৩১ অক্টোবর, উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh) একটি জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময়, কংগ্রেস নেত্রী (Congress) প্রিয়ঙ্কা গাঁধী (Priyanka Gandhi) দাবি করেন যে, ওই রাজ্যে ৫ কোটি বেকার যুবক রয়েছেন। দাবিটি যাচাই করে আমরা দেখি যে, তাঁর ওই দাবি অতিরঞ্জিত ও সর্বজনের জন্য প্রকাশিত পরিসংখ্যানে তার কোনও সমর্থন মেলে না।
'সেন্টার ফর মনিটরিং অফ দ্য ইন্ডিয়ান ইকনমি'র (সিএমআইই) পরিসংখ্যান বলছে, এ বছর মে থেকে অগস্ট পর্যন্ত, যাঁরা কাজের সন্ধানে ছিলেন, সেই রকম বেকারের সংখ্যা ছিল ৩১.৯৬ লক্ষ (৩.১৯৬ মিলিয়ন)। ওই স্বাধীন চিন্তন সংস্থা, প্রতি মাসে ভারতে বেকারত্ব সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করে।
তাছাড়াও ছিলেন, ২৩.৬৬ লক্ষ (২.৩৬৬ মিলিয়ন) বেকার যাঁরা কাজের সন্ধান করছিলেন না।
ওই দুই ধরনের বেকারদের সংখ্যা এক করলে (যাঁরা কাজ খুঁজছেন ও যাঁরা খুঁজছেন না) সামগ্রিক বেকারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫.৬২ (৫.৫৬২)। এই সংখ্যাটা, জনসভায় প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার দেওয়া ৫ কোটির থেকে অনেক কম।
প্রকৃতপক্ষে, তথ্য দেখায় উত্তরপ্রদেশে বেকার ব্যক্তির সংখ্যা নয় বরং রাজ্যে সমগ্র উপলব্ধ কর্মশক্তি হল প্রায় ছয় কোটি। উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরে তার সমাবেশে নীচের ভিডিওতে ১:১০:১৭ সময়ে তার বিবৃতি শোনা যাবে৷ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যটির বিধানসভার নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
হিন্দিতে মূল বক্তব্য | বাংলায় অনুবাদ |
आज का युवा बेरोज़गार है उत्तर प्रदेश में ही 5 करोड़ बेरोज़गार युवा हैं | আজকের যুবকরা বেকার, খোদ উত্তরপ্রদেশেই ৫ কোটি বেকার যুবক রয়েছে |
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ স্মারকের ভিডিও ছড়িয়ে দাবি অশোক কাননে সীতার বসার পাথর
বেকারত্ব কী ভাবে হিসেব করা হয়?
প্রথমে সিএমআইই, যাঁরা বেকার, কাজ করতে চান ও কাজের সন্ধান করছেন তাঁদের সংখ্যাটা নির্ণয় করে। এবং সেটির শ্রম শক্তির অনুপাত স্থির করার মধ্যে দিয়ে, বেকারত্বের হার গণনা করে। এ বছর মে থেকে অগস্টের মধ্যে, উত্তরপ্রদেশে তেমন ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৩১.৯৬ লক্ষ (৩.১৮৬ মিলিয়ন)।
ওই ৩১.৯৬ লক্ষের ভিত্তিতে, ২০২১ সালের মে-অগস্টে উত্তরপ্রদেশে বেকারত্বের হার দাঁড়ায় ৫.৪১%। ওই সময় কালে, উত্তরপ্রদেশের শ্রমশক্তি ছিল ৫.৯০৭ কোটি।
শ্রম শক্তি বলতে কী বোঝায়? সিএমআইই'র সংজ্ঞা অনুযায়ী, তা হল, বর্তমানে যাঁরা কাজ করছেন ও যাঁরা বেকার, কাজ খুঁজছেন ও কাজ করতে চান, তাঁদের মিলিত সংখ্যা হল শ্রম শক্তি। উত্তরপ্রদেশে, ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষের সংখ্যা হল ১৬.৯ কোটি (১.৬৯ মিলিয়ন)। তার মধ্যে শ্রম শক্তি ৫.৯০৭ কোটি হলে, শতকরা হারে, উত্তরপ্রদেশের শ্রম শক্তি হল জনসংখ্যার ৩৪.৯১ শতাংশ।
তাছাড়া, সিএমআইই আরও একটি হিসেব করে। তা হল, 'বৃহত্তর বেকারত্ব'। যাঁরা বর্তমানে বেকার, কাজ করতে চান, কিন্তু এখনই কাজের সন্ধান করছেন না এবং যাঁরা বর্তমানে বেকার, কাজ খুঁজছেন ও কাজ করতে চান (সংখ্যা ওপরে দেওয়া আছে), তাঁদের যৌথ সংখ্যা হল বৃহত্তর বেকারত্বের হিসেব। বেকার কিন্তু এখনই কাজের সন্ধান করছেন না, উত্তরপ্রদেশে এমন মানুষের সংখ্যা হল ২৩.৬৬ লক্ষ (২.৩৬৬ মিলিয়ন)।
এই হিসেব অনুযায়ী, 'বৃহত্তর শ্রম শক্তি'র সংখ্যা দাঁড়ায় ৬.১৪ কোটি) ও 'বৃহত্তর বেকারত্বের হার' ৯.০৪ শতাংশ। ফলে, স্রেফ কাজ করতে চান (কাজ খুঁজছেন কিনা সে কথা বাদ রেখে), তেমন বেকারের মোট সংখ্যা হল ৫৫.৬২ লক্ষ (৫.৫৬২ মিলিয়ন)।
২০২১ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল, এই সময়কালে, ওই সংখ্যা ছিল, ৫৬.৭ লক্ষ (৫.৬৭ মিলিয়ন)। এই সংখ্যার বিভাজনগুলি নীচে দেওয়া হল।
সিএমআইই'র 'কনজিউমার পিরামিড সারভে'র ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে এই পরিসংখ্যান। মে-অগস্টের হিসেব যে সমীক্ষার ভিত্তিতে করা হয়, তাতে ১,৭৮,৬৭৭ পরিবার থেকে তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। ওই পরিবারগুলিতে ১৫ বছরের বেশি বয়সী সদস্যের সংখ্যা ছিল ৫,২২,০০০। ওই সমীক্ষার স্যাম্পেল ঠিক করার জন্য মাল্টি-স্টেজ সারভে ডিজাইন ব্যবহার করা হয়। ২০১১ সালের আদমসুমারির পরিসংখ্যানও কাজে লাগায় সিএমআইই। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে উত্তরপ্রদেশের বেকারত্বের হার ছিল ৪.২ শতাংশ।
উত্তরপ্রদেশের বেকারত্ব সংক্রান্ত সিএমআইই'র নথিগুলি এখানে দেখা যাবে।
জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের মাধ্যমে সরকার নিয়মিত শ্রমশক্তি সমীক্ষার ফলাফর প্রকাশ করে। ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে উত্তরপ্রদেশে শ্রম শক্তির হার ছিল ৩৩.৩ শতাংশ। আর বেকারত্বের হার ছিল ১৩.৪ শতাংশ। ওই সমীক্ষায় বেকারের সংখ্যাটা দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, ২০২১ সালে, উত্তরপ্রদেশের জনসংখ্যা ২৩.১৭ কোটি হওয়ার কথা।
জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের তথ্যগুলি এখানে দেখা যাবে।
আরও পড়ুন: বিরাট কোহালির কন্যাকে ধর্ষণের হুমকি ভারত থেকে, পাকিস্তানি ব্যক্তি নয়