জ্বলন্ত গাড়ি এবং দোকানঘরের বেশ কয়েকটি পুরনো ছবি (old images) ভাইরাল করে ভুয়ো দাবি তোলা হচ্ছে যে, এগুলি ত্রিপুরায় সংঘটিত হিংসার (Tripura Violence) দৃশ্য।
উত্তর ত্রিপুরায় হিংসার প্রেক্ষিতে ছবিটি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ২৬ অক্টোবর পানিসাগর মহকুমায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একটি মিছিল থেকে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও একটি মসজিদে হামলার অভিযোগ ওঠে। পানিসাগর মহকুমার পুলিশ অফিসার শৌভিক দে কথাপ্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রকে জানান,পানিসাগরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সাড়ে ৩ হাজার লোকের একটা মিছিল বের করে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কর্মীদের একাংশ চামটিলা এলাকায় একটি মসজিদের উপর হামলা চালায় l পরে তারা ৩টি বাড়ি এবং ৩টি দোকানও লণ্ডভণ্ড করে। প্রথম ঘটনাস্থল থেকে ৮০০ গজ দূরে রোয়া বাজার এলাকায় ২টি দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়।" তিনি আরও বলেন।
পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হতে থাকায়ত্রিপুরা পুলিশ সবসম্প্রদায়কে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানায় এবং ভুয়ো খবর ছড়াতে নিষেধ করে। রাজ্য সরকার স্পর্শকাতর এলাকাগুলোয় ১৪৪ ধারাজারি করে এবং নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে।
ভাইরাল হওয়া ফেসবুকের ৬টি ছবিতে জ্বলন্ত গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং দোকানঘর দেখা যাচ্ছে এবং এমনকি কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া কোরানও তুলে ধরে দেখাচ্ছেন।
হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনের অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, "ত্রিপুরায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত চালানো হচ্ছে, তাদের হত্যা করা হচ্ছে, দোকানপাটেও লুঠতরাজ চলছে l বিজেপি সকলের সঙ্গে থাকার কথা বলে, সকলকে নিয়ে বিকাশের কথা বলে...কিন্তু বজরঙ দল ও সংঘিদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি l ওখানে মুসলমানরা সন্ত্রস্ত, তাদের শিশুরা ক্ষুধার্ত এবং তাদের মসজিদে ঢুকে তাদের ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে l"
ফেসবুক পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
(মূল হিন্দিতে ক্যাপশন: त्रिपुरा में मुसलामानों के घरों में घुसकर तोड़फोड़ किए और मारे गए दुकाने लूटी गई फ़िर आग लगा दिया गया सबका साथ सबका विकास करने वाली भाजपा अभी तक बजरंग दल और संघ के लोगों पर कोई कार्रवाई नहीं की है! वहा के मुसलमान खौफ़ जदा है बच्चे भूखे है हमारी मस्जिद में जाकर कुरान पाक को जलाया जा रहा है!" (সংক্ষেপিত)
আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় হিংসা বলে ছড়াল পুলিশের 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনির পুরনো ভিডিও
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, ভাইরাল হওয়া ছবিগুলির মধ্যে ২টি সাম্প্রতিক এবং ত্রিপুরার হিংসাত্মক ঘটনার প্রতিফলন, কিন্তু বাকি ৪টি ছবি সাম্প্রতিক তো নয়ই, এমনকী ত্রিপুরার ছবিও নয়।
উপরের দুটি ছবি উত্তর ত্রিপুরার হিংসা নিয়ে ২০২১-এর ২৮ অক্টোবর বিবিসি নিউজ ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রকাশিত ছবি।
প্রথম ছবি
এই ছবিতে রাস্তায় জ্বলন্ত গাড়ি এবং পাশে টহলরত পুলিশদের যে দেখা যাচ্ছে, সেটি ২০১৯ সালের, যখন আগরতলায় বাংলাভাষীদের সঙ্গে ত্রিপুরি জনজাতীয়দের দাঙ্গা বেঁধেছিল। ২০১৯-এর ১৩ নভেম্বর এই ছবিটাই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে একটি প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছিল। খবর অনুযায়ী ২০১৯ এর ওই বাঙালি-আদিবাসী দাঙ্গায় অন্তত ২০ জন আহত হন এবং ১৫টি গাড়ি ভস্মীভূত হয়েছিল। সে সময় রাজ্যের একমাত্র জনজাতীয় স্বশাসিত সংস্থা সিমনা-তামাকারির আসনে উপনির্বাচন চলছিল।
দ্বিতীয় ছবি
দুই হাতে কোরানের অর্ধদগ্ধ সংস্করণ তুলে ধরে থাকা দুই ব্যক্তির এই ছবিটিও ২০২১ সালের জুন মাসের। বুম যাচাই করে দেখে এই ছবিটি দিল্লিতে ভস্মীভূত হওয়া রোহিঙ্গাদের একটি শিবিরের ছবি। দেখুন বুমের তথ্য-যাচাই।
তৃতীয় ছবি
চতুর্দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পোড়া এই সব স্টিলের বাসনপত্রের ছবিটি ২০১৮ সালের ৬ মার্চ সিপিআইএম-এর যাচাই করা টুইটার হ্যান্ডেল থেকে টুইট করা হয়। ছবিটি ত্রিপুরার হলেও অনেক পুরনো এবং সিপিএম এটি ২০১৮ সালে ব্যবহার করেছিল বিজেপি-র নির্বাচনী হিংসার নমুনা হিসাবেল
এ বিষয়ে ইন্ডিয়া টুডে-র রিপোর্টটি পড়ে দেখতে পারেন এখানে।
চতুর্থ ছবি
জ্বালিয়ে দেওয়া মোটরসাইকেলের ছবিটি ২০১৬ সালের আগরতলার, যখন আদিবাসী বনাম বাঙালিদের সংঘর্ষ ঘটেছিল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ২০১৬ সালের ৩০ অগস্টের প্রতিবেদনে ওই একই ছবি ছাপা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে লেখা হয়— "২৩ অগস্ট দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার কিছু অংশে হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়েl"
ত্রিপুরায় বর্তমান হিংসার পরিস্থিতি নানা গুজব ও ভুয়ো খবরের জন্ম দিচ্ছে। অনেক বিভ্রান্তিকর বিবরণও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে বুম-এর তথ্য-যাচাই জানতে হলে দেখুন এখানে।
আরও পড়ুন: ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে অসমের ছবি ছড়াল ত্রিপুরা হিংসা বলে