এক বছরের পুরনো একটি ভিডিওতে সাংবাদিক রানা আয়ুবকে (Rana Ayyub) উত্তরপ্রদেশের এক পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। সেই ছবি এখন তাঁর বিরুদ্ধে দিল্লির এসফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর (ইডি) তদন্তের প্রসঙ্গ টেনে শেয়ার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বেআইনি টাকা লেনদেনের একটি মামলায় তাঁকে হেফাজতে নিয়েছে ইডি।
বুম দেখে, ভিডিওটি পুরনো। সেটি ২০২১-এ তোলা হয়। তাতে আয়ুবকে একটি পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে, যেখানে তিনি তাঁর বক্তব্য নথিভুক্ত করতে গিয়ে ছিলেন। তাছাড়া, গ্রেফতার হওয়ার কথা অস্বীকার করে আয়ুব বলেন, উনি বাড়িতেই আছেন।
১১ ফেব্রুয়ারি, একটি বেআইনি টাকা লেনদেনের মামলায় ইডি আয়ুবের ১.৭৭ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করে। তারপরই ভাইরাল হয় ভিডিওটি। কিন্তু আয়ুব তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি অস্বীকার করে টুইটারে একটি বিবৃতি দেন।
আয়ুবের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মামলাটির সঙ্গে ভিডিওটিকে মিথ্যে করে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেটির সঙ্গে হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "ম্যাডাম এখন কি বলবেন। রানা আয়ুব, যিনি সাংবাদিকতার নামে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ান ও বিদেশ থেকে টাকা পান, ধরা পড়েছেন। ইডি ১.৭৭ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। তাছাড়া বেআইনি ভাবে টাকা লেনদেন করারও অভিযোগ রয়েছে।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: मैडम अब बोलें भी तो क्या विदेशी पैसे ले कर पत्रकारिता के नाम पर देश में अफवाह और हिंदुओ के विरुद्ध नफरत फैलाने वाली राणा अयूब धर ली गयी हैं, 1.৭৭ करोड़ रुपए ED ने किए अटैच, मनी लॉन्ड्रिंग का आरोप भी है।)
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটির আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: না, এটি কর্নাটকের মুসকান খানের সঙ্গে রাহুল গাঁধীর ছবি নয়
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির একটি প্রধান ফ্রেম নিয়ে বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। দেখা যায়, 'দ্য নিউজ রিভিউয়ার্স' নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলেভিডিওটি ২ জুলাই, ২০২১-এ আপলোড করা হয়েছিল। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, "গাজিয়াবাদের বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী মিথ্যে ভিডিও: রানা আয়ুবকে উত্তরপ্রদেশের পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ, বয়ান নথিভুক্ত!"
এই সূত্র ধরে আমরা ইউটিউবে কি-ওয়ার্ড সার্চ করি। দেখা যায়, 'পাঞ্জাব কেশরি ইউপি'র ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছিল। সেটির হিন্দিতে লেখা শিরোনামে বলা হয়, "বৃদ্ধের ওপর হামলার ঘটনা: সাংবাদিক রানা আয়ুব তাঁর বয়ান দেন, জিজ্ঞাসাবাদ চলে দু'ঘন্টা।"
(হিন্দিতে লেখা শিরোনাম: बुजुर्ग मारपीट मामला- पत्रकार राणा अय्यूब ने दर्ज कराए बयान, 2 घंटे तक पुलिस ने की पूछताछ)
জুন ২০২১-এ, গাজিয়াবাদের লোনিতে, এক বয়স্ক ব্যক্তিকে মারধোর করার ঘটনা সম্পর্কে পোস্ট-করা টুইটের জন্য, উত্তরপ্রদেশের পুলিশ নয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে - সোশাল মিডিয়া টুইটার, সাংবাদিক, কংগ্রেস নেতা ও সংবাদ ওয়েবসাইট 'দ্য ওয়্যার'। সেই সময় বুম ঘটনাটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তাঁদের মধ্যে ছিলেন, সাংবাদিক রানা আয়ুব, সাবা নাকভি, তথ্য-যাচাইকারী সংস্থা 'অল্ট নিউজ'-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবায়ের, ও তিনজন কংগ্রেস নেতা – শামা মহম্মদ, সালমান নিজামি ও মাসকুর উসমানি। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর ধারায় মামলা দায়ের করে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তাঁরা একটি ভিডিও টুইট করেন, যাতে দাবি করা হয় যে, আবদুল সাফি নামের এক ব্যক্তিকে তাঁর আক্রমণকারীরা 'জয় শ্রীরাম' বলতে বাধ্য করে ও তাঁর দাড়ি কেটে দেয়। এফআইআর-এ বলা হয় যে, ভিডিওটি টুইট করার আগে, তাঁরা সেটির সত্যতা যাচাই করেন নি। এবং ভিডিওটির প্রচার বন্ধ করার জন্য টুইটার কোনও চেষ্টায় করেনি। তার ফলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ায়।
আরও পড়ুন: হিজাব বির্তক: ভারতকে যুদ্ধের হুমকি দেয়নি তুরস্কের রাষ্ট্রপতি এর্দোয়ান