দুটি ছবি, যার একটিতে এক তরুণী অমিত শাহের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং অন্যটিতে এক মহিলার পড়ে থাকা রক্তাক্ত, প্রাণহীন দেহ—একসঙ্গে ভাইরাল করে প্রচার করা হচ্ছে, মহিলাটিকে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের পর ভোট-পরবর্তী হিংসায় (post poll violence) ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে।
২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল-প্রকাশের পরেই রাজ্য জুড়ে শুরু হওয়া সন্ত্রাসের আবহেই এই দুটি ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ওই হিংসায় এ পর্যন্ত ১৪ জন নিহত হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক আক্রমণে। ইতিমধ্যে এই হিংসার সঙ্গে সম্পর্কহীন কিছু ছবি ও ভিডিও ভুয়ো দাবি সহ সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এর মধ্যে একাধিক টুইটকে ভুয়ো বলে শনাক্ত করেছে, যাতে বীরভূম জেলায় ভারতীয় জনতা পার্টির দুই মহিলার শ্লীলতাহানি ও গণধর্ষিত হওয়ার গুজবও রয়েছে।
একটি ছবির ক্যাপশনে লেখা, "দুঃখিত অমিত শাহ! আমি আপনার উপর ভরসা করে আপনার দলকে ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমি সেজন্য ধর্ষিত হচ্ছি কারণ আপনারা ভোটে হেরে গেছেন। আমাকে ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচান। কেন্দ্রে আপনাদের ৩০৩টি আসন রয়েছে, আপনারা এ রকম মেরুদণ্ডহীন হবেন না। বাংলার গড় হিন্দুরা অবশ্য মেরুদণ্ডহীনই!"
ছবিদুটি একটি হিন্দি ক্যাপশন সহও ভাইরাল হয়েছে, "হে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে যে দলীয় কর্মীরা নিহত হচ্ছেন, তাঁরা আপনাদের রাজনৈতিক লাভের জন্যই লড়াই করছিলেন l ওঁদের প্রতি ঋণী থাকুন। যদি ওঁদের প্রাণরক্ষা করতে না পারেন, তাহলে ভগবানের দিব্যি, আপনাদের কাপুরুষতার দায়ে অভিযুক্ত হতে হবে। আমি আপনাদের কাপুরুষ বলবো না, তবে আপনারা যদি এ সবের কোনও প্রতিকার না করেন, তাহলে একদিন আপনারা রাজনৈতিক সংগ্রামে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বেন। পশ্চিমবঙ্গে যা চলছে, তাতে কেন্দ্রের এখনই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর বিবৃতি নয়, চাই কঠোর পদক্ষেপ। ধন্যবাদ!"
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম খোঁজখবর নিয়ে দেখেছে, এই ছবিটি ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর দ্যইকনমিক টাইমস-এর একটি প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছিল। তাতে ক্যাপশন লেখা হয়েছিল, "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দুদিনের সফরে বাঁকুড়া সফরে এসে জেলায় দলীয় সংগঠনের অবস্থা ঝালিয়ে দেখছেন।" ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর বেঙ্গল পোস্টের একটি প্রতিবেদনেও আমরা একই ছবি প্রকাশিত হতে দেখেছি।
বুম দেখে ছবিটি বাঁকুড়া জেলার আন্ধারথোল ব্লকের চতুর্ডিহি গ্রামে তোলা হয় ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর। সে দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দলীয় কর্মী বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে গিয়ে মধ্যাহ্নভোজ করেছিলেন। ওই সফরের সময়েই হাঁসদার পরিবারের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি তোলা হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে এবং এখানে।
আমরা এর পর বিভীষণ হাঁসদার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, তাঁর মেয়ের ওপর কেউ হামলা করেনি। বুমকে তিনি বলেন, "আমার পরিবার এবং আমার কন্যা উভয়েই নিরাপদে রয়েছে। কারও ওপর কোনও আক্রমণ হয়নি। ভোটের পর আমাদের এলাকায় কোনও হিংসার ঘটনাও ঘটেনি। এ ব্যাপারে আমার মেয়ের ছবি দিয়ে যেসব রিপোর্ট ভাইরাল হয়েছে, সবই ভুয়ো।" হাঁসদার মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী এবং তার ডায়াবেটিস রয়েছে।
বিভীষণ হাঁসদার সঙ্গে একই গ্রামে বসবাসকারী আর এক জনজাতির নেতা অমূল্য হাঁসদার সঙ্গেও আমরা কথা বলি যিনিও একইভাবে রিপোর্টটিকে ভুয়ো বলে উড়িয়ে দেন।
বুম যদিও পড়ে থাকা মহিলার মৃতদেহটি শনাক্ত করতে পারেনি, তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে যে অমিত শাহের সঙ্গে তোলা ছবির মেয়েটি সে নয়।
আরও পড়ুন: ৫ কেন্দ্রে পুনর্গণনায় জয়ী বিজেপি দাবিতে ছড়াল ভুয়ো সংবাদের গ্রাফিক