনায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম, অক্সিজেন এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার, মাছ-মাংস, দুধ, ডিম প্রস্তুতকারী ও প্যাকেজিং কারখানাগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য শিল্প কারখানা বন্ধ থাকবে।
- সমস্ত প্রশাসনিক, শিক্ষাভিত্তিক, বিনোদন, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ।
চালু থাকবে
- জরুরী পরিষেবা সংক্রান্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস যেমন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, পশু চিকিৎসা, আদালত বিদ্যুৎ পরিষেবা, পানীয় জলের পরিষেবা, টেলিকম, ইন্টারনেট, সংবাদমাধ্যম, দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা ও অসামরিক প্রতিরক্ষা, স্বচ্ছতার পরিষেবা এবং সৎকারের ব্যবস্থা।
- মুদির দোকান, বাজার হাট, ফল, সবজি, দুধ, মাছ মাংস,ডিমের দোকান খোলা থাকবে সকাল ৭ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত।
- মিষ্টির দোকান খোলা থাকবে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা অবধি।
- গয়না ও শাড়ীর দোকান খোলা থাকবে দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত।
- ওষুধ ও চশমার দোকান সম্পূর্ণ খোলা।
- চা বাগানের ৫০% কর্মী এবং জুট মিলে 30% কর্মী নিয়ে শিফটে কাজ হবে।
- সমস্ত অনলাইন ডেলিভারি পরিষেবা।
- ব্যাংক খোলা থাকবে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত। চালু থাকবে এটিএম পরিষেবা।
- পেট্রোল পাম্প, গাড়ি সারাইয়ের দোকান ও এলপিজি পরিষেবা।
- সেবি নথিভুক্ত শেয়ার বাজার।
- বিয়ের অনুষ্ঠানে সর্বাধিক ৫০ জনের অনুমতি।
- সৎকারের কাজে সর্বাধিক ২০ জনের অনুমতি।
- অত্যাবশ্যকীয় না হলে রাত ৯ টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত বাইরে বেরনো নিষেধ।
অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা, পণ্য পরিবহন ও জরুরি প্রয়োজনের জন্য় ই-পাস সংগ্রহ করা যাবে সংশ্লিষ্ট ওয়েবাসাইটে (https://coronapass.kolkatapolice.org/)। রাস্তার গতিবিধির তথ্য জানালে ইমেল অথবা এসএমএস মারফত পাওয়া যাবে এই ই-পাস। গাড়িতে সেঁটে নিতে হবে এই ই-পাসের প্রিন্ট আইট।
আরও পড়ুন: মেকি শবযাত্রার দৃশ্য মিথ্যে দাবিতে জুড়ল প্যালেস্তাইনের সংঘর্ষের সঙ্গে