এক দল লোক এক মহিলার (Woman) উপর হামলা (Attack) চালাচ্ছে, এমন একটি অস্বস্তিকর দৃশ্যের ভিডিও (Video) ভুয়ো দাবি সহ প্রচার করা হচ্ছে যে, এটি উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) একটি গ্রামের ঘটনা।
বুম দেখে, দুটি পৃথক ঘটনার ভিডিওকে একসঙ্গে জোড়া হয়েছে এবং একটি বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা সহ শেয়ার করা হচ্ছে। ভাইরাল হওয়া ক্লিপটির একটি অংশ উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদের, আর অন্য অংশটি মধ্যপ্রদেশের এক গ্রামে এক মহিলার উপর বর্বরোচিত হামলার।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক দল লোক নির্মমভাবে এক মহিলাকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। পরে তারা মহিলাকে গাছে টাঙিয়ে দিয়ে সেই অবস্থাতেও পিটিয়েছে। আরও পরে এক ব্যক্তিকে মোবাইল ক্যামেরার দিকে মুখ করে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে।
সেই লোকটি হিন্দিতে বলছে— "বন্ধুরা! আমি এই মাত্র একটা ভিডিও আপলোড করেছি। এটা আমার বোনের মৃতদেহের ছবি। এটা হল লোদিপুর বিষ্ণোই এলাকা এবং আমি এই মুহূর্তে থানায় দাঁড়িয়ে রয়েছি। এটা মাঝোলি থানা, কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। বন্ধুরা! মিডিয়াও আমাদের কথা শুনতে চায় না, আর পুলিশও কিছুই করতে প্রস্তুত নয়। তাই আমি আপনাদের সাহায্য চাইছি l এই ভিডিওটা যেন উপরমহলেও পৌঁছয়। দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন, মেয়েটি আমার তুতো বোন।"
এর পরেই ভিডিওটি মহিলার উপর পাশবিক আক্রমণের দৃশ্য দেখাতে শুরু করে।
ভিডিওর দৃশ্য এতই নিষ্ঠুর যে বুম তা শেয়ার করতে চায় নাl
তবে ভাইরাল হওয়া পোস্টটি এখানে এবং এখানে দেখা যেতে পারে, যদিও দেখার সময় সতর্ক থাকবেন।
আরও পড়ুন: মাস্ক পরা নিয়ে সরকারের পুরনো প্রচার ভিডিও বিভ্রান্তিকর দাবিতে ভাইরাল
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটি থেকে কয়েকটি স্ক্রিনশট নিয়ে অনুসন্ধান করেছে।
সেই সঙ্গে আমরা কয়েকটি সংবাদ-প্রতিবেদনও দেখেছি, যাতে এক মহিলার উপর নৃশংস হামলার কথা রয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস-এর ইউ-টিউব চ্যানেলে এই ঘটনার প্রতিবেদন শেয়ার করে ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের আলিরাজপুরের। ভিডিওতে দেখা মেয়েটি ২০ বছরের নানচি আজনার, যে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় তার আত্মীয়রা তাকে বেদম মারছে। পরিবারের লোকেরাই তার চুলের মুঠি ধরে টানছে, লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে, এবং গাছে ঝুলিয়েও মারছে। পরে সোশাল মিডিয়াতে এই ভিডিওটিই ভাইরাল হয়ে যায়l
হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রতিবেদনে আলিরাজপুরের পুলিশ সুপারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে— "মহিলাটি তার পতিগৃহ ছেড়ে চলে যাওয়ায় আত্মীয়রা তাকে বেধড়ক মারধর করেছে। ঘটনাটি ফুটতালাও গ্রামের, এবং আমরা বোরি থানায় একটা মামলাও করেছি। মহিলার ভাইদের ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারায় গ্রেফতারও করা হয়েছে।"
