‘ইন্ডিয়া টুডে’ (India Today) গোষ্ঠীর সংবাদ মাধ্যম আজতক (AajTak) এবং আজতক বাংলা (AajTak Bangla) গণমাধ্যমে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের (Imran Khan) কৃত্রিমভাবে (AI Generated) তৈরি দুটি ছবি প্রচার করে ভুয়ো (false claim) দাবি জানিয়েছে যে, ছবিগুলি একটি পাকিস্তানের (Pakistan) এক আদালতের রায়ে গ্রেফতার হওয়ার পর তোলা কারাবন্দি (jail) ইমরানের ছবি।
বুম যাচাই করে দেখে ইমরান খানের ছবিগুলো কারাগারে তোলা নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি।
একদা আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানি ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব করা ইমরান খানকে গত ৯ মে ২০২৩ ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সামনে দুর্নীতির দায়ে আধা-সামরিক বাহিনী গ্রেফতার করে। তার পরেই ইমরানের দল ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’-এর সমর্থকরা দেশ জুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে নামে এবং অনেক শহরেই হিংসাত্মক হাঙ্গামা বেধে যায় বলে রয়টর্সের খবরে জানা যায়। পরে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট জামিন দেয় ইমরানকে।
আজতক বাংলা এই ছবি সহ দুটি প্রকাশ করে এক প্রতিবেদনে শিরোনাম দেয়—“ইমরান খান গ্রেফতার! পাকিস্তান জ্বলছে! জেলের ভিতর কেমন আছেন ইমরান? দেখুন সেই ছবি”
প্রতিবেদনটিতে ছবি দুটি প্রকাশ করে যেন মনে হয় কারাগারে বন্দি ইমরানের ছবি।
হিন্দি গণমাধ্যম আজতকেও এই দুটি ছবি একটি তাদের সংবাদ বুলেটিনে ব্যবহার করে দাবি করে, সেটি জেল অভ্যন্তরে থাকা ইমরানের ছবি।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
এই সংবাদ বুলেটিনটি ফেসবুকে আজতকের যাচাই করা পেজেও শেয়ার করা হয়। বুলেটিনটি নিচে দেখুন।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমেই সমাজ-মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে খতিয়ে দেখেছে, এই দুটি ছবি ব্যবহৃত হলেই তাতে ‘মিডজার্নি’-র জলছাপ দেওয়া রয়েছে।
এরকম একটি পোস্ট আর্কাইভ করা আছে এখানে।
‘মিডজার্নি’ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি সহ ওয়েবসাইট যেটির সাহায্যে অতি বাস্তববাদী ছবি তৈরি করে ফেলা যায় খুব সহজে।
তা ছাড়া, আমরা আজতক বাংলায় প্রকাশিত ছবিদুটি খুব মন দিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করি এবং বুঝতে পারি, এগুলি সত্যিকারের ছবি নয়। কৃত্রিমভাবে বানানো ছবিতে যে ধরনের অসামঞ্জস্য থাকে, এই ছবি দুটিতেও তা রয়েছে।
ইমরান খানের পায়ে ৭ টি আঙুল!
আজতক বাংলা প্রচারিত ছবিদুটির একটিতে দেখা যাচ্ছে, ইমরানের একটি পায়ে ৭টি আঙুল! পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়কের কি এক পায়ে ৭টা আঙুল ছিল?
আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরি ছবির সঙ্গে আসল তুলনা করে দেখি। নীচে আপনারাও সেই তুলনা দেখতে পারেন।
আমরা এও লক্ষ করি যে, অন্য যে ছবিটি সমাজ-মাধ্যমে ঘুরছে, সেটি একটি কাটছাঁট করা ফোটো যাতে ‘মিডজার্নি’ কথাটি জলছাপ হিসাবে রয়েছে।
দ্বিতীয় ছবিটিতেও অনেক বৈসাদৃশ্য রয়েছে, যেমনটা নাকি কৃত্রিমভাবে বানানো ফোটোতে সাধারণত থাকে।
দুই হাতের মাঝখানে কোনও ফাঁক নেই
এই ছবিটিতে জুম করে কাছ থেকে দেখলে মনে যাচ্ছে, যেন ইমরান খানের দুটো হাত মিশে যাচ্ছে। দুটি ছবির দৃশ্যের তুলনা করলেও সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। নীচে সেই তুলনাও দেওয়া হলো।
এর আগেও বুম ‘মিডজার্নি’তে তৈরি এই ধরনের বেশ কিছু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরি ভুয়ো ছবির পর্দাফাঁস করেছে। এই সফটওয়্যারটির একটা সমস্যাই হলো, মানবশরীরের, বিশেষত হাত ও পায়ের আঙুলের সঠিক ভাবে গড়তে পারে না।
এ বছরেরই এপ্রিল মাসে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আদালতে আত্মসমর্পণ করে গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর যে ছবি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহার করে সোশাল মিডিয়ায় ছড়ায়, বুম তারও পর্দাফাঁস করে। সেই প্রতিবেদন পড়ে নিতে পারেন এখানে।