পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে (Imran Khan) ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি (OIC) থেকে বহিঃস্কার করা হয়েছে, এই ভাইরাল বার্তাটি ভুয়ো (Fake)। বার্তাটিতে আরও ভুয়ো দাবি করা হয়েছে যে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রতিনিধি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট এবং সৌদি আরবের রাজা নাকি সংগঠনে ভারতের হয়ে বক্তব্য পেশ করেছেন।
বার্তাটিতে আরও দাবি করা হয়েছে যে, ওই ৩ জন নাকি সংগঠনের সভায় হিন্দু ধর্মের সপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বার্তাটিতে অযোধ্যার রামমন্দিরের মতো ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নিয়মিত মন্তব্য করার জন্য পাকিস্তানকে রীতিমত তিরস্কারও করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তান কখনওই সাহায্য করে না, ভারতের ঠিক উল্টো, এবং সৌদির রাজা নিজেই নাকি পাকিস্তানকে ওআইসি থেকে বহিষ্কারের প্রস্তাব বৈঠকে উত্থাপন করেছিলেন।
বার্তাটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ওয়াইওন-এর একটি সংবাদ-প্রতিবেদনের সঙ্গে সেটিকে সংযুক্ত করা হয়েছে। বুম দেখলো, ওই প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল: "কাশ্মীর প্রশ্নে ওআইসি পাকিস্তানের মুখে আবারও ঝামা ঘষে দিয়েছে।" এবং বার্তায় প্রচারিত বিষয়ের সঙ্গে বৈঠকটির কোনও সম্পর্কই নেই।
বার্তাটি নীচে দেখতে পারেন।
সোশাল মিডিয়ায় এই বার্তাটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
১) ওআইসি কী?
রাষ্ট্রপুঞ্জের পরেই ওআইসি হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুদেশীয় সংস্থা, যার সদস্য সংখ্যা ৫৭। এর সদর দফতর সৌদি আরবের জেড্ডায় এবং নিজের সম্পর্কে এই সংস্থা বর্ণনা দেয়, "এই সংগঠনটি ইসলামি বিশ্বের সমবেত কণ্ঠস্বর। এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও সৌহার্দ্যের ভাবনা থেকে বিশ্বের মুসলিমদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার প্রয়াস চালায়।" এই বিষয়ে পড়তে পারেন এখানে।
অথচ বার্তাটিতে মিথ্য়ে করে সংস্থাটিকে 'ইসলামি দেশগুলির সম্মেলন' বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
২) আলোচ্য ওআইসি বৈঠকটি কী নিয়ে ছিল?
বুম ওয়াইওন-এর প্রতিবেদনটি ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখেছে যে, এটি ছিল সংস্থাক সদস্য দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের বাৎসরিক সম্মেলন, যার শীর্ষক ছিল— "শান্তি ও প্রগতির জন্য সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী ঐক্য"। বিদেশমন্ত্রী পরিষদের এটি ছিল ৪৭তম অধিবেশন, যা ২০২০ সালের ২৭-২৮ অক্টোবর নাইজারের নিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে কাশ্মীর প্রসঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল বটে, তবে ওআইসি-র আলোচ্যসূচিতে তার কোনও উল্লেখই ছিল না। এই ব্যাপারটাকেই 'পাকিস্তানের মুখে ঝামা ঘষে দেওয়া' বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৩) কোনও দেশ বা সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান কি এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন?
আগেই বলা হয়েছে, বৈঠকটি ছিল বিদেশমন্ত্রীদের, আর তাই কোনও দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা রাজা এখানে হাজির ছিলেন নাl তবে আয়োজক দেশ বলেই নাইজারের প্রেসিডেন্ট সম্মেলনটির উদ্বোধন যেমন করেন, তেমনই সেখানে বক্তৃতাও দেন।
বুম ওআইসির ওই সম্মেলনের দলিলপত্রও সংগ্রহ করেছে, এবং তাতেও ভাইরাল বার্তায় উল্লেখিত রাষ্ট্রনেতাদের উপস্থিতির কোনও প্রমাণ নেইl সম্মেলনের রিপোর্টেও কোথাও অযোধ্যার রামমন্দির কিংবা হিন্দু ধর্ম অথবা ইমরান খানকে বহিষ্কার করার কোনও বিবরণ নেই।
ক) যুবরাজ ফয়সল বিন ফরাজ বিন আবদুল্লা সৌদি আরবের বিদেশমন্ত্রী হিসাবে বৈঠকে হাজির ছিলেন, দাবি মোতাবেক সৌদি রাজা নন
খ) সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রতিনিধিত্ব করেন রীম আল হাশেমি, যিনি সে দেশের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু তিনিও অযোধ্যা, মন্দির, হিন্দু ধর্ম বা বার্তায় উল্লেখিত বিষয়গুলির অবতারণা করেননি
গ) মালদ্বীপের প্রতিনিধিত্ব করেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী আবদুল্লা শাহিদ, ভাইরাল বার্তার দাবি মতো প্রেসিডেন্ট নন
ঘ) পাকিস্তানেরও প্রতিনিধিত্ব করেন সেখানকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি, ভাইরাল বার্তায় দাবি করা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নন
বৈঠকে ইমরান খানকে সংস্থা থেকে বহিষ্কার করার কোনও প্রসঙ্গই ওঠেনি, কিংবা অযোধ্যা, ভারতীয় মন্দির অথবা অভ্যন্তরীণ ভারতীয় ব্যাপারে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপ করার কোনও প্রশ্ন। উল্টে সংগঠনের ৪৮ তম অধিবেশন পাকিস্তানেই আয়োজন করার পাকিস্তানের প্রস্তাবকে সব সদস্য দেশই স্বাগত জানায়। ইমরান এখনও ওআইসি-র সদস্য, তিনি আদৌ সেখান থেকে বহিষ্কৃত হননি। কেবল সিরিয়া ২০১২ সালে সে দেশের গৃহযুদ্ধের সূচনালগ্নে ওআইসি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল।
ওআইসি-র বৈঠকে ঠিক কী-কী আলোচনা হয়েছিল, তা দেখা যাবে এখানে।
তবে ওআইসি জম্মু-কাশ্মীর বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করেছিল, যা ভারত এই যুক্তিতে কঠোরভাবে সমালোচনা করে যে, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এ নিয়ে আলোচনা অবাঞ্ছিত। এ ব্যাপারে অবশ্য ওআইসি নিয়মিত ভাবে পাকিস্তানের পক্ষ সমর্থন করে এসেছে।
আরও পড়ুন: সম্পর্কহীন ভিডিও জুড়ে ভুয়ো দাবি করা হল রিপাবলিক টিভির বিরুদ্ধে