একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ফাইজার (Pfizer)-এর সিইও অ্যালবার্ট বুর্লা-কে কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধকের (Vaccine) কার্যকারিতা সম্পর্কে গ্রাহকদের প্রতারণা করার দায়ে এফবিআই গ্রেফতার করেছে। দাবিটি ভুয়ো এবং তার উৎস হল ভুয়ো খবর প্রচারের একটি ওয়েবসাইট।
কনজার্ভেটিভ বিভার নামের ওই ওয়েবসাইটটি নিজেকে কানাডার ওয়েবসাইট বলে দাবি করে এবং তার বক্তব্য, পুলিশ ওই গ্রেফতারির খবরটি চেপে যাওয়ার জন্য গণমাধ্যমগুলিকে নির্দেশও দিয়েছে।
এর আগেও ২০২০ সালের নভেম্বরে সংবাদ-সংস্থা রয়টার্স এই ওয়েবসাইটটির পর্দাফাঁস করেছিল দুটি ভুয়ো খবরের মিথ্যা উদ্ঘাটন করতে- একটি হল, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে চরবৃত্তির দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে আর অন্যটি হল, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার দায়ে জর্জ সোরস-কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফেসবুক এবং হোয়াটস্যাপ, দু জায়গাতেই এই ভুয়ো দাবিটি ভাইরাল হয়েছে এবং সেটি শেয়ার করা হচ্ছে ওই প্রতিবেদনটির শিরোনামকে সংযোগ বা লিংক হিসাবে ব্যবহার করে-- "প্রতারণার দায়ে ফাইজার-এর সিইও-কে এফবিআই গ্রেফতার করেছে"।
দাবিটিকে মান্যতা দিতে ফাইজার-এর কোভিড টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সংক্রান্ত তথ্যের সত্যতা নিয়ে তোলা সংশয়ের তদন্ত বিষয়ে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এর একটি টুইটকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটির সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ জানিয়ে বুম এর হোয়াটস্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও বার্তা এসেছে।
ফেসবুকেও দাবিটি ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের হিংসা নিয়ে ছড়াল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভুয়ো উক্তি
তথ্য যাচাই
কনজার্ভেটিভ বিভার ভুয়ো খবর ছড়ানোর একটি সুপরিচিত ওয়েবসাইট এবং অতীতেও বহু বার রক্ষণশীলদের অপছন্দের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেফতার হওয়ার ভুয়ো খবর প্রচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। বারাক ওবামা ও জর্জ সোরসের গ্রেফতারির মিথ্যা খবর ছড়ানোটাও তথ্য-যাচাইয়ে ধরা পড়ে যায়।
ওয়েবসাইটটি এক অনামা এফবিআই এজেন্টকে তার খবরের উৎস হিসাবে উদ্ধৃত করে ২০২১ সালের ৫ নভেম্বর নিউ ইয়র্কে অ্যালবার্ট বুর্লার গ্রেফতার হওয়ার গুজব ছড়ায়। শুধু তাই নয়, পুলিশ নাকি গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশ না করার নির্দেশ দিয়েছে বলেও মিথ্যা গুজব রটায়।
বুম কিন্তু অ্যালবার্ট বুর্লার গ্রেফতারি নিয়ে কোনও বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ-প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি।
বরং ওই একই দিনে (অর্থাৎ ৫ নভেম্বরেই) বুর্লাকে সার্স-কোভ-২-এর প্রতিষেধক হিসাবে ফাইজারের তৈরি দুটি ওষুধ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে দেখা গেছে—সিএনএন এবং সিএনবিসি-র অ্যাংকরদের সঙ্গে।
বুম এ ছাড়া ফাইজার কোম্পানির সঙ্গেও এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছেl সংস্থার প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলেই এই প্রতিবেদনটি তদনুযায়ী আপডেট করা হবে।
সম্প্রতি সংস্থার একজন ভিতরের লোক দাবি করেছেন যে, ফাইজার-এর তৈরি কোভিড প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সর্ব স্তরেই সঠিক তথ্য-পরিসংখ্যান পেশ করায় গোলমাল থেকেছে, তবু এর জন্য সংস্থার অধিকর্তা বুর্লাকে গ্রেফতার করার প্রশ্ন কখনও ওঠেনি।
ফাইজার ভ্যাকসিন: নিয়ন্ত্রক তদারকি
এই গুজব ও তার ভিত্তিতে রচিত কাহিনীর নেপথ্যে রয়েছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন, যাতে ফাইজার বায়ো-এনটেক কোভিড-১৯ টিকার উত্পাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে গুণগত মান পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে ঘাটতি ও ত্রুটির সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।
ফাইজার সংস্থারই এক ভিতরের কর্মী বা গবেষক মেডিক্যাল জার্নালকে এ কথা জানিয়ে বলেন, যে-গবেষণা সংস্থাকে ফাইজার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দায়িত্ব সঁপেছিল, তারা সর্ব ক্ষেত্রে গুণগত উৎকর্ষ বজায় রাখার দিকে নজর দেয়নি।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ স্মারকের ভিডিও ছড়িয়ে দাবি অশোক কাননে সীতার বসার পাথর