ব্যাঙ্গালোরের সংস্থা আই-ডি ফ্রেশ ফুড তাদের ধোসা-ইডলি বানানোর বিক্রি করা মিশ্রণে গরুর হাড় আর বাছুরের পাকস্থলী মেশায় বলে একটি বার্তা বিভিন্ন হোয়াটস্যাপ গ্রূপ ও অন্যান্য সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
সংস্থাটির ফেসবুক পেজ-এ এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, "আমাদের কিছু উপভোক্তা একটি বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন হোয়াটস্যাপ বার্তা পেয়েছে, যাতে বলা হয়েছে—আমাদের বিক্রি করা খাবারে প্রাণিদেহের বিভিন্ন অংশ মেশানো হয়।"
"কিন্তু এই সংস্থা কেবলমাত্র নিরামিষ সামগ্রী দিয়েই তার খাবারের উপাদান প্রস্তুত করে থাকে। আই-ডি-র ইডলি-ধোসার মিশ্রণ কেবল চাল, অড়হর ডাল, মেথি এবং জল দিয়েই বানানো হয়, যার সবটাই ১০০ শতাংশ প্রাকৃতিক এবং নিরামিষ কৃষিজ উৎপাদন। আমাদের কোনও পণ্যেই কোনও পশুর দেহাংশ মেশানো হয় না।"
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার নির্মাতা পি সি মুস্তাফা ও তাঁর চারজন তুতো ভাই। সংস্থাটি ইডলি-ধোসার মিশ্রণ সহ চটজলদি বানিয়ে ফেলার মতো ভারতীয় খাবার সরবরাহ করে থাকে।
ভাইরাল বার্তাটিতে অভিযোগ করা হয়েছে, যেহেতু সংস্থাটি মুসলিমদের তৈরি, তাই তারা কেবল মুসলিম কর্মীই নিয়োগ করে এবং 'হালাল শংসাপত্র' পাওয়া জিনিসই বিক্রি করে।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন। একই বার্তা বুম-এর হেল্পলাইন নম্বরেও সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। বার্তাটিতে ২০১৬ সালে হিন্দু বিজনেস লাইন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে সে সময় হেলিয়ন ভেঞ্চার পার্টনার্স থেকে আই-ডি ফুড ৩৫ কোটি টাকা তুলেছিল বলে খবর দেওয়া হয়। প্রতিবেদনটিতে আই-ডি ফ্রেশ-এর প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা স্পার্ক ক্যাপিটালকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, গোটা চুক্তিটা আগাগোড়া শরিয়ত মেনে সম্পাদিত হয়, যা এই সব ক্ষেত্রে বিরল।
বুম শরিয়ত মেনে সংস্থাটির লেনদেনের বিষয়ে জানতে আইডি ফ্রেশ ফুডের সাথে যোগযোগ করে। দীপিকা দাশ, আইডি ফ্রেশ ফুডের একজন প্রতিনিধি বুমকে ইমেলে জানান, "এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক যখন মানুষ ধর্মকে সমাজে অবিশ্বাস ও বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। আমাদের সমস্ত লেনদেন বোর্ডকে জানিয়ে দেশের আইন মেনেই হয়। ধর্ম কখনই আমাদের ব্যবসার পথে বা গ্রাহকদের সাথে আমাদের সম্পর্কের পথে আসেনি।"
আরও পড়ুন: পঞ্জশিরে পাক-হানা বলে টিভি৯ ভারতবর্ষ ফের দেখাল আগের আর্মা-৩ ভিডিও গেম
হিন্দু বিজনেস লাইন-এর প্রতিবেদনটিতে কিন্তু কোথাও আই-ডি উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রীতে গরুর হাড় কিংবা বাছুরের পাকস্থলীর অংশ মেশানো হয়, এই কথা বলা হয়নি।
বার্তায় থাকা 'হালাল সংশাপত্র' বিষয়টি নিয়ে দাশ বুমকে জানায়, "আমিষ খাবারের জন্য হালাল সংশাপত্র লাগে। আমাদের জিনিস ১০০% নিরামিষ তাই হালাল সংশাপত্র থাকার প্রশ্নই ওঠে না"।
আই-ডি ফ্রেশ ফুড তার সরকারি ফেসবুক পেজ-এ একটি ব্যাখ্যা প্রকাশ করে লিখেছে, তাদের উৎপাদিত বা বিক্রীত কোনও খাদ্যসামগ্রীতে কোনও প্রাণির দেহের অংশ মেশানো হয় না এবং এ সংক্রান্ত অভিযোগ ভুয়ো ও ভিত্তিহীন।
আই-ডি ফ্রেশ ফুড সংস্থা গত ৩০ মার্চ ব্যাঙ্গালোর শহরের উপকণ্ঠে আনেকাল এলাকায় ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বিশ্বের বৃহত্তম মিশ্রণ কারখানা তৈরি করেছে। হিন্দু বিজনেস লাইনের খবর অনুযায়ী সেখানে দৈনিক ৩ লক্ষ পরোটা এবং ২৪ লক্ষ ইডলি তৈরির মিশ্রণ উৎপাদিত হতে পারে। ২০২১ আর্থিক বছরে সংস্থাটি ২৯৪ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জন করেছে, যা তার আগের বছরের ২৩৮ কোটি টাকার থেকে ২৩.৫ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন: টাইমস নাউ ওয়েলসের ভিডিও দেখিয়ে দাবি করল পঞ্জশিরে পাকিস্তানি বিমান হানা