একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে যে, জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী কয়েক জন ভারতীয় প্রতিনিধি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S Jiashankar) কোয়ারান্টিন বা নিভৃতবাসে থাকতে অস্বীকার করেছেন। ভিডিওটি টুইটারে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটির একটি অংশে দাবি করা হয়েছে যে, সম্মেলন চলাকালীন আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং ব্রিটেনের হোম সেক্রেটারি প্রীতি পটেলের সঙ্গে দেখা করার জন্য জয়শঙ্কর আইসোলেশনের বিধি ভঙ্গ করেছেন।
বুম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভিডিওতে যে দাবি করা হয়েছে তা মিথ্যে। জয়শঙ্কর পটেল এবং ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দেখা করেছেন ঠিকই, কিন্তু তা ভারতীয় প্রতিনিধিদের কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার আগের ঘটনা। আমরা আরও দেখতে পাই, ভিডিওটির যে অংশে এই দাবি করা হয়েছে, সেটি স্কাই নিউজের একটি সংবাদ প্রতিবেদনের মধ্যে কারচুপি করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে দর্শকরা বিভ্রান্ত হন এবং একে স্কাই নিউজের প্রতিবেদনের অংশ বলে মনে করেন।
Shehnaz30 (@iraniShenaz1958) নামে এক ব্যক্তি টুইটারে এই ভিডিওটি শেয়ার করেন এবং সঙ্গে ক্যাপশন দেন, "ভারতে তাঁদের প্রধানমন্ত্রী যেমন কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাবে ঘুরছেন, জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধিরাও তেমন ভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন... ভারতীয় দলকে ভীষণ অপমান করা হয়েছে, এবং সামনের মাসের বৈঠকগুলিতে অংশ নিতে তাঁদের নিষেধ করা হয়েছে।"
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বুম দেখতে পায় যে, শিখ ফেডারেশন ইউকে ভিডিওটি প্রথম টুইটারে শেয়ার করে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরুর ডাঃ আশুতোষ শর্মা বলেছেন করোনা রুখতে গরম জলের ভাপ নিতে?
তথ্য যাচাই
@iraniShenaz1958 এক ব্রিটিশ নিউজ চ্যানেল স্কাই নিউজের একটি প্রতিবেদনের একটি অংশ শেয়ার করেন, যেখানে জি-৭ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করা হয়। জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, এবং দেশের অন্যান্য প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
ভিডিওটির ডান দিকে উপরে শিখ ফেডারেশন ইউকের লোগো দেখতে পাওয়া যায়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির ১ মিনিট ৩সেকেন্ডের পর থেকে আমরা দেখতে পাই, যিনি সংবাদটি পাঠ করছিলেন তাঁর গলা এবং উপস্থাপনার ভঙ্গি হঠাৎই আগের অংশ থেকে পুরোপুরি বদলে গেছে। সংবাদ প্রতিবেদনের বাকি অংশটিতে যেমন ভিডিও কভারেজ দেখানো হচ্ছিল, তার বদলে এই অংশে স্থিরচিত্র দেখানো হয়।
এই অংশেই উপস্থাপক দাবি করেন যে,তাঁর প্রতিনিধি দল কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও জয়শঙ্কর আইসোলেশনের নিয়ম মানছেন না। এই অবস্থাতেই তিনি ব্লিঙ্কেন ও পটেলের সঙ্গে দেখা করেন বলেও দাবি করা হয়।
এই অংশে আমরা আর স্কাই নিউজের লোগো দেখতে পাইনি, বরং শিখ ফেডারেশন ইউকের লোগো দেখতে পাওয়া যায়।
বুম জি-৭ স্কাই নিউজের জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের কভারেজ খুঁটিয়ে দেখে, এবং ভাইরাল ভিডিওটির প্রথম অংশে যে সংবাদের অংশটি দেখা যায়, তার মূল ভিডিওর খোঁজ পায়।
জয়শঙ্করের কোয়ারান্টিন ভাঙ্গার ব্যাপারে যে দাবি ভাইরাল হয়েছে, স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে তার কোনও উল্লেখ আমরা দেখতে পাইনি। এ ছাড়া হঠাৎ নেপথ্য ভাষ্যকারের গলা বদলে যাওয়া এবং উপস্থাপনার ধরন বদলে যাওয়া দেখে মনে হয় যে, স্কাই নিউজের প্রতিবেদনের সঙ্গে এই অংশটি আলাদা ভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে যাতে দর্শকরা বিভ্রান্ত হন এবং বিশ্বাস করে যে এটি জি সেভেন সনহক্রান্ত স্কাই নিওউজের কভারেজের অংশ।
এ ছাড়া সামিটের উপর যেসব সংবাদ প্রতিবেদন বেরিয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে, যদিও জয়শঙ্কর এবং তাঁর প্রতিনিধি দলের তিন সদস্য ৫ মে থেকে আইসোলেশনে চলে যান, তিনি ব্লিঙ্কেন এবং পটেলের সঙ্গে দেখা করেন ৩ মে। ওই প্রতিবেদনগুলিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, কোয়ারান্টিনে থাকার ফলে জয়শঙ্কর ভার্চুয়ালি শীর্ষ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বোঝাই যাচ্ছে যে, জয়শঙ্কর কোয়ারান্টিনের বিধি ভঙ্গ করেছেন, এই অভিযোগটি ভিত্তিহীন।
যদিও, ভার্চুয়াল বৈঠকে জয়শঙ্কর মুখের মাস্ক ছাড়াই অংশগ্রহণ করছেন, এই ছবিটি সত্যি। জয়শঙ্কর নিজেই ছবিটি টুইট করেছেন।