এক মহিলাকে মারধোর করার অস্বস্তিকর ভিডিও মিথ্যে সাম্প্রদায়িক দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, অভিযুক্ত একজন মুসলমান ও যিনি আক্রান্ত তিনি হলেন হিন্দু।
বুম দেখে এই সাম্প্রদায়িক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যে।অভিযুক্ত ও আক্রান্ত উভয়ই একই ধর্মের মানুষ।
(ভিডিওটি স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা সেটিকে এই প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করিনি)
ভিডিওটিতে, একটি লোক প্রথমে একজন মহিলার হাত চেপেধরে। তারপর দু'জনের মধ্যে বচসা শুরু হয়। লোকটি রেগে গিয়ে, মহিলাকে চড় মারে ও তাঁকে মাটিতে ফেলে দেয়। এর পর সে তাঁর পায়ে লাথি মারতে শুরু করে। শেষে, লোকটি মহিলার মুখেও লাথি মারতে থাকে। এবং ওই মহিলা অজ্ঞান হয়ে যান।
ভাইরাল ভিডিওটি ফেসবুকে এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, অভিযুক্ত একজন মুসলমান। হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনে বলা হয়, "মা, বাবা, সমাজ হাজার বার বোঝানো সত্ত্বেও যে হিন্দু মেয়ে বলে "আমার আবদুল সে রকম নয়", তাদের ক্ষেত্রেএমনটাই ঘটে। হ্যাঁ, কিছু তারতম্য থাকে ঠিকই, কিন্তু মূলত এমনটাই হয়।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: "मां - बाप , समाज के लाख समझाने के बाद भी 'मेरा अब्दुल वैसा नहीं है' कहने वाली हिन्दू लड़कियों के साथ कुछ ऐसा ही होता है , हां हो सकता है अंदाज़ कुछ अलग हो लेकिन होता ऐसा ही है ?)একই দাবি সমেত আরও কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
ভিডিওটি আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ টিপলাইনেও আসে (৭৭০০৯০৬৫৮৮)।
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির দৃশ্যগুলিকে সূত্র ধরে, আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করি। তার ফলে, দ্য লাল্লানটপ-এ, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। ওই লেখাটির সঙ্গে যে ছবিটি ছিল, সেটি ওই ভাইরাল ভিডিওরই একটি স্ক্রিনগ্র্যাব।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২,মধ্যপ্রদেশের রেওয়া জেলায় ঘটনাটি ঘটে।
ওই লেখায়, অভিযুক্তকে ২৪ বছর বয়সী পঙ্কজত্রিপাঠি বলে শনাক্ত করা হয়। বলা হয়, তার সঙ্গে ওই মহিলার সম্পর্ক ছিল।
ওই রিপোর্টে, সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া রেওয়ার এসডিপিও নবীন তেওয়ারি'র বয়ানও ছিল। তাতে উনি বলেন, ওই মহিলার সঙ্গে অভিযুক্ততাঁর গ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। এর পর ওই ব্যক্তিঅল্প বয়সী মহিলাটিকে মারতে শুরু করে। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু স্থানীয় ব্যক্তি ঘটনাটির ভিডিও তোলেন।
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, মহিলাকে স্থানীয় হেল্থ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং পুলিশের তদন্ত শুরু হওয়ার পর গ্রেফতার হন অভিযুক্ত পঙ্কজ ত্রিপাঠি।
তাছাড়া, রেওয়ার জনসংযোগ বিভাগের করা একটিটুইটও ওই লেখায় দেওয়া হয়। ওই টুইটে বলা হয়, ঘটনাটির পর, জেলার পরিবহন অধিকর্তা ত্রিপাঠির গাড়ি চালানোর লাইসেন্স বাতিল করে দেয়।
রিপোর্টটিতে, ত্রিপাঠিকে অভিযুক্ত বলেচিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনাটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও যোগাযোগের উল্লেখ নেই প্রতিবেদনটিতে।
অন্যান্য ওয়েবসাইটেও, ঘটনাটি সংক্রান্তকয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই আমরা। সেগুলিতেও সাম্প্রদায়িকতার কোনও উল্লেখ ছিল না।
আজতক-এর খবর অনুযায়ী, ওই লোকটি ও মহিলার মধ্যে একটা সম্পর্ক ছিল। সেই দিন, ত্রিপাঠিওই মহিলাকে বিয়ে করার জন্য জোর করলে, তাঁদের মধ্যে বচসা বেঁধে যায়। এবং শেষে, লোকটিমহিলাকে নৃশংস ভাবে মারে।
রেওয়া'র এসডিপিও'র সঙ্গেও কথা বলে বুম। তিনি সাম্প্রদায়িক দাবিটি খারিজ করে দিয়ে বলেন যে, আক্রান্ত ও অভিযুক্ত উভয়ই একই সম্প্রদায়ের সদস্য এবং তাঁরা দু'জনেই হিন্দু।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখের একটি টুইট থ্রেডও দেখি আমরা।
সেই থ্রেডে দেওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়যে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে, অভিযুক্তের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।