একটি ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে (Narendra Modi) একটি সমাধি-সদৃশ কাঠামোর সামনে দাঁড়িয়ে ফুল দিতে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওটি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে, এবং দাবি করা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের পুত্রের সমাধি দেখতে গিয়েছিলেন।
বুম দেখে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ২০১৭ সালের এবং তাতে প্রধানমন্ত্রীকে মায়ানমারে শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের সমাধির সামনে দেখা যাচ্ছে।
এই মাসের গোড়ার দিকে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সমাধিক্ষেত্রটি পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ করে দেয়। তার পর থেকেই সংবাদমাধ্যমে এই মুঘল সম্রাটকে নিয়ে প্রভূত আলোচনা হয়েছে। সংবাদসূত্র অনুসারে, ঔরঙ্গাবাদে যেখানে এই সমাধি রয়েছে, সেখানকার মসজিদ কর্তৃপক্ষ এই এএসআই-সংরক্ষিত সমাধিটি তালাবন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করলে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া এই সিদ্ধান্ত নেয়।
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুসারে এমএনএস মুখপাত্র গজানন কালে একটি টুইটে ওই রাজ্যে সমাধিটির থাকা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন, এবং তার পরই মসজিদ কমিটি সমাধিটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এই ভিডিওটি শেয়ার করে ফেসবুকে যে পোস্ট দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে। ওই ক্যাপশনের অনুবাদ, "প্রধানমন্ত্রী মোদী ঔরঙ্গজেবের পুত্রের সমাধিতে ফুল এবং আতর উৎসর্গ করেন।"
( হিন্দি: औरंगजेब के बेटे की मजार पर फूल और इत्र चढ़ाते हुए PM नरेन्द्र मोदी जी)
একই দাবির সঙ্গে ভাইরাল হওয়া পোস্টটি এখানে, এখানে ও এখানে দেখতে পাবেন।
একই ভিডিও টুইটারেও ভাইরাল হয়েছে। সঙ্গে হিন্দিতে লেখা যে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে তার অনুবাদ, "প্রধানমন্ত্রী মোদী ঔরঙ্গজেবের সমাধিতে ফুল দিচ্ছেন।"
(হিন্দি: औरंगजेब की मजार पर फूल चढ़ाते हुए मोदी जी)
আরও পড়ুন: না, ভাইরাল ছবিটি ঘানায় ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণের দৃশ্য নয়
তথ্য যাচাই
বুম খুঁটিয়ে ভিডিওটি লক্ষ করে, এবং ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির একটি অংশে শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের একটি ছবি দেখতে পায়।
এই সূত্র ধরে আমরা 'নরেন্দ্র মোদী বাহাদুর শাহ জাফর' দিয়ে ইউটিউবে কিওয়ার্ড সার্চ করি, এবং ২০১৭ সালের অনেকগুলি ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে পাই যাতে এই একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড-এর ইউটিউব চ্যানেল একটি ভিডিও প্রতিবেদন আপলোড করে। ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয়, 'প্রধানমন্ত্রী মোদী মায়ানমারে বাহাদুর শাহ জাফরের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানালেন'।
নীচে ভিডিওটি দেখা যাবে।
বুম প্রধানমন্ত্রীর মায়ানমার সফরের উপর টাইমস অব ইন্ডিয়ার ২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও দেখতে পায়।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, প্রধানমন্ত্রী ইয়াঙ্গনে শেষ মুঘল সম্রাটের সমাধি দেখতে যান এবং সেখানে ফুল উৎসর্গ করেন।
পিআইবি'র অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডল থেকে প্রধানমন্ত্রীর সফর সংক্রান্ত একটি টুইটেও আমরা এই ছবিগুলি দেখতে পাই।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করা যায় যে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার বাহাদুর শাহ জাফরকে তখনকার রেঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠায়, এবং সেখানেই ৮৭ বছর বয়সে তিনি মারা যান। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে জাফর ১৮৬২ সালে মারা যান।
ঔরঙ্গজেবের উত্তরাধিকারী
ঔরঙ্গজেবের পর তাঁর উত্তরাধিকারী ছিলেন বাহদুর শাহ ১ যিনি মুয়াজ্জম বা শাহ আলম ১ নামেও পরিচিত।
ইতিহাসবিদদের মতে, বাহদুর শাহ ১-এর শাসনকালের পর থেকেই মুঘল সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয় এবং ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর বাহাদুর শাহ জাফরকে মায়ানমারে নির্বাসনে পাঠানোর পর এই সাম্রাজ্যের পতন হয়।
বিবিসির একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাহাদুর শাহ জাফর আকবর শাহ ২ এবং লাল ভাইয়ের পুত্র।
আরও পড়ুন: না, এই ভিডিওটি অধ্যাপক রতন লালের গ্রেফতারির দৃশ্য নয়