আফগানিস্তানের (Afghanistan) ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার পর, তালিবানরা (Taliban) তিন বোরখা-পরা মহিলাকে ক্রীতদাসকে পায়ে শিকল বেড়ি (Chains) পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এই মিথ্যে দাবিতে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হল সম্পাদিত (Photoshopped) ছবি।
বুম দেখে, সম্পাদনা করে শেকলটি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ভাইরাল ছবিটিতে। আমরা ছবিটির আলোকচিত্রী, ইস্তাবুলে বসবাসকারী মুরাত দুজইয়োলের (Murat Duzyol) সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান যে, ছবিটি ২০০৩ সালে ইরাকের এরবিল শহরে তুলোছিলেন।
আফগানিস্তানে তালিবান তাদের সশস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার পরিপ্রেক্ষিতে রূপান্তরিত ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। ১৫ অগস্ট, কাবুলের রাষ্ট্রপতি-প্রাসাদের দখল নিয়ে রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানি পরিচালিত সরকারকে তালিবান ক্ষমতাচ্যুত করে। ১৭ অগস্ট, এক সাংবাদিক সম্মেলনে, তালিবানের মুখপাত্র বলেন, "মহিলাদের শরিয়া আইনে প্রদত্ত অধিকার দেওয়া হবে।" এদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলি, মহিলাদের স্বাধীনতা ভীষণভাবে খর্ব হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে চিন্তিত। কারণ, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তাদের প্রথম দফার রাজত্বকালে, ১০ বছর বয়সী মেয়েদেরও স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করে তালিবান। তাছাড়া মহিলাদের মুখ ঢেকে রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়।
একটি ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়েছে, "বলা হচ্ছে কর্মফলের নিয়ম অব্যাহত আছে। এক সময়, আফগানিস্তানের মাটিতে, মাহমুদ গজনবি হিন্দু মেয়েদের বিক্রি করতেন। আজ সেই একই ঘটনা ঘটছে। কয়েকটা পয়সার জন্য মুসলমান মেয়েদের ধরে ধরে বিক্রি করা হচ্ছে। এই হল শান্তির মসিহা..."
(মূল হিন্দিতে লেখা: "कहते है कर्म का नियम अटल है. कभी इसी अफगानिस्तान की धरती पर महमूद गज़नवी ने हिन्दू बेटियों को बेचा था , #दुख्तरे_हिन्द ...#दो_दीनार....आज वही मुस्लिम लड़कियों को कौड़ियों के भाव बेचा और लुटा जा रहा है. ये है अमन के मसीहा.....।")
টুইটারে ভাইরাল
বিভ্রান্তিকর দাবি সমেত ছবিটি টুইটারেও ভাইরাল হয়েছে।
এই রকম দু'টি টুইট আর্কাইভ করা আছে এখানে ও এখানে।
আরও পড়ুন: না, এই ভিডিওটি প্রকাশ্যে আফগানদের তালিবানের কোতল করার দৃশ্য নয়
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখে যে, সম্পাদনা করে শেকলটি জুড়ে দেওয়া হয় ছবিটিতে। আসল ছবিটিতে, তিন মহিলাকে এক পুরুষের পেছনে হাঁটতে দেখা যায়। কিন্তু তাদের পায়ে কোনও শেকল নেই।
ছবিটি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে আছে, 'ফিফটি শেডস অফ গ্রে হেয়ার' (২০১৪), 'মডার্ন ডিপ্লোমেসি' (২০১৭) ও 'দ্য ডেইলি আফগানিস্তান'(২০১৮)।
বিশ্বের ফোটোগ্রাফি সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইট 'ট্রেক আর্থ'-এর ফোটো গ্যালারিতেও ছবিটি দেখা যায়। ছবিটি তোলার জন্য মুরাত দুজইয়োলকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। মুরাত দুজইয়োল হলেন একজন চিত্রসাংবাদিক। তুরস্কের ইস্তানবুলে থাকেন তিনি।
বুম তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে, দুজইয়োল বলেন, ছবটি তিনি ২০০৩ সালে তুলেছিলেন।
বুমকে উনি বলেন, "ওই ছবিটি আমি ২০০৩-এ তুলি। উত্তর ইরাকের এরবিলে, নিহত সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে একটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হয় শুক্রবারের প্রার্থনার পর। ওই সভা থেকে মানুষজন যখন ফিরছিলেন, তখন ছবিটি তোলা হয়। ওটি একবারেই স্বতস্ফুর্ত ও স্বাভাবিক একটি ছবি। দুজইয়োল বলেন, তিনি সেই সময় একটি দৈনিক সংবাদপত্রে কাজ করতেন ও কাজের সূত্রেই ইরাকে যান।
মুরাত দুজইয়োল আসল ছবিটি বুমের সঙ্গে শেয়ার করেন। সেটি নিচে দেওয়া হল।
তিনি বুমকে আরও বলেন, "ওই মহিলারা একে অপরের পরিচিত। তবে লোকটিকে তাঁরা চিনতেন কিনা বলতে পারব না। দ্বিতীয় গাল্ফ যুদ্ধের সময় আমি একাধিকবার ইরাকে যাই এবং সাংবাদিক হিসেবে ছবি তুলি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আমার অনেক ছবি বদলে দেওয়া হয়েছে। এই ছবিটি মূলত সোশাল মিডিয়ায় ঘুরছে। এ ব্যাপারে আমি অনেককে অনেকবার সাবধান করেছি। কিন্তু সেটি এখনও ভাইরাল হয়ে আছে।"
বুম আসল ও বদলানোর ছবি দু'টির নিচে তুলনা করেছে। ভাইরাল ছবিটি যে ভুয়ো, বুম হিন্দি প্রথমে তা খণ্ডন করে।