উত্তরপ্রদেশে লখনউ (Lucknow)-এর একটি স্কুল পড়ুয়াদের (School Students) উপস্থাপন করা একটি নাটিকার সম্পাদনা (edited) করা ভিডিও মিথ্যে সাম্প্রদায়িক দাবি করে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, 'ভারত মাতা' (Mother India) সেজেছিল যে ছাত্রী, তার মাথার মুকুট খুলে (Remove Crown) নিয়ে তাকে হিজাব (Hijab) পরিয়ে দেওয়া হয়।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সম্পাদনা করা ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, যে মেয়েটি ভারত মাতা সেজে ছিল, তার মাথার মুকুট খুলে ফেলছে ফেজ টুপি ও বোরখা পরা কিছু ছাত্রছাত্রী। তার মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় অন্য কাপড়। তারপর সে হাঁটু গেড়ে বসে এবং পেছনে আজানের ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়।
বুম যাচাই করে দেখে, লখনউ-এর মালব্য নগর থানার অন্তরগত বাজারখালা এলাকায় অবস্থিত শিশু ভারতীয় স্কুলে ঘটনাটি ঘটে। ১৫ অগস্ট নাটিকাটি মঞ্চস্থ হয়।
ভিডিওটির বড় সংস্করণটিতে দেখা যায় যে, ভারত মাতা সাজা মেয়েটি, অন্য চারটি ধর্মের প্রার্থনাতেও অংশগ্রহণ করে এবং অন্যান্য পড়ুয়ারা যথাক্রমে সেই সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পোশাক পরে নেয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বৈচিত্রই ছিল ওই নাটিকার বিষয়।
সম্পাদিত ভিডিওটি টুইট করে সুদর্শন নিউজ
হিন্দুত্ববাদী টিভি চ্যানেল সুদর্শন নিউজ ২০ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওটি টুইট করে। টুইটটি এখন এই বলে শেয়ার করা হচ্ছে যে, ভারত মাতার মুকুট খুলে নিয়ে তাঁর মাথায় হিজাব জড়িয়ে দেওয়া হয়।
সুদর্শন নিউজ-এর টুইটে হিন্দিতে লেখা হয়, "ভারত মাতার মাথা থেকে মুকুট খুলে নিয়ে তাঁকে হিজাব পরিয়ে দেওয়া হয়।"
(হিন্দিতে লেখা টুইট: भारतमाँ के सिर का मुकुट हटा कर पहना दिया हिजाब।) এই প্রতিবেদন লেখার সময়, টুইটটি ২.৮ লক্ষ বার দেখা হয়।
একই সম্পাদিত ভিডিও সুদর্শন নিজউ-এর ফেসবুক পোস্টটি দেখুন নিচে
তথ্য যাচাই করে বুম একাধিক বার সুদর্শন নিউজ-এর প্রচারিত মিথ্যে খবরের পর্দা ফাঁস করে। (সে সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন এখানে)
ক্রিয়েটলি মিডিয়াও ভিডিওটি শেয়ার করে। বলা হয়, ভারত মাতার মুকুট খুলে দিয়ে তাঁকে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হয়। ক্রিয়েটলি মিডিয়া পরে অবশ্য তাঁদের টুইটটি ডিলিট করে দেন। টুইটটির আর্কাইভ দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
লখনউ পুলিশ ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথকে ট্যাগ করে, বিজেপি নেতা অভিজাত মিশ্র ও সাংবাদিক হেমেন্দ্র ত্রিপাঠি ওই ঘটনার তদন্ত দাবি করেন। পরে মিশ্র ও ত্রিপাঠি দু'জনেই তাঁদের টুইট ডিলিট করে দেন।
সম্পাদিত ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকেও ছড়িয়েছে। "দেখুন, জিহাদিরা কী ধরনের খেলা খেলছে এখন স্কুলে। ভারত মাতার মাথা থেকে মুকুট খুলে নিয়ে তাঁকে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। স্কুলগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়েই এ কাজ করছে তারা। এই স্কুলটির বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই ভিডিওটি ভাইরাল করুন। আজই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে ওরা আরও সাহস পাবে।" এই ক্যাপশন সহ সেটি শেয়ার করা হচ্ছে:
(হিন্দিতে মূল লেখা: ये देखिए इन जिहादियों का खेल अब स्कूलों में भी शुरू हो गया है भारत माता के सिर से मुकुट हटा कर उनसे नमाज पढ़ाई जा रही हैं ये सब इन स्कूल कि मिलीभागत से हो रहा हैं इस स्कूल पर तुरंत कारवाई होनी चाहिए इस वीडियो को वायरल कीजिए आज के आज ही कारवाई होनी चाहिए नही तो इनके हौसले बुलंद होते जायेंगे)
ভিডিওটির পোস্ট দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
আরও পড়ুন: বিভ্রান্তি সহ ছড়াল ২০২১ সালে সিপিআইএম কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা তোলার ছবি
তথ্য যাচাই
বুম লখনউ পুলিশের বাজারখালা থানার এসিপি সুনিল কুমার শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করে। উনি একটি টুইটের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যেটিতে লখনউ-এর পুলিশ কমিশনারেট ওই ভিডিওটির সত্যতা খারিজ করে দেয়।
লখনউ পুলিশ কমিশনারেট একটি বিবৃতিতে বলে, "সোশাল মিডিয়া থেকে একটি ভিডিও এসেছে। তাতে দেখানো হয়েছে, ভারত মাতার বেশে একটি মেয়ের মাথা থেকে মুকুট খুলে দিয়ে তাকে নামাজ পড়ানো হচ্ছে। ওই ভিডিওটি নিয়ে আমরা তদন্ত করি। দেখা যায়, মালব্য নগর থানা এলাকায় শিশু ভারতীয় বিদ্যালয়ে সেটি তোলা হয়। আমরা স্কুলের প্রিন্সিপ্যালের সঙ্গে যোগাযোগ করে সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখি। দেখা যায়, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একটি নাটিকা মঞ্চস্থ করেছিল। নাটিকাটির বাণী ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। ধর্ম নিয়ে ঝগড়া না করে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করা হয়েছে তাতে। টুইটার ব্যবহারকারীরা ভিডিওটিকে সম্পাদনা করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। আমরা তদন্ত শুরু করেছি।"
এছাড়া আমরা টাইমস অফ ইন্ডিয়া'র সাংবাদিক অরবিন্দ চৌহানের টুইটও দেখতে পাই। তাতে ওই স্কুলের একজন শিক্ষকের বক্তব্য ছিল। সেই ভিডিওটিতে প্রগতি নিগম হিসেবে নিজের পরিচয় দেন ওই শিক্ষক। উনি জানান যে, সম্পাদনা করা ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর। "ভাইরাল ভিডিওটি মিথ্যে। সব ধর্মকে এক সঙ্গে আনাই আমার উদ্দেশ্য ছিল। কোনও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। পুরো ভিডিওটা দেখার জন্য আমি সকলকে অনুরোধ করব।"
লখনউ-এর পুলিশ কমিশনারেট-এর হ্যান্ডেল থেকে সম্পূর্ণ ভিডিওটি টুইট করা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, ভারত মাতার সাজে একটি মেয়েকে হিন্দু, ইসলামি, শিখ ও খ্রিস্টান প্রথায় শ্রদ্ধা অর্পণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: শান্তিদেব ঘোষের গাওয়া রবীন্দ্র-সঙ্গীত ভুয়ো দাবিতে ছড়াল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কণ্ঠ বলে