সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকজন ব্যক্তির একটি জ্বলন্ত ইমারতের সামনে দাঁড়িয়ে আজান (azaan) দেওয়ার একটি ভিডিও ভুয়ো দাবিসহ সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। ব্যবহারকারীরা দাবি করেছেন, লস অ্যাঞ্জেলেসের (Los Angeles) সাম্প্রতিক দাবানল (wildfires) থেকে ছড়িয়ে পড়া বিধ্বংসী আগুন নেভানোর জন্য মুসলিমরা (Muslim) আজান (azaan) দিচ্ছেন।
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিও পুরনো। ২০২২ সাল থেকে ভিডিওটি ইন্টারনেটে রয়েছে এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
৭ জানুয়ারি, ২০২৫ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্টের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহর ও তার সংলগ্ন এলাকায় দাবানলের কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয় এবং বিশাল ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় শহরটি। ১২ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই আগুনে। লস অ্যাঞ্জেলেসের আগুন নেভাতে হিমশিম খায় সেদেশের দমকল বাহিনী।
৩৬ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিও শেয়ার করে এক ব্যবহারকারী ক্যাপশনে লিখেছেন, "দেখো হুজুরদের দিয়ে আজানের মাধ্যমে আল্লাহর গজব থেকে বাঁচার জন্য মিনতি করছে। আমেরিকার লজ এঞ্জেলস শহরে আগুন নিভাতে যখন সকল প্রযুক্তি ব্যর্থ, তখনই দাওয়াতে ইসলামি সেখানে আজান শুরু করেছে।"
ভিডিওটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাইঃ ভাইরাল ভিডিও ২০২২ সালের
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে গুগলে সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে ভাইরাল ক্লিপসহ ২০২২ সালের জুন মাসে আপলোড করা একাধিক পোস্ট দেখতে পায়।
৩ জুন, ২০২২ তারিখে একজন এক্স ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি পোস্ট করেন। তিনি ক্যাপশনে দাবি করেন পাকিস্তানের করাচি শহরের জেল চৌরঙ্গী এলাকার একটি সুপারমার্কেটে আগুন লেগে যাওয়ার পর ঘটনাটি ঘটে। তিনি দাবি করেন ভিডিওতে দৃশ্যমান ব্যক্তিরা আজান দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।
আজান দিয়ে আগুন নেভানোর প্রচেষ্টার ভিডিও ২০২২ সালে ভাইরাল হলে দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া ও পাক গণমাধ্যম পারহলো এই নিয়ে সেসময় প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এছাড়াও, আমরা ২ জুন, ২০২২-এ একটি ইউটিউব চ্যানেলে ভাইরাল ভিডিওটি দেখতে পাই যার ক্যাপশন অনুসারে জেল চৌরঙ্গীর আগুন তখনও নেভানো যায়নি।
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
পাক সংবাদমাধ্যম ডনের ১ জুন, ২০২২-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, করাচির জেল চৌরঙ্গী এলাকার চেস আপ দোকানের গুদামে আগুন লেগে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই দোকানের এক কর্মীও নিহত হন। তবে, ওই প্রতিবেদনে আগুন নেভাতে আজান দেওয়ার কোনও উল্লেখ ছিল না।
বুম যদিও ২০২২ সালে পাকিস্তানের জেল চৌরঙ্গীতে অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছে, ভাইরাল ভিডিও করাচির কিনা তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে সক্ষম হয়নি। তবে, আমরা নিশ্চিত হয়েছি এই ভিডিও ২০২২ সাল থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে এবং এর সঙ্গে লস অ্যাঞ্জেলেসের সাম্প্রতিক দাবানলের কোনও সম্পর্ক নেই।