রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের (Ram Nath Kovind) মেয়ে স্বাতী কোবিন্দকে নিয়ে একটি খবর হোয়াটসঅ্যাপ ও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে যে, টাটারা (Tata) নাকি নীরবে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ান-সেবিকার ডিউটি থেকে তাঁকে সংস্থার দফতরির ভূমির কাজে বদলি করে দিয়েছেন।
খবরটি বিভ্রান্তিকর, কেননা ২০১৭ সালেই রিপোর্ট হয়েছিল যে নিরাপত্তার কারণেই স্বাতী কোবিন্দকে উড়ানে ডিউটি না দিয়ে ভূমির ডিউটিতে বদলি করা হয়েছে। এবং সেটা এ বছর টাটা কোম্পানি এয়ার ইন্ডিয়ার দায়িত্ব নেওয়ার অনেক আগের ঘটনা।
ভাইরাল হওয়া বার্তাটি এই রকম, "তাঁর নাম স্বাতী। তিনি দেশের এক নম্বর উড়ান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান-সেবিকা ছিলেন। গত বেশ কয়েক বছর ধরে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং-৭৭৭ এবং বোয়িং-৭৮৭-এর বিমানসেবিকা রূপে তিনি অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার মতো দূর-দূর দেশে পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার এই নারীর পুরো নাম স্বাতী কোবিন্দ। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন— তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কন্যা। এত দিন পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষও সেটা জানত না। রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ কিংবা তাঁর কন্যা স্বাতী, কেউই এটা খোলসা করে বলেননি। তাই এত কাল ব্যাপারটা গোপনই ছিল। কিন্তু এখন এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা টাটাদের কাছে হস্তান্তরিত হওয়ার পর ব্যাপারটা আর গোপন নেই। টাটা কর্তৃপক্ষ বিষয়টা জানতে পেরেই সম্ভবতঃ স্বাতীর নিজের নিরাপত্তার স্বার্থেই (যেহেতু তিনি দেশের রাষ্ট্রপতির কন্যা)তাঁকে সম্মানের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকির অফিসের কাজে বদলি করে দিয়েছেন। তাঁর কন্যার চরিত্রে এই ধরনের বিরল গুণাবলীর সম্মিলন ঘটানোয় রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায়!"
হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে বার্তাটি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে।
এধরনের একটি পোস্ট দেখতে এখানে করতে পারেন।
আরও পড়ুন: না, জেএনইউ-তে রাম নবমীর সংঘর্ষে আহত আইসা সদস্যাদের আঘাত সাজানো নয়
তথ্য যাচাই
বুম 'স্বাতী কোবিন্দ' এবং 'এয়ার ইন্ডিয়া' এই শব্দ দুটি বসিয়ে খোঁজ লাগিয়ে ২০১৭ সালের বেশ কয়েকটি সংবাদ-প্রতিবেদন পেয়েছে। তাতেই বলা হয়েছিল, নিরাপত্তার স্বার্থেই স্বাতীকে বিমানের ডিউটি থেকে সরিয়ে ভূমির অফিসের কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। ২০১৭ সালেরই ২৫ জুলাই রামনাথ কোবিন্দ ভারতের চতুর্দশ রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন।
২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে লেখা হয়েছিল, "নিজের পদবি ব্যবহার না-করা স্বাতী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং-৭৭৭ এবং বোয়িং-৭৮৭-এর মতো দূর পাল্লার উড়ানগুলিতে বিমান-সেবিকার ডিউটি করতেন। কিন্তু বিগত এক মাস হলো তাঁকে সংস্থার সদর-দফতরের ডিউটিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এই দফতরটি ২০০৭ সাল থেকে অর্থাত্ এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স-এর মিলনের পর থেকেই বিভাগীয় সংহতি গড়ে তোলার কাজ করছে।"
বিমানসংস্থার একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, "আমার মনে হয় না, রাষ্ট্রপতির কন্যা হয়ে তাঁর পক্ষে বিমানে ডিউটি করা সমীচীন, কেননা তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যতজন রক্ষী লাগবে, তাদের সকলের জন্য যাত্রীদের উড়ানের আসন ফাঁকা করে রাখা সম্ভব নয়।"
সে সময় এনডিটিভি এবং এবিপি নিউজ-এও একই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
এখন এই মুহূর্তে স্বাতী এয়ার ইন্ডিয়ার ঠিক কোন পদে কী কাজ করেন, সেটা স্পষ্ট নয়। বিমানসংস্থার মুখপাত্রকে এ সম্পর্কে বুম জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
স্বাতীর এই নিয়োগ-বদলির সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা বদলেরও কোনও সম্পর্ক নেই। কেননা এয়ার ইন্ডিয়া টাটাদের কাছে হস্তান্তরিত হয় ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে। আর সরকারিভাবে টাটা গোষ্ঠী এয়ার ইন্ডিয়ার পরিচালনা ও মালিকানা অধিগ্রহণ করে এ বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে।
আরও পড়ুন: তেলেঙ্গানায় তোলা হুমকি ভিডিও ছড়াল রাজস্থানের করৌলির ঘটনা বলে