পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলার (Falkata College) ফালাকাটা কলেজের ছাত্রীকে তাঁর সহপাঠীর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার বিচলিতকর ভিডিও মিথ্যে সাম্প্রদায়িক (Communal Claims) দাবি সমতে শেয়ার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এক হিন্দু মেয়েকে এক মুসলমান ছেলে আক্রমণ করে।
স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুম জানতে পারে যে, আক্রান্ত ও আক্রান্তকারী উভয়ই মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে একটি ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন এক ব্যক্তিকে। তিনি তাঁকে 'কাকা' বলে সম্বোধন করছেন। মহিলার গলা ও মুখ থেকে রক্ত বেরতে দেখা যাচ্ছে। তাঁকে বলতে শোনা যায় যে, ব্লেড চালিয়ে (balde attack) দেওয়া হয় তাঁর শরীরে। বেশ কিছু দক্ষিণপন্থী টুইটার হ্যান্ডেল থেকে দাবি করা হয়েছে যে, এটি হল আরও একটি 'লাভ-জিহাদের' ঘটনা।
'জটায়ু-ওএসআইএনটি' নামের এক টুইটার থেকে ভিডিওর টুইটটি করা হয়। সেই সঙ্গে দাবি করা হয় যে, মেয়েটি হিন্দু। "গতকাল দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের ফালাকাটায় ধারাল খুর দিয়ে এক হিন্দু মেয়েকে আক্রমণ করে মহম্মদ ফয়াজ আহমেদ।। আলিপুর দুয়ার কলেজের সামনে ফয়াজ মেয়েটিকে আক্রমণ করে।"
ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে। আর্কাইভ করা আছে এখানে।
(সতর্কতা: ভিডিওটি বিচলিত করার মতো)
ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট ও আক্রান্তকারীর ছবির একটি কোলাজ, যাচাই-করা হ্যান্ডেল থেকে টুইট করা হয়। সঙ্গে ছিল সেই একই লাভ-জিহাদের দাবি। 'ক্রিয়েটলি মিডিয়া' ও অরুণ পুডুর টুইট করেন সেটি।
কোলাজটির ক্যাপশনে পুডুর লেখেন, "পশ্চিমবঙ্গ: মহম্মদ ফয়েজ একটি হিন্দু মেয়েকে ধারালো খুর দিয়ে আক্রমণ করে। কারণ, মেয়েটি তার অসল নাম জানার পর তাকে প্রত্যাখ্যান করে।"
এই দুই হ্যান্ডেলকে বুম আগেও যাচাই করেছিল। এগুলি থেকে মিথ্যে খবর ছড়ানো হয়। পড়ুন এখানে ও এখানে।
ফেসবুকে ভাইরাল
বেশ কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্রিয়েটলি মিডিয়ার পোস্টটি শেয়ার করেন।
তথ্য় যাচাই
বুম গুগুলে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেখে যে, ফালাকাটা কলেজের (Falkata College) ছাত্রীর ওপর ওই আক্রমণের 'দ্য টেলিগ্রাফ' সহ একাধিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ৩০ নভেম্বর, ২০২১ দ্য টেলিগ্রাফ প্রকাশিত খবরে বলা হয়, "আলিপুরদুয়ার জেলায়, দ্বিতীয় বছরের এক কলেজ ছাত্রীকে তাঁর এক সহপাঠী খুর চালিয়ে তাঁকে জখম করেন। কারণ, তিনি তার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে ছিলেন। আলিপুর দুয়ারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পান্ডেকে উদ্ধৃত করে দ্য টেলিগ্রাফে লেখা হয় যে, ছেলেটিকে ফাজাদ্দিন হুসেন বলে শনাক্ত করা হয়। সে কোচবিহারের ঘোকশাডাঙ্গার বাসিন্দা। হুসেন স্বীকার করে যে, মেযেটি তার প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ায়, সে তাকে আক্রমণ করে।
আনন্দবাজার পত্রিকাতেও ওই ঘটনার খবর বেরোয়। কিন্তু ওই ঘটনায় সাম্প্রদায়িকতার ছোঁয়া ছিল, এমনটা বলা হয়নি কোনও রিপোর্টে।
এই সূত্র ধরে বুম ফালাকাটা (Falakata) থানার আইসি সনাতন সিঙ্গা'র সঙ্গে যোগাযোগ করে। উনি বলেন যে, আক্রান্তকারী ও মেয়েটি, দু'জনই মুসলমান এবং ফালাকাটা কলেজে দ্বিতীয় বছরের পড়ুয়া। "ওই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও যোগ নেই। ছেলেটি ও মেয়েটি দু'জনই মুসলমান। মেয়েটির নাম আলিয়ানা খাতুন। তিনি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ফৈজুদ্দিন মহম্মদ মেয়েটিকে আক্রমণ করে। ওই ঘটনার পর, সোশাল মিডিয়ায় যে একটি সাম্প্রদায়িক বার্তা ছড়ানো হচ্ছে, আমরা তা জানি।"
আক্রমণের পর, মেয়েটিকে ফালাটাকা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ও একাধিক সেলাই করা হয় তাঁর ক্ষতস্থানে।
তাছাড়া আলিপুরদুয়ারে ফালাকাটা কলেজের অধ্যক্ষ হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাটার্যের সঙ্গে কথা বলি আমরা। উনিও একই কথা বলেন। "আক্রান্ত ও আক্রান্তকারী, দু'জনেই মুসলমান। আমি সকলকে অনুরোধ করব তাঁরা যেন এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রঙ্ না চড়ান।"
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং: স্বস্তি চট্টোপাধ্যায় )আরও পড়ুন: কলাম্বিয়ার ২০১৮ সালের ভিডিওকে বলা হল নাগাল্যান্ডে নাগরিক নিহত