রাজস্থানে (Rajasthan) একটি শিশুর গলা কেটে (Throat slit) দেওয়ায় রক্তে ভেসে যাওয়ার এক বীভৎস ভিডিও এই মিথ্যে দাবি সমেত সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে যে সেটি একটি শিশু অপহরণের (Child Kidnapping) ঘটনা। ভিডিওটিতে একটি বাচ্চার উপর আক্রমণের ছবি দেখা যাচ্ছে। প্রথমে বাচ্চাটি তার আক্রমণকারীকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তার পর মুহূর্তেই তাকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কাতরাতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে রক্তে ভেসে যায় চারপাশ। আর আসেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন তাকে তার আক্রমণকারীর থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়।
ভিডিওটিতে আরও কিছু নস্যাৎ-করা ক্লিপের সঙ্গে শেয়ার করে গুজব ছড়ান হচ্ছে যে ছেলেধরারা ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। ভাইরাল ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করার জন্য সেটি বুমের হেল্পলাইন ও টিপলাইনে আসে।
ছেলেধরা সংক্রান্ত গুজব (Child Lifter Rumour) প্রথম ছড়ায় তিন বছর আগে। হোয়াটসঅ্যাপে (WhatsApp) প্রচার করে দেওয়া হয় যে, ছেলেধরার দল অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ২০১৭-র আগেই, বুম বেশ কিছু ভিডিও ও ছবি নস্যাৎ করে, যেগুলি ছেলেধরাদের আনাগোনা সম্পর্কে গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। সে সম্পর্কে
এখানে পড়ুন। ২০১৮ আর ২০১৯-এও বুম সেই ধরনের কিছু গুজব খণ্ডন করে।
এখানে ও
এখানে দেখুন।
বুম দেখে ২১ বছরের একটি লোক তার এক কাজিন বা ভাইকে আক্রমণ করছে ওই ভিডিওটিতে। এ মাসের শুরুতে ঘটনাটি ঘটে।
ভিডিওটি বীভৎস বলে আমরা সেটি এখানে দিইনি। সেটি থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশট দেওয়া হল নীচে।
রাজস্থানের দন্তারামগড় তেহসিলের করদ গ্রামের ভিডিও
ভিডিওটির কয়েকটি প্রধান ফ্রেম দিয়ে আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তার ফলে, আমরা 'দৈনিক ভাস্কর' (Dainik Bhaskar)-এ প্রকাশিত একটি লেখা দেখতে পাই। তাতে ওই ভিডিওটি থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশট ছিল। লেখাটিতে বলা হয় যে, রাজস্থানের দন্তারামগড় (Dantaramgarh) তেহসিলের করদ গ্রামে প্রতিশোধ নেওয়ার মনোবৃত্তি থেকে একটি বাচ্চার গলায় খুর চালিয়ে দেয় তার এক কাজিন।
দৈনিক ভাস্করের প্রতিবেদনে বলা হয়, খুর চালিয়ে ২১ বছর বয়সী কৈলাশচাঁদ রগের তার ১০ বছরের কাজিন উত্তম রগেরকে খুন করে।
অস্বস্তিকর ছবি
আক্রমণকারীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার আগের মুহূর্তে ভিডিওটি তোলা হয়। দন্তারামগড় পুলিশের কথা অনুযায়ী, আততায়ী মানসিক ভারসাম্যহীন। একটি পারিবারিক ঝগড়াকে কেন্দ্র করে, সে তার কাজিন কে খুন করে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা দন্তারামগড় থানার ইনস্পেক্টর হিম্মত সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, "যে খুন হয়েছে এবং তার আততায়ী পরস্পরের আত্মীয়। ঘটনাটির এক ঘন্টা আগেও বাচ্চাটি স্কুল থেকে ফিরলে তারা করদ গ্রামের বাজার এলাকায় খেলছিল। স্থানীয় গ্রামবাসীর কথা অনুযায়ী, কৈলাশচাঁদের মানসিক অসুখ আছে। সে তার ১০ বছর বয়সী কাজিনকে হিংসে করত। তার মনোরোগের জন্য সে ওষুধও খেত।"
খুনের পরে যে ভাইরাল ক্লিপটি প্রকাশ পেয়েছে, তাতে অভিযুক্তের চোখেমুখে কোনও অনুশোচনার ছাপ লক্ষ করা যায়নি। সে বলে, "পাঁচ ক্লাস পর্যন্ত আমি পড়াশোনায় খুব খারাপ ছিলাম। আমি জানতাম আমি কোনও চাকরি পাব না। তারপর আমি বালাজি ভগবানের ওপর বিশ্বাস রাখতে শুরু করলাম। সেই থেকে ক্রমশ আমার বুদ্ধি খুলল। বারো ক্লাসে আমি দ্বিতীয় হলাম।" ওই ভিডিওটির সঙ্গে শিশু অপহরণের গুজবটা উড়িয়ে দেন হিম্মত সিংহ।