২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের সময় সুরক্ষায় নিয়োজিত দিল্লি পুলিশের এক কনস্টেবলের ছবিকে মিথ্যে দাবি সহ ত্রিপুরার আগরতলায় আন্দোলনকারী শিক্ষকদের উপর হওয়া পুলিশের নিগ্রহের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের উপর হামলা করা উর্দি না পরা ওই ব্যক্তি আসলে বিজেপি কর্মী।
বুম দেখে ভাইরাল হওয়া ছবির ব্যক্তি হলেন দিল্লি পুলিশের গাড়ি চুরি দমন শাখার কনস্টেবল অরবিন্দ কুমার। ২০১৯ সালে সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলন চলার সময় জামিয়া নগরে সুরক্ষার জন্য বহাল ছিলেন তিনি।
চাকরিতে পুর্নবহালের দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষকদের একাংশ বুধবার ২৭ জানুয়ারি ২০২১ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের বাসভবন শ্যামাপ্রসাদ লেনের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশের সঙ্গে বচসা বাঁধে আন্দোলনকারীদের।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিতে লাঠি হাতে জিন্স প্যান্ট পরা মাথায় হেলমেট ও বক্ষবর্ম সহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে এই ক্যাপশন দিয়ে, "ঐদিন 10323 এর উপর লাঠিচার্জ করেছিল তারা দেখুন সমস্ত ত্রিপুরাবাসী তারা কি ধরনের পুলিশ জিন্স প্যান্ট পড়ে লাঠি নিয়ে লাঠিচার্জ করেছিল সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে 10323 সবাই ওপর লাঠিচার্জ করেছিল আগরতলা শহরে তারা জিন্স প্যান্ট পরে কোন ধরনের পুলিশ ত্রিপুরা মানুষের জনমনে প্রশ্ন ??? তারা সব বিজেপির গুন্ডার সন্ত্রাস করার জন্য বিজেপির চক্রান্ত করেছে তারই ডিল মেরেছে 10323 উপর পুলিশের উপর ত্রিপুরার পরিস্থিতি দিন দিন ভয়ানক হচ্ছে ?"
তথ্য যাচাই
বুমের সঙ্গে কথা বলার সময় দিল্লির ডিসিপি (কেন্দ্রীয়) এম এস রণধাওয়া বলেন, "এটা দিল্লি পুলিশের 'গাড়ি চুরি দমন শাখা'র একজন কনস্টেবলের ছবি। বিক্ষোভের সময় সুরক্ষার কাজে তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল।"
ওই ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে দ্য কুইন্ট ও ইন্ডিয়া টুডের তথ্য-যাচাই পড়া যাবে এখানে ও এখানে।
ত্রিপুরায় চাকরি হারানো এই শিক্ষকদের জট বহুদিনের। নিয়োগ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ত্রিপুরা হাইকোর্ট এক রায়ে ২০১৪ সালে ১০,৩২৩ জনের নিয়োগ বাতিল করে। রাজ্যের বাম জামানায় ২০১০ সালে ১১০০ জন স্নাতকোত্তর, ৪৬১৭ জন স্নাতক ও ৪৬০৬ জন স্নাতক ডিগ্রি ছাড়া শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করে ১৫২ জন ব্যক্তি। হাইকোর্টের রায় পুর্নবিবেচনার আবেদন করে চাকরিচ্যুত শিক্ষক ও ত্রিপুরার তৎকালীন সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। ২০১৭ সালে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট ত্রিপুরা হাইকোর্টের ওই রায়কে স্থগিত করে। পরে সরকার ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চুক্তির ভিত্তিতে পুনর্বহাল করে ওই শিক্ষকদের। ওই সময়ের মধ্যেই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিকল্প চাকরি দেওয়া হয় অনেককে। ৮০০০ জন শিক্ষক গত বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চুক্তির ভিত্তিতে শিক্ষকতা করেন। তারপর থেকে কর্মহীন তাঁরা। সেপ্টেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষকদের এই বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার জন্য ২ মাস সময় চেয়ে আশ্বাস দেন। এই প্রতিশ্রুতির দু'মাস কেটে যাওয়ার পর "যৌথ সংগ্রাম কমিটি ১০৩২৩" শিক্ষকদের সংগঠন সমবেতভাবে অবিচ্ছিন্ন ধর্না আন্দোলন শুরু করে।
বুধবার ভোরে পুলিশের তৎপরতায় আন্দোলন মঞ্চ ভেঙ্গে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যৌথ সংগ্রাম কমিটি প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওয়ের ডাক দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়। লাঠিচার্জ করে পুলিশ। দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী আহত হন ৭০ জন আন্দোলনকারী ও ১৭ জন পুলিশকর্মী। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে।