সোশাল মিডিয়ায় ‘অপটিক্যাল ইলিউশান’ (Optical Illusion) বা ‘দৃষ্টি বিভ্রম’ চিত্রকলার (art paintings) ছবি শেয়ার করে ভুয়ো দাবি (false claim) করা হচ্ছে সেগুলি দেখে মানসিক চাপ (mental stress) পরিমাপ করা যাবে।
বুম যাচাই করে দেখে এই ভাইরাল ছবির স্রোষ্টা ইউক্রেনীয় শিল্পী ইউরি পেরিপাডিয়া (Yurii Perepadia)। তিনি জাপানি অধ্যাপক আকিওসি কিটাওকার (Akiyoshi Kitaoka) অঙ্কন পদ্ধতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ছবিটি ২০১৬ সালে আঁকেন। বুমকে ২০১৯ সালে আকিওসি নিশ্চিত করেন যে তাঁর ছবি মানসিক চাপ পরিমাপ করতে পারে না।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ‘দৃষ্টি বিভ্রম’ ছবিটিতে পলক ফেললে দেখা যায় সেটি যেন সচল।
ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, “এই ছবিটি একজন Japanese neuroscientist (স্নায়ুবিজ্ঞানী) তৈরি করেছেন। যদি ছবি না নড়ে, আপনি শান্ত। যদি এটা ধীরে ধীরে চলে, আপনি একটু চাপে আছেন। যদি এটা দ্রুত চলে যায়, আপনি খুব ক্লান্ত।”
বুম দেখে একই দাবিতে ছবিটি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। একটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটিকে রিভার্স সার্চ করে দেখে ছবিটি ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন ইউরি পেরিপাডিয়া (Yurii Perepadia) (দ্বিতীয় ছবি)।
ইউক্রেনীয় 'গ্রাফিক আর্ট' শিল্পী ইউরির ইনস্টাগ্রাম পোস্টের অনুবাদ হল, “আমি অ্যাডব ইলাস্ট্রেটরে ছবিটি ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ছবিটি এঁকেছিলাম। এটা তৈরি করতে আকিওশি কিটাওকা এফেক্ট ব্যবহার করেছি। জাপানি মোনোবিদ ইয়ামামোটো হাসিমার সঙ্গে এই ছবির কোনও যোগ নেই। তাছাড়া, ইয়ামামোটো হাসিমা নামে কেউ নেই। গুগল করুন সাহায্যের জন্য।”
২০১৯ সালে একই ধরণের ইলিউশান ছবি নিয়ে গুজব ছড়ালে বুম কিয়োটোর রিটশুমিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যার অধ্যাপক আকিওসি কিটাওকার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
বুমকে তিনি বলেন—
"মানসিক চাপের সঙ্গে ভিশুয়াল ইলুউশান বা বিভ্রম ছবির কোনও সম্পর্ক নেই। এই ছবি গুলি দেখে মানের অবস্থা বা মানসিক চাপ মাপা সম্ভব নয়।"
আকিওসি কিটাওকা, ইলিউশান শিল্পী ও মনোবিদ্যার অধ্যাপক, রিটশুমিকান বিশ্ববিদ্যালয়, কিটাওয়া
রিটশুমিকান বিশ্ববিদ্যালেরওয়েবসাইটেও দেখা যাবে আকিওসি কিটাওকার আঁকা এধরেনের আরও অনেক ছবি। কিটাওকার সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও রয়েছে এই ধরণের বিভ্রম ছবি। আকিওসির চিত্রকলা নিয়ে ২০১৪ সালে দ্য গার্ডিয়ানে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
তিনি বুমকে সে সময় জানান, কোরেল ড্র দিয়ে তিনি এঁকেছেন এই ছবি। ছবিগুলি একরকমের ইলিউশান আর্ট বা বিভ্রম শিল্পকলা।
আকিওসি কিটাওকা মনোবিদ্যা পড়ান সেকারনে এই ধরনের ভ্রান্ত গুজবের উৎপত্তি হতে পারে। মানসিক চাপ সংক্রান্ত সমস্যায় ছবিতে চটজলদি পরীক্ষার চেষ্টা না করে পাঠকদের দক্ষ মনোবিদের পরামর্শ নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
ইউরির একই ছবি নিয়ে বিবিসি ২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।