বিবিসি'র (BBC) একটি প্রতিবেদনের জোড়াতালি দেওয়া স্ক্রিনশটের শিরোনামে বলা হয়েছে, একটি জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi ) হলেন বিশ্বের তৃতীয়তম বিশ্বাসযোগ্য নেতা। ওই স্ক্রিনশটটি এখন সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
বুম দেখে দাবিটি মিথ্যে এবং স্ক্রিনশটটি কারসাজি করে তৈরি করা হয়েছে।
ভাইরাল স্ক্রিনশটটিতে রাহুল গাঁধীর ছবি সমেত বিবিসির একটি প্রতিবেদন দেখা যাচ্ছে। সেটির শিরোনামে বলা হয়েছে, "জনমতে বিশ্বের তৃতীয়তম বিশ্বাসযোগ্য নেতা হিসেবে উঠে এসেছেন রাহুল গাঁধী – সমীক্ষা।" রিপোর্টটির তারিখ হল ১১ জানুয়ারি, ২০১৬।
রাহুল গাঁধীর ছবির নীচে রিপোর্টের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'ডাব্লিউআইএন/গ্যালপ ইন্টারন্যাশনলের করা একটি জনমত সমীক্ষায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুড'র পরেই, বিশ্বের তৃতীয় "বিশ্বাসযোগ্য" নেতা হিসেবে উঠে এসেছেন রাহুল গাঁধী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং উভয়ই রয়েছেন ৬৯তম স্থানে।'
'ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক/গ্যালপ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন' হল একটি আন্তর্জাতিক যৌথ প্রয়াস, যারা মার্কেট রিসার্চ ও জনমত সমীক্ষা করে।
একজন টুইটার ব্যবহারকারী, স্ক্রিনশটটি টুইট করে শেয়ার করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, "শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বেও রাহুল গাঁধীকে একজন বিশ্বাসযোগ্য নেতা হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই উন্নত ভারতের জন্য চাই রাহুল গাঁধীকে।"
আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
অন্য এক টুইটার ব্যবহারকারী, হিন্দি ক্যাপশন সমেত স্ক্রিনশটটি শেয়ার করেছেন। ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "ভক্তবৃন্দ, বারনল যদি শেষ হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে পাকিস্তান থেকে আনিয়ে নিন। বিশ্বের তৃতীয় বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন রাহুল গাঁধী। অভিনন্দন।"
আর্কাইভের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: আপ দলের গুজরাত শাখার প্রচারের বদল করা বিলবোর্ড সাম্প্রদায়িক রঙে ভাইরাল
তথ্য যাচাই
ভাইরাল স্ক্রিনশটের শিরোনাম দিয়ে আমরা কি-ওয়ার্ড সার্চ করি, কিন্তু কোনও সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাওয়া যায় না।
বিবিসি 'হোম' পাতার জোড়াতালি দেওয়া স্ক্রিনশটে যে অন্য শিরোনামগুলি দেখা যাচ্ছে, সেগুলি দিয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে, সেই সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখতে পাওয়া যায়।
যেমন, 'নেগলেক্ট অ্যান্ড অ্যাবিউস: দ্য লস্ট বয় অ্যান্ড জ্যাপ্যান্স পেরেন্টিং ডিবেট' (The lost boy and Japan's parenting debate), এই কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে বিবিসি'র ২০১৬'র একটি রিপোর্ট বেরিয়ে আসে। একই রকম ভাবে, 'ডার্ক হিস্ট্রি: লুকিং ইন্টু দ্য ম্যাসাকার্স অফ ইন্দোনেশিয়াজ পাস্ট' (Dark History: Looking into the massacres of Indonesia's past), এই কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে, ২ জুন, ২০১৬তে প্রকাশিত বিবিসি'র লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
কিন্তু বুম ২০১৮'র একটি রিপোর্ট দেখতে পায়, যাতে গ্যালপ ইন্টারন্যাশনালের একটি সমীক্ষাকে উদ্ধৃত করে বলা হয় যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হলেন বিশ্বের প্রথম তিনজন নেতার মধ্যে একজন। গ্যালপ ইন্টারন্যাশনাল প্রতি বছরই বিশ্বের নেতাদের রেটিং প্রকাশ করে।
তাছাড়া, ফার্স্টপোস্ট-আইপিএসওএস ন্যাশনাল ট্রাস্ট-এর ২০১৯-এর রিপোর্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য নেতা হিসেবে বিবেচিত হন। অনেকটা পিছিয়ে, দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন রাহুল গাঁধী।
বুম দেখে যে, বিবিসি'র রিপোর্টের ভাইরাল স্ক্রিনশটটি ২০১৬ থেকে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে আছে। পোস্টগুলি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: মুসলিম মহিলাদের রাম ভজন গাওয়ার ভিডিওটি দুবাইয়ের নয়