একটি ভিডিওতে মণিপুরের (Manipur) কুকি সম্প্রদায়ের (Kuki) মানুষদের একটি স্মরণ সভায় তাদের মৃত প্রিয়জনদের শ্রদ্ধাঞ্জলী দিতে দেখা যাচ্ছে। এই মৃত ব্যক্তিরা প্রাণ হারিয়েছে মণিপুরের সংঘর্ষে। এই ভিডিওকে ভুয়ো বিবরণী সহ ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং দাবি করা হচ্ছে কুকিরা এই স্মরণসভায় মেইটেই (Meitei) সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘর্ষের স্লোগান তুলেছে।
বুম নিশ্চিত করতে পেরেছে ভিডিওটিতে অনুবাদ করা বিবরণীগুলি সঠিক নয়। এই ভিডিওতে শুনতে পাওয়া আঞ্চলিক ভাষা পাইতিতে স্লোগান এবং ঘোষণাগুলির মধ্যে কোনো ধরণের উস্কানিমূলক বার্তা নেই মেইটেইদের বিরুদ্ধে ।
মেইটেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের ব্যাপক সংঘর্ষে জর্জরিত গোটা মণিপুর। দুই কুকি মহিলাকে নগ্ন অবস্থায় হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার চাঞ্চল্যকর ভিডিও দেশ জুড়ে এক অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনাটি ৪ মে ২০২৩ তারিখে সালে ঘটে যার ভিডিও ছড়িয়ে পরে ১৯ জুলাই। কুকি সম্প্রদায়ের একটি ব্যক্তির বাঁশের দেয়াল থেকে ঝুলন্ত মাথার ছবি ও ছড়িয়ে পড়েছে এই সংঘর্ষের জেরে। ১৩০ জনের ও বেশি মানুষ এই সংঘর্ষের জেরে প্রাণ হারিয়েছেন।
এই সংঘর্ষের জেরে অসংখ্য ভুয়ো দাবি সহ ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যার মধ্যে থেকে বুম অনেক এরকম ভুয়ো খবরের তথ্য যাচাই করেছে। এই ধরণের কিছু তথ্য যাচাইয়ের প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
এই ভিডিও ফেসবুক এবং টুইটারে বিভিন্ন ক্যাপশন সহ ছড়িয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে কুকি জঙ্গিরা সরাসরি মেইটেইদের গণহত্যার দাবি জানিয়েছে।
এমনই এক ভিডিওর আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এই ভিডিও টুইটারে ও ছড়িয়ে পড়েছে একই দাবি সহ।
এই ভিডিওতে পুরুষদের এবং মহিলাদের কালো পোশাকে হাতে ড্রাম এবং পতাকা নিয়ে কুচকাওয়াজ করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওর শেষের অংশে তাদের সংহতি প্রকাশ করার সময় সামনে অসংখ্য কফিন রাখা হচ্ছে। এমনই একটি ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা আছে, " চীনের কুকি জঙ্গিরা খোলাখুলি হুমকি দিচ্ছে তারা মেইতেই মহিলা এবং বাচ্চাদের নির্যাতন করবে। এটা কি কোনো অপরাধ প্রবণ দেশ যেখানে অসংখ্য জঙ্গিরা সরাসরি ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের এবং মেইতেইদের গণহত্যার ঘোষণা করবে বিদেশি জঙ্গিদের সাহায্যে। ভারতের সেনা এবং সুরক্ষা বাহিনীরা কেন নীরব দর্শকের কাজ করছেন। কে তাদের হাত বেঁধে মুখ বন্ধ করে রেখেছে।"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে চূড়াচাঁদপুরে কুকিদের জু-সম্প্রদায় দ্বারা স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছিল সংঘর্ষে হারানো প্রাণগুলির জন্য। যেখানে স্মৃতিচারণের জন্য মৃত ব্যক্তিদের ছবিসহ "ওয়াল অফ রিমেমব্রেন্স" তৈরী করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে আমরা বেল্লাট্রিক্স রোসি নামক টুইটার ব্যবহারকারীর বিভিন্ন টুইটের উত্তর খুঁজে পেয়েছি যেখানে সে দাবি করেছে বিবরণীগুলির সাথে ভিডিওতে শুনতে পাওয়া কথার কোনো সম্পর্ক নেই।
আমরা পাইতে উপভাষায় সাবলীল দুজন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেছিলাম ভিডিওতে শুনতে পাওয়া কথাগুলির সঠিক ব্যাখ্যা জানার জন্য। তারা বলেন, ভাইরাল ভিডিওটিতে মেইটেইদের বিরুদ্ধে কোনো গণহত্যার দাবি জানানো হয়নি। ভিডিওটিতে মানুষদের লাইন করে দাঁড়িয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর কথা বলা হচ্ছে।
আমরা কুকি জু এর একজন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেছি যিনি নিরাপত্তা জনিত কারণের জন্য নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তিনি জানিয়েছেন, "ভিডিওটিতে পাইতেই উপভাষায় ঘোষণ করা হয়েছিল।" পাইতেই একটি উপভাষা যা মনিপুরের কুকি-জু মানুষরা ব্যবহার করেন। এর পাশাপাশি তিনি বুমকে পুরো ভিডিওটির প্রতিলিপি পাঠান যেখানে কোথাও মেইটেইদের বিরুদ্ধে গণহত্যার দাবি করা হয়নি।
আমরা যোগাযোগ করতে পেরেছি আরেক কুকি কলেজ শিক্ষকের সাথে যিনি উত্তর ভারতে থাকেন এবং তিনিও আমাদের একই কথা জানান। তিনি বুমকে জানান,"এই অনুবাদটি সঠিক নয় এবং বিবরণীগুলিতে বাক্যের সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি। যে এই ভিডিওটিতে বিবরণী বসিয়েছে, সে নিজের ইচ্ছে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী লেখা গুলো বসিয়ে দিয়েছে যার সাথে ভিডিওর কোনো মিল নেই। এই ভিডিওতে ঘোষণাকারী পথপ্রদর্শকের কাজ করছিলেন এবং সে মানুষকে এগোনোর অথবা লাইনে দাঁড়ানোর আর্জি জানাচ্ছিলেন। উনি কার্যক্রমের তালিকাও ঘোষণা করছিলেন এবং লমকার তরুণদের আগে আসার অনুরোধও করছিলেন।" এখানে লমকার অর্থ হলো চূড়াচাঁদপুরের একটি অঞ্চল যেখানে এই অনুষ্ঠানটি চলছিল।
বুমকে তিনি আরও জানান ভিডিওর পটভূমিতে শোনা যাওয়া গানের কথাগুলোতে গণহত্যার কোনো উল্লেখ নেই। উনি জানান, "এই গান মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছে শক্তভাবে জমিদের বিষয়ে পাশে দাড়াতে। এখানে কোনও ধরনের হত্যার, ধাওয়া করার অথবা উসকানিমূলক বার্তার উল্লেখ নেই।"
বুম নিশ্চিত করতে পেরেছে যে অনুষ্ঠানটি "ওয়াল অফ রিমেমব্রেন্স " এর একটি অংশ যা কুকি-জু সম্প্রদায়ের মানুষদের দ্বারা আয়োজন করা হয়েছিল শহীদ মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। পড়ুন এখানে।