আমেরিকার কারাগারে যুদ্ধ অপরাধের অভিযোগে বন্দী পাকিস্তানের স্নায়ু বিজ্ঞানী আফিয়া সিদ্দিকি (Aafia Siddiqui) প্রয়াত হয়েছে (death) ওই ভুয়ো দাবিতে ছড়ানো হল মিশরের (Egypt) অন্য মহিলার ছবি।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ছবিটি মিশরের মুসলিম ব্রাডারহুড সহযোগী নেতার কন্যা কালিমা আল শেরাফির। আর আফিয়া সিদ্দিকির প্রয়াণের খবরটি সত্যি নয়। তিনি এখনও আমেরিকায় কারাবাসে রয়েছেন।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে দেখা যায় সাদা হিজাব পরিহিত এক নারী হাতকড়া বাঁধা অবস্থায় তাঁর ডান হাত তুলে দেখাচ্ছেন। তাঁর হাতে তসবি (ইসলামীয় জপমালা) রয়েছে।
ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "বিদায় নিলেন আফিয়া সিদ্দিকা হাজার স্যালুট বইন তরে। এই সেই আফিয়া সিদ্দিকা। যিনি ছিলেন নিউরো সাইন্টিস্ট, যিনি ছিলেন একজন পি.এইচ.ডি. হোল্ডার এবং যিনি ছিলেন একজন কোরআনের হাফেজা যার বুকে ধারন করেছিলেন পবিত্র কোরআনের ত্রিশটি পারা। এই আফিয়া সিদ্দিকাই কিডন্যাপ হয়েছিল ২০০৩ সালে যার স্থায়িত্ব ছিল ২০০৮ সাল পর্যন্ত। পরবর্তীতে নিয়ে যাওয়া হয় আমেরিকান টর্চার সেলে এবং সেখানে তার উপড় চলে পাশবিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন…" (সংক্ষেপিত)
আরও পড়ুন: ২০১৯ সালে মোদীর জনসভার ছবি অসমে বাংলাদেশের হিংসা বিরোধী প্রতিবাদ বলে ছড়াল
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স সার্চ করে দেখে জানতে পারে ভাইরাল ছবিটি আমেরিকায় কারাবাসে থাকা আফিয়া সিদ্দিকি নন।
বুম রিভার্স সার্চ করে ভাইরাল ছবিটি মিশরীয় গণমাধ্যম আলদস্তুর-এর ২২ এপ্রিল ২০২১ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখতে পায়।
ওই প্রতিবেদনের অনুবাদ করলে জানা যায়, "মোরশির সহযোগী আমিন আল মরশির কন্যা করিমা আল শেরাফিকে গ্রেফতার করা হয় বিদেশে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত নথি ফাঁস করার অভিযোগে।" তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণের কথা জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।
মিশরীয় গণমাধ্যম আল-বালাদ-এ ২৫ এপ্রিল ২০২১ একই ছবি সহ প্রতিবেদেন প্রকাশিত হয়েছে।
ডোইলি নিউজ ইজিপ্ট-এর ২০১৪ সালের ৩০ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, "মোরশির সহযোগী আমিন আল মরশিকে নথি পাচারের সাহায্য করেন তাঁর কন্যা করিমা আল শেরাফি, একথা বলেন অন্তর্বর্তী মন্ত্রী মহম্মদ ইব্রাহিম।"
করিমা আল শেরাফিকে (Karima Al-Serafy) গ্রেফতার করে কোথায় রাখা হয়েছে সে ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলি।
২০১৬ সালের ১৮ জুন আদালত করিমা আল শেরাফিকে ১৫ বছরের জেল দেয়।
আফিয়া সিদ্দিকির ঘটনা
অন্যদিকে পাকিস্তানি স্নায়ু বিজ্ঞানী আফিয়া সিদ্দিকিকে ২০০৮ সালে আফগনিস্তানের গাজি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আমেরিকার গুপ্তচর ও সেনাদের খুন করার চেষ্টার অভিযোগে নিউ ইয়র্কের আদালত ২০১০ সালে তিন সন্তানের জননী ৪৯ বছর বয়সী আফিয়াকে ৮৬ বছরের জন্য কারাবাস দেয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি তিনি মার্কিন ও পাকিস্তানের সরকারের তৎপরতার শিকার। ২০ অক্টোবর ২০২০ মানবাধিকার কর্মীরা আফিয়ার মুক্তির দাবিতে নিউ ইয়র্কে পাকিস্তানের দূতাবাসের বাইরে প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হয়।
বুম বাংলাদেশ ছবিটির প্রথম তথ্য-যাচাই করেছে।
আরও পড়ুন: নরেন্দ্র মোদীকে এক স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যমা দেখানোর ছবিটি সম্পাদনা করা