সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল দুটি বাচ্চার কাছে অনেকগুলি ৫০০ টাকার (500 notes) বাতিল নোটের বান্ডিল দেখতে পাওয়া এক ভিডিও শেয়ার করে সম্প্রতি দাবি করা হয়, পাকিস্তানে (Pakistan) পুরনো জিনিসের দামে নোটগুলি বিক্রি হচ্ছে।
বুম দেখে, পাকিস্তান নয় বরং উত্তরপ্রদেশের লখনউতে ব্রিজেশ মিশ্র নামক এক কন্টেন্ট নির্মাতা ভিডিওটি রেকর্ড করেছিলেন।
৩৪ সেকেন্ডের ভাইরাল ওই ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে দুজন শিশুর কাছে থাকা পুরনো ভারতীয় ৫০০ টাকার নোট চাইতে দেখা যায়। ওই ব্যক্তিই ভিডিওটিও রেকর্ড করেন।
প্রসঙ্গতঃ, ভাইরাল ভিডিওতে দৃশ্যমান ৫০০ টাকার নোটগুলি বাতিল করা নোট। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নোট বন্দির কথা ঘোষণা করেন এবং ৮ নভেম্বর মধ্যরাত থেকেই ৫০০ ও ১০০০ টাকার পুরনো নোট বাতিল করা হয়।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করেন, "ভারতে ডিমোনেটাইজেশন কেন জরুরি ছিল? এটি পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ভিডিও, এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে আজ ও পাকিস্তানে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় জাল নোট পুরনো বাতিল জিনিসের দরে বিক্রি হচ্ছে। ভাবুন ডিমোনেটাইজেশন না হলে ভারতের অর্থনীতির উপর কি প্রভাব বিস্তার করতো।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটির কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে টিভি৯ হিন্দির একটি প্রতিবেদন পায় যেখানে থেকে জানা যায় ভিডিওটি akhimishra511 নামক একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা হয়েছে।
এই সূত্রধরে আমরা ওই ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলটি খুঁজে পাই যেখানে ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে ভাইরাল ভিডিওটি পোস্ট করা হয়।
আমরা দেখি এই ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ভাইরাল ভিডিও সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি পোস্ট করা হয়েছে। একটি ভিডিওতে, নির্মাতা সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন ভিডিওটি তার ভাইপোর অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয়েছিল। পুরনো ৫০০ টাকার নোট দেখিয়ে সে বলে, "আমি গিয়ে সেই ছেলেদের (ভিডিওতে দেখতে পাওয়া বাচ্চাগুলি) সঙ্গে দেখা করব।"
এই ভিডিওর কমেন্টে আমরা মূল স্রষ্টা ব্রিজেশ মিশ্রের একটি উত্তর পাই যেখানে তিনি ভিডিওটিকে লখনউয়ের বলে জানিয়েছেন।
অন্য একটি ভিডিওতে ব্রিজেশ মিশ্রকে ভাইরাল ভিডিওর বাচ্চাদের মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেখা গেছে। এই ভিডিওতে তিনি সমস্ত ভুয়ো দাবি নস্যাৎ করে জানান বাচ্চাগুলি উত্তরাখণ্ড বা পাকিস্তানের নয়। তারা অসমের এবং এখন লখনউতে বসবাস করে।
২ জানুয়ারী, ২০২৫ এবং ৩ জানুয়ারী, ২০২৫ তারিখে আপলোড করা ভিডিওতে ব্রিজেশকে ওই ছেলেদুটির সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।
এই সব ভিডিও ব্রিজেশ মিশ্রের ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক এবং ইউটিউব চ্যানেলেও পাওয়া যায়। ব্রিজেশ তার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ভাইরাল ভিডিওটি সহ শিশুদের সঙ্গে একটি স্টোরিও পোস্ট করেছেন।
এছাড়াও, তার ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা একটি ভিডিওতে ব্রিজেশ ঘটনাস্থল পাকিস্তান ও উত্তরাখণ্ডের দাবিটি অস্বীকার করেছেন।
আমরা এবিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ব্রিজেশ মিশ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করি। বুমকে তিনি বলেন, "ভিডিওটি নিয়ে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে। আমি ভিডিওটি ২৬ ডিসেম্বর লখনউয়ের আশিয়ানা চৌরাস্তার কাছে শ্যুট করি। রাস্তায় নোটের বান্ডিল সহ এই ছেলেদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়।"
"ভিডিওর দুই শিশু একই এলাকায় জঞ্জাল পরিষ্কারের কাজ করে। তারা একটি ডাস্টবিনে পুরনো ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিলগুলি খুঁজে পায়। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর আমি তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে কিছু ছেলে তাদের কাছ থেকে ওই নোট ছিনিয়ে নেয়।"
তিনি বুমকে মূল ভিডিও এবং পুরনো ৫০০ টাকার নোটের ছবি পাঠিয়ে বলেন নোটগুলি আসল ছিল। তবে, বুম স্বাধীনভাবে নোটগুলি আসল না নকল তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি।
গুগল ম্যাপে লখনউয়ের আশিয়ানা চৌরাস্তার 'স্ট্রিট ভিউ' দেখা যায় যেখানে ভাইরাল ভিডিওতে প্রেক্ষাপটে দৃশ্যমান 'চাইপট্টি' নামক একটি দোকানের বিলবোর্ড দেখা যায়।
২০১৭ সালে উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশে এই ধরনেরই এক ঘটনা ঘটে যেখানে একজন লোক জঞ্জাল পরিষ্কার করার সময় আবর্জনার মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা মূল্যের ৫০০ টাকার নোট পেয়েছিলেন। তবে, আমরা যাচাই করে দেখি ভাইরাল ভিডিওর সাথে এই ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং: জাগৃতি তৃষা)