মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) চোপড়া (Chopda) শহরের ২০১৮ সালের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে এক মুসলমান ব্যক্তিকে এক জন পুলিশ কনস্টেবলকে হুমকি দিতে দেখা যাচ্ছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে সোশল মিডিয়ায় ছড়িয়ে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটি দিল্লিতে সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হওয়া জাহাঙ্গিরপুরী (Jahangirpuri Violence) এলাকার ঘটনা।
২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল জাহাঙ্গিরপুরী অঞ্চলে হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রা ঘিরে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এই ঘটনার পর ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, এই ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ২০ জনের বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওতে উর্দি পরা এক পুলিশকর্মীর সঙ্গে এক মুসলমান ব্যক্তিকে ঝগড়া করতে দেখা যাচ্ছে। ওই মুসলমান ব্যক্তি পুলিশকর্মীকে বলেন, "যখন আপনি উর্দি পরে থাকবেন না, তখন আমার সঙ্গে দেখা করুন।" বুম অনুসন্ধান করে দেখল যে, ভিডিওটি ২০১৮ সালের, তাতে মহারাষ্ট্রের জলগাঁও জেলার চোপড়া শহরের ঘটনা দেখা যাচ্ছে। সুদর্শন টিভির সাংবাদিক সন্তোষ চৌহান ভিডিওটি টূইট করেন এবং সঙ্গে হিন্দিতে লেখা যে ক্যাপশন দেন তার অনুবাদ, "উর্দি খুলে আমার সঙ্গে দেখা করো …পরিস্থিতি এ রকম জায়গায় চলে গেছে…#দিল্লি দাঙ্গা#জাহাঙ্গিরপুরী।"
(মূল হিন্দিতে লেখা: मुझसे वर्दी उतार के मिल ले... हालात यहां तक पहुँच चुके हैं... #DelhiRiots #जहांगीरपुरी)
পোস্টটি দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে।
ঘটনাচক্রে সুদর্শন টিভি এই একই ভিডিও ২০২১ সালেও টুইট করেছিল এবং ওই মুসলমান ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেই সময় মহারাষ্ট্র পুলিশকে ট্যাগ করেছিল।
ভিডিওটি দিল্লির সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত হ্যাশট্যাগ দিয়ে শেয়ার করা হয়েছে। ফেসবুকেও ভিডিওটি সাম্প্রতিক বলে দাবি করে নতুন করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
পোস্টটি দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে।
ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে।
আরও পড়ুন: পুরনো ছবি ছড়িয়ে মিথ্যে দাবি করৌলি দাঙ্গার শিকার দাঙ্গাকারী নিজেই
তথ্য যাচাই
ভিডিওতে যাঁরা পুলিশের সঙ্গে তর্ক করছেন, তাঁদের মধ্যে এক জনকে মারাঠি ভাষায় কথা বলতে শোনা যায়। তা ছাড়া ভিডিওতে যে সব সাইনবোর্ড দেখা গেছে, সেগুলিতেও মারাঠী লেখা। তাতে বোঝা যায় যে, ভিডিওটি মহারাষ্ট্রের, দিল্লির নয়।
পুলিশ কনস্টেবলের জামার বাঁ দিকের হাতায় মহারাষ্ট্র পুলিশের প্রতীক দেখা যাচ্ছে। নীচের ছবি দুটির তুলনা করা হল।
ভিডিওটির স্থান দেখা যাচ্ছে চোপড়া বাস স্ট্যান্ড, জলগাঁও, মহারাষ্ট্র
হিন্দিতে "वर्दी उतार कर मिल ले" শব্দগুলি দিয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে ফেসবুকে একই ভিডিওর একটি দীর্ঘ সংস্করণ সমেত একটি পোস্ট দেখতে পাওয়া যায়, যেটি ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আপলোড করা হয়েছিল।
ভিডিওটির ক্যাপশন লেখা হয়, "ধুলে মহারাষ্ট্র…।"
