পাকিস্তানের (Pakistan) সশস্ত্র বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (ISPR) প্রধান আহমেদ শরীফ চৌধুরির (Sharif Chaudhry) একটি ভাইরাল ডিপফেক (deepfake) ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে, ভারতের সাথে যুদ্ধে দুটি জেএফ-১৭ (JF-17) হারানোর কথা স্বীকার করেছে পাকিস্তান।
ইউসি বার্কলেতে সিনথেটিক মিডিয়ায় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর হ্যানি ফারিদ বুমকে নিশ্চিত ভাবে জানান ভাইরাল ভিডিওটি ডিপফেক।
বৃহস্পতিবার রাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন উভয় দেশই একে অপররের সেনা ঘাঁটিতে আক্রমণ করার অভিযোগ করে। জম্মু, উধমপুর ও পাঠানকোট সীমান্তে রাতভর ভারী গোলাবর্ষণ হয় ও আকাশে ড্রোন উড়তে দেখা যায়।
৭ মে, ২০২৫ তারিখ ভারত পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকে আক্রমণ করলে দুই দেশের মধ্যে শুরু হয় সামরিক সংঘাত। বিগত কয়েক দশকের মধ্যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সবচেয়ে গভীরতম হামলার প্রেক্ষিতে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায়, তারা যেকোনও ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।
ভাইরাল ডিপফেক ভিডিওটিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শরিফ চৌধুরীকে অপারেশন সিঁদুরের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার বিষয়ে কথা বলার পর, ভারতের দুটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানোর কথা বলতে দেখা যায়।
বাংলা সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ বাংলা ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখে, "India vs Pakistan : যুদ্ধ বিমান ধ্বংসের কথা স্বীকার পাক সেনার।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
ফেসবুকেও এই ডিপফেক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমে ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্য যাচাই করতে ভিডিওটির কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে একটি পাকিস্তানি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ফেসবুক লাইভ খুঁজে পায়।
আমরা লক্ষ্য করি নীচের ভিডিওয় দৃশ্যমান প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের দৃশ্য, প্রেক্ষাপট ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে মিলে যায় যা থেকে স্পষ্ট হয়, ক্লিপটি সাম্প্রতিক কোনও সংবাদ সম্মেলনের নয়।
গেটরিয়াল সিকিউরিটির প্রধান বিজ্ঞান কর্মকর্তা এবং ইউসি বার্কলের প্রফেসর হ্যানি ফারিদ যিনি ডিজিটাল ফরেন্সিক এবং এআইয়ের মাধ্যমে ছড়ানো ভুয়ো তথ্যের বিশেষজ্ঞ, তার সঙ্গে ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করতে যোগাযোগ করে বুম।
বুমকে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় ফারিদ জানান, তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি কণ্ঠস্বর থেকে প্রাকৃতিক কণ্ঠস্বরের পার্থক্য যাচাই করার জন্য বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত মডেলে অডিওটি বিশ্লেষণ করেছেন। ফারিদ বলেন, "এই মডেলগুলি অডিওটিকে নিশ্চিত ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হিসাবে সনাক্ত করেছে।" তিনি আরও বলেন, "ঠোঁটের নড়াচড়া এবং অডিওর মধ্যে স্পষ্ট অসঙ্গতি ইঙ্গিত করে অডিওটি ডিপফেক" যেখানে মূল ভিডিওটিকে এআই কণ্ঠের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে সম্পাদনা করা হয়েছিল।
এরপর আমরা অডিওটি হিয়া অডিও যাচাইকারী ওয়েবসাইটে পরীক্ষা করি। পরীক্ষার ফল নিশ্চিত করে অডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি এবং এটি কোনও মানুষের কণ্ঠস্বর হওয়ার সম্ভবনা মাত্র ২%।
যদিও কিছু অযাচিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ভারত পাকিস্তানের দুটি বিমানকে গুলি করে নামিয়েছে, তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত তা সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। বুম ভারতীয় বিমান বাহিনীর মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে; তার কোনও প্রতিক্রিয়া পেলে এই প্রতিবেদনে তা সংযোজন করা হবে।