সম্প্রতি টিভি৯ বাংলা, কলকাতা টিভি, উত্তরবঙ্গ সংবাদ-সহ বেশ কিছু বাংলা সংবাদমাধ্যম তাদের প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করে বাংলাদেশে (Bangladesh) হিন্দু ব্যবসায়ী (Hindu Businessman) লালচাঁদ সোহাগকে রাস্তায় প্রকাশ্যে থেঁতলে খুন করা হয়েছে।
বুম যাচাই করে দেখে, খুন হওয়া সেই ব্যবসায়ী লালচাঁদ সোহাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বী নন। বুম বাংলাদেশকে সেখানকার পুলিশ সোহাগ একজন মুসলিম পরিবারের সদস্য বলে নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (মিটফোর্ড) তিন নম্বর গেটের কাছে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগকে। সময় নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, খুনের পর ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশ অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান মহিনকে হেফাজতে নেয় এবং প্রাথমিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সাথে জড়িত তারেক রহমান রবিনকেও গ্রেফতার করে। ঘটনার পর হত্যাকাণ্ডের সেই ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয় জনমানসে।
বাংলা সংবাদমাধ্যমের দাবি
টিভি৯ বাংলা সোহাগের মৃত্যুসংক্রান্ত প্রতিবেদনের শিরোনাম দেয়, "নৃশংসতার সব সীমা পার, বাংলাদেশে পিটিয়ে-থেঁতলে খুন হিন্দু ব্যবসায়ীকে, মৃতদেহের উপরে নাচল খুনিরা"।
১৪ জুলাই প্রকাশিত উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকার রিপোর্টে লেখা হয়, "বাংলাদেশে যেন মাৎস্যন্যায় চলছে। কোনও সভ্য সরকার আছে বলে মনেই হচ্ছে না ! ঢাকার ব্যস্ত সড়কে পাথর দিয়ে থেঁতলে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে খুন করার ঘটনায় সেখানে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। নিহত ব্যক্তির নাম লালচাঁদ সোহাগ। বুধবার তাঁকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। ঘটনায় আঙুল উঠেছে বিএনপির যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের দিকে। হত্যাকাণ্ডে যুক্ত সন্দেহে এখনও পর্যন্ত দুই সশস্ত্র ব্যক্তি সহ মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।"
একই দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে কলকাতা টিভিও।
কী পেলাম আমরা অনুসন্ধানে: বাংলাদেশে খুন হওয়া ব্যবসায়ী একজন মুসলিম
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট: হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর নিহত ব্যবসায়ী সোহাগের পরিবারের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। সোহাগের স্বজন হিসেবে ওই প্রতিবেদনে স্ত্রী লাকি বেগম, বাবা আইউব আলী, মা আলেয়া বেগমের নাম উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোহাগের মরদেহ গত ১১ জুলাই সকালে ঢাকা থেকে বরগুনায় নিয়ে আসেন স্বজনেরা। সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে মায়ের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
হিন্দু হওয়ার দাবি খণ্ডন বাংলাদেশ পুলিশের: বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বুম বাংলাদেশ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসির (মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস) সাথে যোগাযোগ করে। হিন্দু হওয়ার দাবিটি খণ্ডন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি জানান, "সোহাগকে কবরস্থ করা হয়েছে। তার বাবাব নাম (মৃত আইউব আলী) ও তার স্ত্রীর নাম লাকি বেগম"। মৃত ব্যবসায়ী একজন মুসলিম ছিলেন এবিষয়ে স্পষ্ট করে বাংলাদেশের সিএ প্রেস উইং পোস্টও করে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং: তৌসিফ আকবর, বুম বাংলাদেশ)