কর্নাটকে (Karnataka) কৃষকরা তাঁদের উৎপন্ন টমাটো ফেলে দিচ্ছেন, এশিয়ানেট মালায়লমের এমনই এক পুরনো নিউজ বুলেটিন ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ফের ভাইরাল হল। ভিডিওটির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘটনাকে ভুয়ো ভাবে জড়িয়ে দেওয়া হল।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সাথে দাবি করা হয়েছে যে, এক বছর ধরে প্রতিবাদ চলার পর প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেছেন— এরপর কৃষকরা সেই আইনের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে পারবেন। সে দিন দূরদর্শনে সম্প্রচারিত এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, কৃষকদের একাংশকে তাঁরা এই নতুন কৃষি আইনের উপযোগিতার কথা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাই সরকার এই আইনগুলি প্রত্যাহার করে নিল।
বিরোধী দলগুলির প্রতিবাদের মধ্যেই ২৯ নভেম্বর সংসদের উভয় কক্ষে কোনও আলোচনা ব্যতিরেখেই কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল পাশ হয়ে যায়। হিন্দিতে লেখা ক্যপশনে দাবি করা হয়েছে, "দক্ষিণ ভারতে দালালরা কৃষকদের টমাটোর ন্যায্য মূল্য দিচ্ছেন না। তাঁরা প্রতি কেজি টমেটোর জন্য মাত্র পঁচাত্তর পয়সা দর দিচ্ছেন। এই কারণেই কৃষকরা রাস্তার পাশে টমাটো ফেলে দিয়ে যাচ্ছেন। উত্তর ভারতেও দালালদের কল্যাণে টমাটোর ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ বার সবাই মোদীজির কৃষি আইনের মাহাত্ম্য বুঝবে।"
টুইটটির আর্কাইভ দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
একই ভিডিও ফেসবুকেও একই রকম ক্যাপশন সমেত ভাইরাল হয়েছে।
পোস্টটি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
বুমের হেল্পলাইন নম্বরেও ভিডিওটি যাচাই করার জন্য পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: মিথ্যে সাম্প্রদায়িক দাবিতে ফালাকাটা কলেজ ছাত্রীকে অক্রমণের ঘটনা ছড়াল
তথ্য যাচাই
মালয়লম ভাষায় এশিয়ানেটের এই নিউজ বুলেটিনটির উপর বুম কিওয়ার্ড সার্চ করে, এবং দেখতে পায় যে, ভিডিওটি তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক চ্যানেলে ১৫ মে, ২০২১ তারিখে পোস্ট করা হয়েছিল। ভিডিওটির শিরোনামে মালয়লমে লেখা হয়েছিল, "লকডাউন: কর্নাটকে টমাটো চাষিরা সঙ্কটে"।
(মালয়লমে মূল লেখা:ലോക്ക്ഡൗൺ: കർണാടകത്തിലെതക്കാളികർഷകർദുരിതത്തിൽ)
এই সূত্র ধরে আমরা ইউটিউবে সার্চ করি, এবং অমর উজালা, ওয়ান ইন্ডিয়া নিউজ-এর একাধিক সংবাদ প্রতিবেদনের হদিস পাই, যেখানে এই একই দৃশ্য ২০২১ সালের মে মাসে আপলোড করা হয়েছিল। সংবাদ প্রতিবেদনগুলিতে বলা হয়েছে যে, এপিএমসি মার্কেটে ফসল বিক্রি করতে ব্যর্থ হওয়ার পর কর্নাটকের কোলারে চাষিরা ক্রেট সাজানো টমাটো রাস্তার ধারে ফেলে দিকে বাধ্য হন।
২৪ মে ২০২১ প্রকাশিত ডেকান হেরাল্ডের সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, "ভিন রাজ্যে ফসল পাঠানোর উপর বাধানিষেধ, হোটেল বন্ধ থাকা, এবং সমস্ত ধরনের অনুষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে বাজারে চাহিদা তলানিতে ঠেকেছে। ফলে, মাঝারি পরিমাণ উৎপাদনের পরেও বাজারে টমাটোর জোগান উদ্বৃত্ত। তার ফলে কোলার ও চিক্কাবাল্লাপুর জেলার চাষিরা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন যে, তাঁদের উৎপন্ন ফসলের ত্রিশ শতাংশেরও বেশি গত দুই মাস যাবৎ অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। গত সপ্তাহের শেষে অন্তত দশ হাজার বাক্স টমেটো নষ্ট হয়, কারণ কোলারের সিএমআর মান্ডিতে তা নিলামের জন্য ডাক পায়নি।"
কোলারের এক কৃষক পেড্ডুর জনর্দন গৌড়া ডেকান হেরাল্ডকে জানান, "আমার ছয় একর মাপের ক্ষেত থেকে ফসল তোলার জন্য শ্রমিকদের মজুরি বাবদ খরচ হবে সাত-আট লক্ষ টাকা। কিন্তু বেসরকারি মান্ডিতে ১৫ কেজির জন্য আমরা দাম পাই ৪০-৫০ টাকা। সেই কারণেই আমি দুই একর জমির ফসল তুলিনি।"
আরও পড়ুন: কলাম্বিয়ার ২০১৮ সালের ভিডিওকে বলা হল নাগাল্যান্ডে নাগরিক নিহত