করোনাভাইরাস (Coronavirus cases) সংক্রমণের হার বাড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল করোনার এক উপরুপ (Covid-19 variant) নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর দাবি।
বুম যাচাই করে দেখে এই ভাইরাল পোস্টটি পুরনো এবং এই দাবিকে সরাসরি খারিজ করে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর।
সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে জে.এন ১ নামক করোনার এক উপরুপের কারণে সংক্রমণের হারে বৃদ্ধি দেখা যায়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের এক তথ্য সহ একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় সংক্রমণের হার একদিনের মধ্যে বেড়েছে ৭০০-র বেশি। জানা যাচ্ছে জেএন ১ হল ওমিক্রনেরই এক রূপ এবং লক্ষণগুলিও একই ধরণের। ইতিমধ্যে দিল্লি, তেলেঙ্গানা এবং উত্তরাখণ্ড এবং অন্যান্য রাজ্যগুলিতে সতর্কতা বাড়ানো হয় এই নতুন উপরুপের কারণে।
এর মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে এলো একটি বিভ্রান্তিকর ভাইরাল মেসেজ যা ছড়িয়ে পরে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই পোস্টে লেখা হয়, "প্রত্যেককে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কারণ করোনাভাইরাসের নতুন COVID-Omicron XBB ভেরিয়েন্ট ভিন্ন, মারাত্মক এবং সঠিকভাবে সনাক্ত করা সহজ নয়:-
নতুন ভাইরাস COVID-Omicron XBB এর লক্ষণগুলি নিম্নরূপ:-
1. কাশি নেই।
2. জ্বর নেই।
শুধু অনেক কিছু থাকবে :-
3. জয়েন্টে ব্যথা।
4. মাথাব্যথা।
5. ঘাড় ব্যথা।
6. উপরের পিঠে ব্যথা।
7. নিউমোনিয়া।
8. সাধারণত কোন ক্ষুধা নেই।
অবশ্যই, COVID-Omicron XBB 5 গুণ বেশি ভাইরাসজনিত এবং ডেল্টা ভেরিয়েন্টের তুলনায় মৃত্যুহার বেশি। অবস্থার চরম তীব্রতায় পৌঁছাতে অল্প সময় লাগে, কখনও কখনও সুস্পষ্ট লক্ষণ ছাড়াই। আসুন আরো সতর্ক হই! এই ধরনের ভাইরাস নাসোফ্যারিঞ্জিয়াল অঞ্চলে থাকে না এবং তুলনামূলকভাবে অল্প সময়ের মধ্যে সরাসরি ফুসফুস, অর্থাৎ "জানালা" কে প্রভাবিত করে। Covid Omicron XBB নির্ণয় করা বেশ কিছু রোগীর শেষ পর্যন্ত জ্বর নেই, ব্যথা নেই বলে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু এক্স-রে ফলাফলে হালকা বুকের নিউমোনিয়া দেখা গেছে। অনুনাসিক সোয়াব পরীক্ষাগুলি প্রায়শই COVID-Omicron XBB-এর জন্য নেতিবাচক ফলাফল প্রদান করে, এবং মিথ্যা নেতিবাচক ফলাফল প্রদান করে নাসোফ্যারিঞ্জিয়াল পরীক্ষার ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মানে হল যে ভাইরাসটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সরাসরি ফুসফুসকে সংক্রামিত করতে পারে, যার ফলে ভাইরাল নিউমোনিয়া হতে পারে যা তীব্র শ্বাসযন্ত্রের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এটি ব্যাখ্যা করে যে কেন কোভিড-ওমিক্রন এক্সবিবি খুব সংক্রামক, খুব মারাত্মক এবং মারাত্মক। অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন, জনাকীর্ণ স্থান এড়িয়ে চলুন, এমনকি খোলা জায়গায় 1.5 মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন, একটি দ্বি-স্তর মাস্ক পরুন, একটি উপযুক্ত মাস্ক ব্যবহার করুন এবং প্রত্যেকের উপসর্গ না থাকলে (কাশি বা হাঁচি না) ঘন ঘন আপনার হাত ধোয়া। কোভিড ওমিক্রন *"ওয়েভ"* কোভিড-১৯ এর প্রথম তরঙ্গের চেয়ে বেশি মারাত্মক। তাই আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে এবং করোনাভাইরাসের সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এছাড়াও আপনার বন্ধু এবং পরিবারের সাথে সতর্ক যোগাযোগ বজায় রাখুন। এই তথ্যটি নিজের কাছে রাখবেন না, যতটা সম্ভব অন্যান্য আত্মীয় এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন, বিশেষ করে আপনার নিজের পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে।"
এই পোস্টটি ফেসবুকে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এই পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
এই পোস্ট হোয়াটস্যাপেও ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমেই ভাইরাল এই পোস্ট সংক্রান্ত একটি কিওয়ার্ড সার্চ করে এবং অল ইন্ডিয়া রেডিওর সংবাদ পরিষেবা বিভাগের ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই যেটি প্রকাশিত হয় ডিসেম্বর ২২, ২০২২ তারিখে। এই প্রতিবেদনে ভাইরাল পোস্টের ইংরেজি সংস্করণকে সরাসরি খারিজ করতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরকে।
এই প্রতিবেদন এখানে দেখা যাবে।
এরপর আমরা কেন্দ্রের স্বাস্থ্য দপ্তরের এক্সের (প্রাক্তন টুইটার) প্রোফাইলে একটি টুইটও খুঁজে পাই যেখানে এই দাবিকে ভুয়ো বলে জানানো হয়। এই পোস্টটি করা হয় ডিসেম্বর ২২, ২০২২ তারিখে।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এছাড়াও আমরা লক্ষ্য করি ভাইরাল মেসেজে উল্লেখ করা এক্সবিবি উপরুপ নিয়ে কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্প্রতি সামনে আসেনি কিন্তু ইতিমধ্যে জেএন ১ নামক উপরুপের বিষয় বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখা যায় সাম্প্রতিককালে।
আমরা এবিষয় সংবাদসংস্থা এএনআইকে দেওয়া ডক্টর সৌম্যা স্বামীনাথনের ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখের একটি বার্তা খুঁজে পাই যেখানে তিনি জানান এই জেএন ১ নামক উপরুপ যে বেশি গুরুতর, তা নিয়ে কোনও নিশ্চিত তথ্য নেই।
স্বামীনাথনের বিবৃতিটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আনন্দবাজার অনলাইনের একটি প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায় এই সাম্প্রতিক উপরুপের জন্য কোনও নতুন ধরণের টীকার প্রয়োজন নেই কিন্তু উপযুক্ত সতর্কতা বজায় রাখা দরকারি বলে জানিয়েছেন করোনাভাইরাস প্যানেলের একজন সদস্য।