সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যাতে একদল আধিকারিককে কিছু নির্মাণ ভাঙার (Demolition) কাজ তদারকি করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে যে, জম্মু ও কাশ্মীরে (Jammu and Kashmir) রোহিঙ্গা মুসলমানদের (Rohingya Muslims) তৈরি বেআইনি বসতি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।
বুম দেখে, জম্মু ও কাশ্মীরে ডাল লেকের ধারে অনেক জায়গায় বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এ বছর জুন মাসের শুরুতে, সেখানকার 'লেকস অ্যান্ড ওয়াটারওয়েজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি' তাঁদের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের সাহায্যে ওই উচ্ছেদ অভিযান চালান। আমরা ওই দফতরের একজন আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, উনি ভাইরাল দাবিটি উড়িয়ে দেন।
মাটি কাটার ভারি যন্ত্র দিয়ে আধিকারিকদের একটি দলকে কিছু বাড়ি ভাঙতে দেখা যাচ্ছে ভাইরাল ক্লিপটিতে। স্থানীয় মানুষরা তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, এমনটাও দেখা যাচ্ছে ভিডিওটির কোনও কোনও জায়গায়।
হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "রোশনির আওতায় রোহিঙ্গা জিহাদিদের গজিয়ে ওঠা বসতি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীরে।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: जम्मू-कश्मीर में #रोहिंग्या #जेहादियों की रोशनी के तहत बसायी गई बस्ती उखाड़ी जा रही है...)
ওই দাবিতে ২০০১'র রোশনি আইনের উল্লেখ করা হয়েছে। সেটি এখন বাতিল। ২০২০-তে 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'এ প্রকাশিত একটি লেখা অনুযায়ী আইনটি চালু করে ফারুক আবদুল্লার নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল কনফারেন্স সরকার। সেই আইন অনুসারে, 'টাকার বিনিময়ে, সরকারি জমির বেআইনি দখলদারদের জমির মালিকানা দেওয়া হত'।
একই দাবি সমেত ভিডিওটি একাধিক ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে বিজেপি নেতাকে মারধরের পুরনো ছবি বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়াল
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির ডান দিকের ওপরের কোণে 'জম্মু লিঙ্ক নিউজ'-এর লোগো দেখা যায়। বুম সেটির ইউটিউব চ্যানেলটি দেখে।
দেখা যায়, ৫ জুন ২০২১, ওই একই ভিডিও আপলোড করা হয় ইউটিউব চ্যানেলটিতে। সেটির শিরোনামে বলা হয়, 'এলএডাব্লিউডিএ বেশ কিছু বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেয়।'
ইউটিউব ভিডিওটির বিবরণে বলা হয়, লেকস অ্যান্ড ওয়াটারওয়েজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি মে ও জুন মাসে তাদের এনফোর্সমেন্ট শাখার মাধ্যমে ওই উচ্ছেদ অভিযান চালান। এনফোর্সমেন্ট আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে, বেশ কিছু বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হয়।
কোন কোন জায়গায় ওই উচ্ছেদের কাজ চালানো হয়, তাও বলা হয় ওই চ্যানেলে। যেমন, লাস্করি মোহল্লা, দোজি মোহল্লা, বুর্জহামা, ওয়াঙ্গুত তেইলবাল ও নিশাত।
সেটিকে সূত্র ধরে, বুম হিন্দি আর উর্দু কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে। তার ফলে ওই ঘটনা সংক্রান্ত বেশ কিছু সংবাদ প্রতিবেদন সামনে আসে। আমরা দেখি ওই একই ভিডিও ৬ জুন 'ইটিভি ভারত'-এর উর্দু রিপোর্টে আপলোড করা হয়।
ওই রিপোর্টে বলা হয় যে, লকডাউনের সময় গ্রিন বেল্ট-এ গজিয়ে ওঠা বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেয় লেকস অ্যান্ড ওয়াটারওয়েজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি।
আরও কিছু কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে, স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলির করা আরও কয়েকটি প্রতিবেদন বেরিয়ে আসে। সেগুলির কয়েকটিতে এখন ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট দেখা যায়। অন্যগুলিতে ওই ভিডিওটিই ব্যবহার করা হয়। ওই ঘটনা সম্পর্কে আরও জানতে এখানে, এখানে ও এখানে ক্লিক করুন।
ওই ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বুম জম্মু ও কাশ্মীরের লেকস অ্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটি'র সঙ্গে যোগাযোগ করে।
এনফোর্সমেন্ট অফিসার আবদুল আজিজ কাদরি বুমকে বলেন যে, ভাইরাল হওয়া দাবিটি মিথ্যে।
"ওঁরা শ্রীনগরের স্থানীয় মানুষ। তাঁরা ডাল লেকের ধার ধরে বেআইনি নির্মাণ করছিলেন। ওটা একটি গ্রিন বেল্ট। সেখানে কোনও রকম নির্মাণ করা নিষিদ্ধ," কাদরি বলেন বুমকে।
উনি আরও বলেন যে, ওই উচ্ছেদের কাজ হয় মে ও জুন মাসে।
যে সব জায়গায় বেআইনি নির্মাণ করা হয়, সেগুলির নামও উনি জানিয়ে দেন বুমকে। "ভাঙ্গার কাজ হয় লস্করি মোহল্লা, দোজি মোহল্লা ও বুর্জহামায়। সেগুলি ডাল লেকের গ্রিন বেল্টের মধ্যে পড়ে। আমরা যখন নির্মাণগুলি ভাঙতে যাই তখন স্থানীয় বাসিন্দারা তার প্রতিরোধ করেন," কাদরি বুমকে বলেন।
আরও পড়ুন: সংঘর্ষ বিরতিতেও প্যালেস্তাইনি যুবক গ্রেফতার বলে ছড়াল ২০১৪ সালের ছবি