সোশাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের (Bangaldesh) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Seikh Hasina) সঙ্গে প্রয়াত আওয়ামী লীগ (Awami League) নেত্রী আইভী (Ivy Rahman) রহমানের ছবি ভুয়ো দাবি সহ বিরোধী দল বাংলাদেশে ন্যাশনালিস্ট পার্টি (BNP)-র দলনেত্রী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া (Begum Khaleda Zia) বলে ছড়ানো হচ্ছে।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ছবিতে বেগম খালেদা জিয়া নন—শেখ হাসিনার সঙ্গে ছবিতে রয়েছেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমান।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে দেখা যায় কান্নায় ভেঙে পড়া হাসিনাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন এক মহিলা। পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আরও ৬ জন ব্যক্তি।
ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, “আজ ১৭ই মে, ১৯৮১ সালের এই দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন এবং বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ইতিহাস সাক্ষী জিয়া পরিবারের কাউকে পুনরায় দেশে আসার জন্য ঘটা করে কোন দিবস পালন করতে হয়না। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এমন এক নেতা ছিলেন যিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন, বিশ্বাস করতে বহুদলীয় সিদ্ধান্ত, সম্মান করতেন বাংলার জনগনের চিন্তা ভাবনা কে। যে নেত্রী আপনাকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলো আজ আপনি তাকেই করেছেন বন্দী? ধিক্কার, প্রতিবাদ, নিন্দা কিছুই জানাবার ভাষা নাই। শুধু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবো তিনি যেন মমতাময়ী মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কে সুস্থ রেখে নেক হায়াত দান করেন। ঘটনার কালক্রমে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে সৃষ্টিকর্তা সেই দিন পর্যন্ত আমাদের বাঁচিয়ে রাখুক।” (ক্যাপশনের বানান পরিমার্জিত)
বুম দেখে একই দাবিতে ছবিটি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। একই দাবির দুটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল ছবিটিকে গুগলে রিভার্স সার্চ করে বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রথম আলোতে ১৩ অগস্ট ২০১৮ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়।
মালেকা বেগমের লেখা স্মৃতিচারণামূলক ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম, “সেই রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কী ঘটেছিল?”
ছবিটিতে শিরোনাম লেখা রয়েছে, “শেখ হাসিনা যখন কান্নায় ভেঙে পড়লেন, ১৫ আগস্ট ১৯৮১। ছবি: সংগৃহীত”
প্রতিবেদনটি পড়লে জানা যায়, সেসময় নারী আন্দোলন কর্মী ও সাংবাদিক ছিলেন মালেকা বেগম। ১৯৮১ সালের ১৫ অগস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনা দেশে ফিরে প্রথম বার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ঠিকানায় তাঁদের পৈতৃক বাসভবনে যান। ওই বছরের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন হাসিনা।
এই বাসভবনেই ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের ঘাতকরা নিহত করেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়, ওই সফরে হাসিনার সঙ্গে ছিলেন, জোহরা তাজউদ্দীন, সাজেদা চৌধুরী ও আইভি রহমান প্রমুখ আওয়ামী লিগের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রতিবেদনে বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতির কথা লেখা হয়নি।
ওই প্রতিবেদনে আরও একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। সেই ছবির ক্যাপশনে লেখা, “পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮১ সালের ১৫ অগস্ট প্রথমবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকে অশ্রুসজল সেদিনের শেখ হাসিনা। তাঁর বাঁ পাশে আইভী রহমান ও ডান পাশে জোহরা তাজউদ্দীন। ছবি: সংগৃহীত”
ভাইরাল হওয়া ছবি ও প্রথম আলো গণমাধ্যমে প্রকাশিত দ্বিতীয় ছবির তুলনা করলে স্পষ্ট বোঝা যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আইভী রহমান।
আইভী রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নারী বিষয়ক শাখার সচিব।
২০০৪ সালের ২১ অগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদর দফতরে মিছিল চলাকালীন গ্রেনেড হামলায় গুরুতর জখম হন আইভী। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়। শল্যচিকিৎসার পরে কম্বাইন্ড মেলিটারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। ২৪ অগস্ট সেখানে মারা যান তিনি।
ভাইরাল ছবিটির একটি রঙিন সংস্করণ দেখা যাবে এখানে।
বুম আইভি রহমানের অন্য ছবির সঙ্গে তুলনা করে দেখে ওই ছবির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাদৃশ্য নেই।
বুম বাংলাদেশ আইভী রহমানের পুত্র সাংসদ নাজমুল হক পাপনের সঙ্গে যোগাযোগ করেলে তিনি আমাদের নিশ্চিত করে জানান এটি তাঁর মায়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার ছবি। পাপন বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-এর সভাপতি।
অতিরিক্ত রিপোর্টিং: উম্মে আম্মারা ইভা, বুম বাংলাদেশে।