একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একদল মহিলা একটি লোককে বেধড়ক পেটাচ্ছেন। অসভ্য আচরণ করার জন্য কেরলে (Kerala) মহিলারা ওই মুসলমান (Muslim) লোকটিকে মারছেন - এই মিথ্যে দাবি সমেত ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে।
বুম দেখে, ঘটনাটির কোনও সাম্প্রদায়িক তাৎপর্য নেই। যাঁরা মারছেন এবং যিনি মার খাচ্ছেন, তাঁরা উভয়েই কেরলের থ্রিসুরের একটি চার্চের সদস্য। কয়েক জন পাদ্রির ছবি ডিজিটাল উপায়ে পরিবর্তন করার অভিযোগে লোকটিকে মারা হচ্ছিল।
১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, একদল মহিলা একটি লোককে তাড়া করছেন। এরপর একটি গাড়ির ওপর তাঁদের চড়াও হতে দেখা যায়। পরে তাঁরা লোকটিকে ধরে ফেলেন ও তাঁকে লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করেন।
ভিডিওটি শেয়ার করে লেখা হয়, “ভারত জুড়ে মা দুর্গা হিন্দু মহিলাদের শক্তি জাগিয়ে তুলছেন। কেরলে এক মুসলমান ব্যক্তির কুৎসিত আচরনের জন্য মেয়েরা তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেন। কেরলে একজন মুসলমান ব্যক্তির অশালীন ও লজ্জাজনক দুর্ব্যবহারের জন্য মহিলারা তাঁকে আক্রমণ করেন। কেরলে জাগরণ শুরু হয়েছে।”
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ভিডিওটি আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ টিপলাইন নম্বর ৭৭০০৯০৬৫৮৮-এও আসে।
তথ্য যাচাই
ওই ঘটনা সম্পর্কে আরও জানতে বুম প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে। তার ফলে, ৬ জানুয়ারি, ২০২৩-এ, মাত্রুভূমির ইংরেজি সংস্করণে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট দেখতে পাই আমরা।
দেখা যায়, লেখাটির সঙ্গে ব্যবহৃত ছবি ও ভাইরাল ভিডিওটি থেকে নেওয়া স্ক্রিনগ্র্যাবটি মিলে যায়।
রিপোর্টটিতে বলা হয়, শাজি নামের এক ব্যক্তিকে, এম্পারার ইম্যানুয়েল চার্চের সদস্যারা মারধোর করেন। চার্চটি হল, কেরলের থ্রিসুর জেলার মুরিয়াড-এ অবস্থিত একটি জিয়নিস্ট চার্চ।
ওই চার্চের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন যে, শাজি চার্চের পাদ্রিদের বিক্রিত ছবি শেয়ার করেন। এর পর শাজি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা চার্চে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এমনটাই বলা হয় মাত্রুভূমির প্রতিবেদনে।
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ঘটনাটি সম্পর্কে অভিযোগ দায়ের করা হয় আলুর থানায়। পুলিশ জানায়, পঞ্চাশেরও বেশি মানুষ শাজির গাড়ির পথ আটকান। এবং তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মারধোর করা হয়।
ওই একই ঘটনার ওপর ‘মনোরমা অনলাইন’ ও ‘ইন্ডিয়া টুডে’ও খবর করে।
৭ জানুয়ারি, ২০২৩-এ মনোরমা অনলাইন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শাজিকে আক্রমণ করার অভিযোগে আলুরের পুলিশ ১১ জন মহিলাকে গ্রেফতার করে। এবং তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে খুনের অভিযোগও আনা হয়।
ইন্ডিয়া টুডে-এর প্রতিবেদনেও একই কথা লেখা হয়। সেই সঙ্গে আরও বলা হয় যে, চার্চ কর্তৃপক্ষ আগেই শাজি’র বিরুদ্ধে আলুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে ছিলেন। এবং সেই বিষয়ে তদন্ত চলা কালে ঘটনাটি ঘটে।
এই সূত্র ধরে আমরা আলুর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করি। সেখান থেকে আমাদের স্পষ্ট করে জানানো হয় যে, ওই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও যোগ নেই। আলুর থানার সাবইনস্পেক্টর সুবিন্দ কেএস বলেন, “৫ জানুয়ারি, ২০২৩-এ, মুরিয়াদ অঞ্চলে ঘটনাটি ঘটে। তাতে জিয়নিস্ট চার্চের মহিলা অনুগামীরা এক ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারকে মারধোর করেন। কিছু দিন আগে ওই ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ওই চার্চের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। আক্রমণকারী ও আক্রান্ত উভয়ই একই সম্প্রদায়ভুক্ত।”
এই বছর জানুয়ারিতে, একই ধরনের সাম্প্রদায়িক দাবি সমেত এই একই ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। তখনও সেই দাবি খণ্ডন করেছিল বুম।