২ জুলাই ২০২১ সালের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, যে অভিযুক্তদের মহিলাকে নিগ্রহ করতে দেখা গেছে, তারা মহিলার বাবা কেল সিং এবং তুতো ভাই ভুবন ভীল, করম ভীল ও দীনেশ ভীল বলে শনাক্ত হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে যে, মহিলা তাঁর শ্বশুরবাড়িতে খুবই অসুখী ছিলেন এবং এই নিয়ে দ্বিতীয় বার সেখান থেকে পালাবার চেষ্টা করেন, যখন তাঁর আত্মীয়রা তাকে ধরে ফেলে এবং নৃশংসভাবে মারধর করে।
লোদীপুর বিষ্ণোই-এর লোকটির ভিডিও
এই হামলার ভিডিওর সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে একটি থানার বাইরে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তির রেকর্ড করা অন্য একটি ক্লিপকে।
খুব মন দিয়ে ভিডিওটি দেখে-শুনে বুম লক্ষ্য করেছে, ভিডিওটি মাঝোলি থানার বাইরে তোলা। লোকটি এলাকাটি চিহ্নিত করেছে লোদীপুর-বিষ্ণোই বলে, তবে তার পিছনে দেখা যাচ্ছে মোরাদাবাদ পুলিশের একটি সাইনবোর্ড।
মঝোলা মুরাদাবাদ নববিহাতিা কি মৃত্যু—এই হিন্দি শব্দগুলি বসিয়ে অনুসন্ধান করে আমরা ওই একই ভিডিও দেখতে পেয়েছি, যাতে এক ব্যক্তি সোশাল মিডিয়া.ব্যবহারকারীদের অনুরোধ করছে, ১৭ জুন, ২০২১-এ ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার করতে।
সেখানে ঘটনার বর্ণনা হিসাবে মোরাদাবাদের মাঝোলা এলাকার উল্লেখ রয়েছে। এর পরেই আরও বিস্তারিত জানতে বুম মোরাদাবাদ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। মোরাদাবাদ আইজি-র জনসংযোগ অফিসার জানালেন— "ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা লোকটির সঙ্গে আক্রান্ত মহিলার ভিডিওটি সম্পর্কিত নয়। এই ঘটনায় যে ব্যক্তি ভিডিও করছে, তার বোন নিহত হয়েছে। এটা জুন মাসের ঘটনা। ২ জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে, আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও ধরা হবে।"
জনসংযোগ আধিকারিক আরও জানালেন যে মোরাদাবাদ পুলিশ তার সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলে ভাইরাল ভিডিওর ভুয়ো দাবিও খারিজ করে দিয়েছে। ৫ জুলাই-এর সেই টুইটে লেখা হয়েছে, "এক মহিলার মৃত্যু হওয়ার পরও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভাইরাল ভিডিওয় দাবি করা হচ্ছে। মাঝোলা থানার অধীনে ১৩ জুন, ২০২১-এ ঘটা সেই ঘটনার সূত্রে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দণ্ডবিধির ধারায় ২ জনকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে।"
ঘটনার প্রতিবেদন আমরা হিন্দি দৈনিক পত্রিকাতেও পেয়েছি। ১৪ জুন প্রকাশিত দৈনিক জাগরণ অনুযায়ী ঘটনাটি লোদীপুরের জওহর নগর এলাকারl নিহত মহিলা রিংকির দেহটি একটি মন্দিরের সিঁড়ির কাছে ঝুলে থাকতে দেখা যায়l তাঁর দেহে আঘাতের চিহ্নও ছিল।
দৈনিক জাগরণ-এর প্রতিবেদনে আরও জানানো হয় যে, রিংকির এ বছরেরই ১ জুন বিয়ে হয় এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা মৃত্যুর জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকদের দায়ী করেছেন। রিংকির বাবার অভিযোগক্রমে পুলিশ রিংকির স্বামী এবং আরও ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেল
আরও পড়ুন: সিংহ শাবক শুঁড়ে চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছে হাতি, "হাঁসজারু" ছবিটি ফোটোশপ করা