এই ভিডিওটির পোস্টের উত্তরে যে সব মন্তব্য এসেছিল, সেগুলি দেখতে গিয়ে আমরা কেদার ধাঙ্গর নামে এক ব্যক্তির একটি মন্তব্য দেখতে পাই, যেটি ২০২১ সালের ৯ মার্চ করা হয়েছিল। ধাঙ্গর তাঁর মন্তব্যে জানান যে, ঘটনাটি মহারাষ্ট্রের চোপড়া বাসস্ট্যান্ডে ঘটে। ধাঙ্গর জানান যে, ওই পুলিশকর্মী এক ফলবিক্রেতাকে মারধর করেন, তার ফলেই ঝগড়া বেঁধে যায়।
আমরা কেদার ধাঙ্গরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিশ্চিত ভাবে জানান যে, ঘটনাটি ২০১৮ সালের এবং তা মহারাষ্ট্রে ঘটেছিল। ধাঙ্গর বুমকে জানান যে, যখন ঘটনাটি ঘটে, তিনি তখন চোপড়া বাস স্ট্যান্ডে উপস্থিত ছিলেন।
ধাঙ্গার বলেন, "আমি তখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ি। কলেজের পরীক্ষা দিয়ে ওই সময় আমি ফিরছিলাম। তখন প্রথমে আমরা দেখি যে, এক পুলিশকর্মী এক অল্পবয়সি ফলবিক্রেতার সঙ্গে ঝগড়া করছেন এবং তাঁকে তাঁর স্টল সরানোর জন্য ধাক্কা দিচ্ছেন। ওই স্টলটির কারণে রাস্তায় গাড়ি চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরে ওই ফলবিক্রেতা আরও দু'জন বয়স্ক ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। পুলিশ ফলবিক্রেতাকে মারধর করায় ওই দু'জন খুব রেগে ছিলেন।" ধাঙ্গর আরও জানান যে, বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের ঝগড়া চলার পর চোপড়া বাসস্ট্যান্ডের ইনচার্জ সোনাওয়ানে তাঁদের ঝগড়া থামান। ধাঙ্গর বলেন, "ভিডিওটি দিল্লির নয়। এটি চোপড়ার, যেখানে আমি থাকি। আমি রোজ ওই একই জায়গা থেকে বাস ধরি এবং সে দিন ঘটনাটি আমার সামনে ঘটেছিল।"
এ ছাড়াও আমরা জানতে পারি যে, ওই পুলিশকর্মীর নাম শ্রীকান্ত গাঙ্গুরডে। তিনি এখন চোপড়ার সাব-ডিভিশনাল পোস্ট অফিসের পুলিশ নায়েক হিসাবে কর্মরত। আমরা গাঙ্গুরডের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে, ভিডিওতে তাঁকেই দেখে যাচ্ছে, এবং ঘটনাটি ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঘটে। গাঙ্গুরডে জানান, "তারিখটা আমার সঠিক ভাবে মনে আছে। আমি তখন এক জন কনস্টেবল হিসাবে চোপড়া থানায় বহাল ছিলাম। সে দিন চোপড়া বাসস্ট্যান্ডে আমার ডিউটি ছিল, সেখানেই ঘটনাটি ঘটে।"
ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি বলেন, "এক যুবক বাস ঢোকা বেরোনোর মুখে একটি টেম্পো রেখে আপেল বিক্রি করছিল। তার ওই স্টল ওখানে লাগানোয় ট্রাফিক চলাচলে এবং বাস ঢোকা-বেরোনোয় সমস্যা হচ্ছিল। তাই আমি ওকে গাড়িটা সরাতে বলি। অনেক বার সাবধান করার পরও সে গাড়িটা সরায়নি। তার পরই আমাদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। কিছু ক্ষণ পরে ওই যুবক তাঁর বাবা এবং দাদুকে ডেকে আনে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তাঁদের সঙ্গেই আমার ঝগড়া হতে দেখা যাচ্ছে। বাবা অভিযোগ করেন যে, আমি নাকি তাঁর ছেলেকে (ফল বিক্রেতা) মেরেছি এবং তিনি আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। তখনই রাগের মাথায় ওই ব্যক্তি মন্তব্য করেন যে, যখন আমি উর্দি পরে থাকবো না তখন যেন তাঁর সঙ্গে দেখা করি।" গাঙ্গুরডে আরও জানান যে, ঘটনাটি ঘটার পর ভিডিওটি ভাইরাল হয়। ওই দুই ব্যক্তির নামে কেসও করা হয়। তিনি বলেন, "যে ব্যক্তি আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন, তাঁর নাম নঈম বাগোয়ান এবং বয়স্ক ব্যক্তির নাম রহিম বাগোয়ান। সরকারি কর্মচারীকে কর্তব্যরত অবস্থায় হুমকি দেওয়ার জন্য আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করি।"আরও পড়ুন: ভুয়ো দাবি: ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বিশ্বের সেরা জাতীয় সঙ্গীত ঘোষণা করল ইউনেস্কো