সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়ায় একটি ভিডিও যেখানে একজন ব্যক্তি নিজের খাবারের প্লেটে টিকটিকি (Lizard in Food) খুঁজে পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। ভিডিওতে দেখা যায় একটি বিরিয়ানির প্যাকেট খোলার পরে টিকটিকি খুঁজে পাওয়ার দৃশ্য। দাবি করা হয় ঘটনাটি ঘটে দাদা বৌদি রেস্টুরেন্টে (Dada Boudi Restaurant) যেটি অবস্থিত ব্যারাকপুরে (Barrackpore)।
বুম যাচাই করে দেখে ঘটনাটি মালদার এক দোকানের। ব্যারাকপুরের 'দাদা বৌদির বিরিয়ানি' দোকানের সাথে এই ভিডিওর সম্পর্ক নেই।
ব্যারাকপুরের দাদা বৌদি রেস্টুরেন্ট বেশ কিছু বছরে স্বনামধন্য হয় তাদের বিরিয়ানির ব্যাপক বিক্রয়ের জন্য। ব্যারাকপুর ছাড়াও তাদের বিভিন্ন জায়গায় শাখা উপস্থিত। এবার তাদেরকে কেন্দ্র করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল এই বিভ্রান্তিকর ভিডিও।
ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে বাক্স খুলে বিরিয়ানি ঢালতে দেখা যায়। তারপর ভিডিওতে যে ব্যক্তি কথা বলছিলেন তিনি টিকটিকি পাওয়ার গোটা ঘটনার উল্লেখ করেন।
এই ভিডিও হোয়াটস্যাপ এবং ফেসবুকেও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিও এক প্রকারের সতর্কবার্তা হিসেবেই ছড়ানো হয় এবং ব্যারাকপুরের দাদা বৌদি রেস্টুরেন্টকে বয়কট করার দাবি জানানো হয়।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লেখেন,"এই ভিডিও টা viral করে দাও ব্যারাকপুর area তে, আর দোকান টা কে পুরো পুরি ভাবে বয়কট করা হোক। আমি আমার সব গ্রুপে share করে দিচ্ছি।"
এই পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন এবং তার একটি আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এই ধরণের আরও পোস্ট দেখা যাবে এখানে, এবং এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমেই লক্ষ্য করে বাক্সটি খুলে যখন বিরিয়ানি পাত্রে ঢালা হয়, তখন বাক্সে উল্লেখ করা রেস্টুরেন্টের নাম এবং ঠিকানা ব্যারাকপুরের দাদা বৌদি রেস্টুরেন্টের নয়। এই ভিডিওর অংশে খাবারের বাক্সে ঠিকানার উল্লেখ রয়েছে, 'এমকে রোড, মালদা' যার থেকে আন্দাজ করা যায় এটি ব্যারাকপুরের ঘটনা নয়।
এছাড়াও আমরা শুনতে পাই ভিডিওতে যে ব্যক্তিটি কথা বলছেন, তিনি উল্লেখ করেন এটি 'গৌড় রোডের' শাখার ঘটনা। আমরা ব্যারাকপুরের গৌড় রোড নামক কোন জায়গায় অবস্থিত দাদা বৌদি রেস্টুরেন্টের শাখা খুঁজে পাইনি।
আমরা লক্ষ্য করি ভিডিওতে বাক্সের উপর একটি মোবাইল নাম্বার উল্লেখ করা রয়েছে।
বুম তাদের সাথে যোগাযোগ করায় জানতে পারে তাদের এই 'দাদা বৌদির বিরিয়ানি' নামক দোকানটি ব্যারাকপুরে অবস্থিত নয়। তারা জানায় মালদার গৌড় রোডে তাদের এই দোকানের ঠিকানা। তাদের তরফে মহম্মদ আফতাব আমাদের বলেন,"এই ঘটনা বেশ কয়েক মাস পুরনো। ঘটনাটি আমাদেরই দোকানে ঘটে, যেটি মালদায় অবস্থিত। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে আমাদের সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের আধিকারিকরাও যোগাযোগ করে। এখন একই ভিডিও ব্যারাকপুরের দাদা বৌদি বিরিয়ানির নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে।"
এরপর আমরা কথা বলি মালদা জেলার খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে। তাদের একজন আধিকারিক বুমকে জানায়,"ঘটনাটি বেশ কয়েকদিন আগের এবং এটি মালদা জেলারই ঘটনা। সেই সময় এই ঘটনা জানার পরে আমরা তৎপর ভাবে ওই দোকানের পরিদর্শন করি এবং ওখানে বেশ কিছু সংশোধনের প্রস্তাব দি। সংশোধনের প্রস্তাবের মধ্যে ছিল কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন সঠিক বায়ুচলনের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আলো, ইত্যাদি।"
এই ভিডিও কে বা কারা তুলেছিলেন তা বুম স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। কিন্তু এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ঘটনাটি ব্যারাকপুরের দাদা বৌদি বিরিয়ানি রেস্টুরেন্টের নয়।