একাধিক সোশাল মিডিয়া বার্তায় দাবি করা হয়েছে যে, পেট্রোলের (petrol price) দাম বাড়ার পেছনে বড় কারণ হল, রাজ্যগুলির (state tax) চাপানো শুল্ক কেন্দ্রের (central tax) শুল্কের চেয়ে অনেক বেশি এবং তার দায় রাজ্যগুলির।
কিন্তু জ্বালানি ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের অধীনস্ত সংস্থা 'পেট্রলিয়াম অ্যান্ড প্ল্যানিং অ্যানালিসিস সেল'র (পিপিএসি) (Petroleum and Planning Analysis Cell) (PPAC) তথ্য বলছে, কেন্দ্রের শুল্ক, ৩২.৯০ টাকা চার রাজ্য/শহর—দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও কলকাতার রাজ্যস্তরের শুল্কের চেয়ে বেশি।
হোয়াটসঅ্যাপে ছড়ানো বার্তার একটি স্ক্রিনশট নীচে রয়েছে। তাতে দেখানো হয়েছে যে, পেট্রোলের লিটার প্রতি ১০৩.০৫ টাকার মধ্যে রাজ্য সরকার তার কর হিসেবে নিচ্ছে ৪১.৫৫ টাকা। অন্য দিকে কেন্দ্রীয় সরকার নিচ্ছে ১৯.৫০ টাকা। আর বাকিটা হল পেট্রলের আসল দাম ও ডিলারের কমিশন।
ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়ও একই ধরনের বার্তা টুইট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমালোচনা করেছেন।
"প্রত্যেকটি পেট্রোল পাম্পে অবশ্যই এই রেট চার্টটি টাঙানো উচিৎ। বেসিক রেট: ৩০.৫০ টাকা। কেন্দ্রীয় সরকারের ট্যাক্স: ১৬.৫০ টাকা। রাজ্য সরকারের ট্যাক্স: ৩৮.৫০ টাকা। ডিস্ট্রি্বিউটার: ০৬.৫০ টাকা। মোট: ৯২.০৫ টাকা। এবার জনসাধারণের বোঝা উচিৎ দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কে দায়ী ও কতটা দায়ী?"
আরও পড়ুন: পোস্টের মিথ্যে দাবি দানিশ সিদ্দিকি মুনাফা পেতে শবদহনের ছবি বিক্রি করেন
তথ্য যাচাই
মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাই ও কলকাতায় পেট্রোলের প্রতিদিনকার খুচরো দর পিপিএসি'র কাছে থেকে পাওয়া যায়।
যদিও পিপিএসি পেট্রোলের নির্দিষ্ট খুচরোর দাম জানায়, কিন্তু মূল্যবৃদ্ধিটা নির্ভর করে হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম করপোরেশন লিমিটেড (এইচপিসিএল), ভারত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন লিমিটেড (বিপিসিএল), ও ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন-এর (আইওসি) মতো তেল বিপনন সংস্থাগুলির ওপর। তার মানে, এক একটি কোম্পানির পাম্পে পেট্রোলের দামের তারতম্য দেখা দিতে পারে, যদিও তা খুব সামান্যই হয়। যেমন, ১ জুলাই দিল্লিতে আইওসি'র পেট্রোলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৯৮.৮১ টাকা, বিপিসিএল'র ছিল ৯৮.৮৫ টাকা আর এইচপিসিএল'র ছিল ৯৮.৮৭ টাকা।
তবে দিল্লিতে সব কম্পানির দামের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ক্রেতা দিচ্ছে:
১। ডিলারকে
২। কেন্দ্রীয় শুল্ক (কেন্দ্রের ট্যাক্স)
৩। ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) (রাজ্য সরকারের চাপানো ট্যাক্স)
৪। আরও অন্যান্য ধরনের কর বা লেভি, যদি রাজ্য সরকার তা বসিয়ে থাকে
৫। ডিলারের কমিশন
যদিও দামের আসল 'বিল্ডআপ' বা গঠন দিল্লির ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়, রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা উপাদানগুলির মূল্য কেবল পিপিএসিই দিতে পারে। এবং তা থেকে প্রতিটি রাজ্যের পেট্রোলের দাম কী ভাবে নির্ধারিত হচ্ছে, তা জানা যায়।
এই ক্ষেত্রে ডিলারের কমিশন প্রতি লিটারে ৩.৮২ টাকা হিসেবে নির্দিষ্ট থাকে। এই কমিশন পেট্রোলের দামের তারতম্য অনুযায়ী বদলায়।
প্রতি লিটার পেট্রোলে, ১.৪০ নেওয়া হয় মৌলিক এক্সাইজ বা আবগারি শুল্ক হিসেব, ১১ বিশেষ অতিরিক্ত এক্সাইজ হিসেবে, ২.৫০ নেওয়া হয় কৃষি, পরিকাঠামো ও উন্নয়ন সেস হিসেবে, ১৮ যায় অতিরিক্ত এক্সাইজ (রাস্তা ও পরিকাঠামো) সেস বাবদ। এগুলির মোট মূল্য ৩২.৯০। কেন্দ্রীয় আবগারি শুল্ক হিসেবে এই অঙ্কের কোনও হেরফের হয় না কোনও রাজ্যে।
পেট্রোল ও ডিজেলের ওপর আবগারি শুল্কের এই ভাগগুলি দেখা যাবে এখানে। (ডাউনলোড করা যাবে)।
চার শহর/রাজ্যে পেট্রোলের ধার্য দাম নিচে দেওয়া হল। চার রাজ্যেই রাজ্যের শুল্ক কাছাকাছি হলেও কেন্দ্রের শুল্ক থেকে কম।
ভ্যাট ও রাজ্য স্তরের সব তথ্য পিপিএসি'র কাছ থেকে পাওয়া যাবে এখানে। (ডাউনলোড শুরু হবে)।
সবক'টি মেট্রোতে পেট্রোলের ক্রমান্বয়ে খুচরো দামের তালিকা পিপিএসি'র কাছ থেকে পাওয়া যাবে এখানে।