সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মালায়ালাম সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন যেখানে শিক্ষার্থীদের ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (NEET) নম্বর দেখা যায় ভুয়ো সাম্প্রদায়িক (Communal) দাবিসহ ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলিতে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে মুসলমান (Muslim) নিট পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র ফাঁসে (Question Paper Leak) কাণ্ডের প্রধান সুবিধাভোগী।
বুম দেখে নিট প্রশ্নপত্র ফাঁসের ফলে প্রধান উপকৃত মুসলমান পড়ুয়ারা দাবিটি ভিত্তিহীন। আমরা যাচাই করে দেখি বিজ্ঞাপনটি কেরলের একটি কোচিং সংস্থার দেওয়া এবং প্রতিষ্ঠানটির সাথে যোগাযোগ করলে তারা স্পষ্ট করে জানায় নিট প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে বিজ্ঞাপনটির কোনও সম্পর্ক নেই এবং বিজ্ঞাপনে দৃশ্যমান ব্যাচে অন্যান্য ধর্মের শিক্ষার্থীও ছিল।
সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) বর্তমানে ৫ মে ২০২৪-এর স্নাতকস্তরের নিট পরীক্ষায় অভিযুক্ত নিয়মলঙ্ঘনগুলির তদন্ত করছে। নিট পরীক্ষা স্নাতকস্তরের ডাক্তারি শিক্ষায় ভর্তির জন্য ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ) দ্বারা আয়োজিত দেশব্যাপী প্রবেশিকা পরীক্ষা। তদন্তকারী সংস্থা এই মামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে যার ফলে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এনটিএর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে রয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ এবং দেরি করে পরীক্ষা শুরুর কারণে ছয়টি কেন্দ্রের এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেস নম্বর দেওয়া নিয়ে বিতর্ক, যা আদালতের আদেশ অনুযায়ী বাতিল করা হয়।
বেশ কয়েকজন ডানপন্থী সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী প্রশ্নপত্র ফাঁসকে কোনও প্রমাণ ছাড়াই সাম্প্রদায়িক রঙ দিয়ে পোস্ট করেছেন।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল পোস্টটি শেয়ার করে ক্যাপশন হিসাবে লিখেছেন, "NEET পরীক্ষায় বেনিয়মে সুবিধা ভোগীদের ছবি সহ তালিকা। “সরকার চাহে কিৎনা ভি উনকা হো,মগর সিস্টেম হামারাহি রহেগা।"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন এবং আর্কাইভ দেখুন এখানে।
বুম তার হোয়াটসঅ্যাপ টিপলাইন নম্বরে (7700906588) দাবিটি যাচাই করার অনুরোধ সহ একই ছবি পায়।
ফ্যাক্ট চেক
বুম দেখে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের সঙ্গে ছড়ানো সাম্প্রদায়িক দাবিগুলি অসত্য।
আমরা বিজ্ঞাপনটিতে দৃশ্যমান ফাতিমা ওয়াফা নামক এক ছাত্রীর নাম ব্যবহার করে ইনস্টাগ্রামে কিওয়ার্ড সার্চ করি এবং কেরলের একটি কোচিং প্রতিষ্ঠান, ইউনিভার্সাল ইনস্টিটিউট কোট্টাক্কলের ৭ জুন ২০২৪ তারিখের একটি অভিনন্দনমূলক পোস্ট দেখতে পাই।
পোস্টটি দেখুন এখানে।
পোস্টটি নিট ২০২৪ পরীক্ষায় ওয়াফার পাওয়া ৬৭০ নম্বরের উল্লেখ করে যা ভাইরাল সংবাদপত্রের ছবিটিতে তার ছবির উপরের দৃশ্যমান নম্বরের সাথে মিলে যায়।
এরপর আমরা কোচিং প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে নিট ২০২৪ পরীক্ষায় শীর্ষ নম্বর প্রাপ্তকারী পরীক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানানোর একই বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। নীচে ভাইরাল সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের সঙ্গে ওয়েবসাইটের পোস্টের একটি তুলনা দেখা যাবে।
আমরা ওই বিজ্ঞাপনে বেশ কয়েকটি হিন্দু নামও দেখতে পাই যা সংবাদপত্রের ছবিটি অস্পষ্ট হওয়ার কারণে ভাইরাল পোস্টগুলিতে স্পষ্টভাবে দেখা যায় না। এরথেকে বোঝা যায় বিজ্ঞাপনটিতে কেবল মুসলিম নিট পরীক্ষার্থীরাই নয়, অন্যান্য ধর্মের পরীক্ষার্থীদেরও নাম ও ছবি রয়েছে।
বুম ইউনিভার্সাল ইনস্টিটিউট কোট্টাক্কলের একাডেমিক ডিরেক্টর ডঃ আব্দুল হামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হামিদ জানান বিজ্ঞাপনটি ওই কোচিং প্রতিষ্ঠানেরই তৈরি করা এবং সেটি একটি স্থানীয় মালায়ালাম পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
বুমকে হামিদ বলেন, "বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন ধর্মের শিক্ষার্থীদের দেখা যায়। পোস্টারে দৃশ্যমান সমস্ত শিক্ষার্থী প্রকৃত নম্বর অর্জন করেছে এবং তাদের মধ্যে কেউই নিট প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত নয়।"