রমজানের সময় (Ramzan) নিউজ-১৮, টিভি-৯ ও অপইন্ডিয়া সহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম (media) দাবি করে যে, সৌদি আরব (সৌদি Arabia) লাউডস্পিকারের (Loudspeaker) ব্যবহার নিষিদ্ধ (Ban) করেছে।
বুম যাচাই করে দেখে দাবিটি বিভ্রান্তিকর (misleading)। কারণ, সে দেশের সরকার কেবল আওয়াজের মাত্রা নূন্যতম রাখার জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করেছে।
সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা বলতে শুরু করেছেন যে, সৌদি আরব সরকার যদি লাউডস্পিকারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে পারে, তাহলে ভারত সরকারও তা করতে পারে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, গত বছর রমজানের সময় লাউডস্পিকারের ব্যবহার একটি বিতর্কিত ও বহুল আলোচিত বিষয় ছিল। মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার নেতা রাজ ঠাকরে এই বলে হুশিয়ারি দেন যে, মসজিদে মসজিদে যেন লাউডস্পিকার ব্যবহারনা করা হয়। তা না হলে, মসজিদের বাইরে উচ্চগ্রামে হনুমান চালিসা পাঠ করা হবে। এ ছাড়া, গোয়া, কর্ণাটক ও উত্তরপ্রদেশ সহ আরও কিছু রাজ্যে রমজানের সময় লাউডস্পিকারের ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়।
লাইভ হিন্দুস্থান, নিউজ-১৮, ইন্ডিয়া টিভি, টিভি ৯ ভারতবর্ষ ও জি নিউজ সহ আরও কিছু সংবাদ মাধ্যম রমজানের সময় সৌদি আরব লাউডস্পিকারের ব্যবহার ‘নিষিদ্ধ’ করেছে, এই মর্মে খবর করে।
জি নিউজের ডিএনএ নামক অনুষ্ঠানের সঞ্চালক রোহিত রঞ্জন সৌদি আরবের দৃষ্টান্ত দিয়ে ভারতীয় মুসলমানদের নিশানা করেন এবং বলেন যে, সৌদি আরবের ওই পদক্ষেপ ভারতের কাছে শিক্ষনীয় হওয়া উচিত।
অন্য দিকে, এবিপি নিউজ রমজানের সময় সৌদি আরব লাউডস্পিকার নিষিদ্ধ করেছে বলে খবর করে, আবার অন্য একটি প্রতিবেদনে ওই নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে তথ্য যাচাইও করেছে।
দক্ষিণপন্থী ওয়েবসাইট অপইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদনে বলে যে, ওই নিয়ম অনুসারে, সৌদি আরবে লাউডস্পিকারের ব্যবহার বন্ধ হল।
আরএসএস-এর মুখপাত্র পঞ্চজন্য-ও এই বিষয়ে টুইটারে পোস্ট করে। ক্যাপশনে লেখা হয়, “মসজিদে লাউডস্পিকার নিষিদ্ধ করল সৌদি আরব। এই বিষয়ে আপনার কী মত? নীচে মতামত জানান।”
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: "सऊदी अरब में मस्जिद पर लाउडस्पीकर लगाने पर लगा बैन !! इसपर क्या होगी आपकी टिप्पणी ? कमेंट कर जरूर बताएं।")
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
সৌদি আরব সরকারের যে নির্দেশিকা লাউডস্পিকার নিষিদ্ধ করেছে বলে সংবাদ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বুম সেই নিয়মাবলি খতিয়ে দেখে।
৩ মার্চ, ২০২৩ সৌদি আরবের ইসলাম সংক্রান্ত মন্ত্রকের একটি টুইট আমাদের নজরে আসে। তাতে রমজান সংক্রান্ত নিয়মাবলি দেওয়া ছিল।
কেবল মাত্র রমজানের মাসে তারাউইহ নামাজ, ইফতার, মসজিদের ইমাম, চিত্রগহণ ও সম্প্রচার সংক্রান্ত বিধিনষেধের উল্লেখ ছিল।
রমজানের মাসে, লাউডস্পিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির কোনও উল্লেখ আমরা তাতে পাইনি।
ইসলাম সংক্রান্ত মন্ত্রকের আরবি ভাষায় লেখা নির্দেশাবলি দেখা যাবে এখানে।
সার্চ করার ফলে, আমরা গাল্ফ নিউজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। তাতে বলা হয়, মসজিদে প্রর্থনা করার সময় লাউডস্পিকারের সংখ্যা কমিয়ে ৪ করেছে সৌদি আরব।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলাম সংক্রান্ত মন্ত্রী শেখ ড. আব্দুল লতিফ বিন আব্দুল আজিজ অল শেখ, রমজান শুরুর দু’ মাস আগে, মসজিদ’র সামনে লাউডস্পিকারের সংখ্যা কত হবে - সে সম্পর্কে নির্দেশ জারি করেন। ওই নির্দেশে বলা হয়, মসজিদে প্রার্থনার সময় কেবল ৪ লাউডস্পিকার ব্যবহার করা যাবে।
ওই নির্দেশে সব ইমামদের উদ্দেশে বলা হয়, বাড়তি লাউড স্পিকার তাঁরা যেন খুলে কোনও গুদাম ঘরে রেখে দেন, অথবা যে সব মসজিদে যথেষ্ট লাউডস্পিকার নেই, সেখানে সেগুলি পাঠিয়ে দেন।
গাল্ফ নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রমজানের আগে এই ধরনের নির্দেশিকা প্রথম দেওয়া হয়েছে, এমন নয়।
গত বছরও, রমজানের মাসে লাউডস্পিকারের শব্দের মাত্রা কম রাখার নির্দেশ দেয় মন্ত্রক। পাঁচ বারের প্রার্থনার সময় ছাড়া অতিরিক্ত প্রার্থনা চলা কালে লাউডস্পিকারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। তাছাড়া সংবাদ মাধ্যমগুলিকেও মসজিদ থেকে প্রার্থনা সম্প্রচার করতে নিষেধ করা হয়।
বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে আমরা রমজানের সময় লাউডস্পিকার ব্যবহার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি-করা নির্দেশিকার খোঁজ করি। কিন্তু সেই সংক্রান্ত কোনও রিপোর্ট আমরা দেখতে পাইনি।
আরও বিস্তারিত জানার জন্য বুম সৌদি আরবের ইসলাম সংক্রান্ত মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁদের কাছ থেকে জানার পর, আমরা এই প্রতিবেদন আপডেট করব।