মেক্সিকোয় (Mexico) সরকার-বিরোধী বিক্ষোভের ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় পাকিস্তানে (Pakistan) সরকার ও সেনার (Army) বিরুদ্ধে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের (Imran Khan) সমর্থকদের প্রতিবাদ বলে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে।
ফেসবুক পোস্টগুলিতে পাকিস্তানিদের অবমাননাকর ভাবে ‘জিহাদি’ বলা হয়েছে এবং দাবি করা হয়েছে যে সে দেশে গৃহযুদ্ধ আসন্ন।
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওটি মেক্সিকোর। তাতে প্রস্তাবিত নির্বাচনী সংস্কারের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে।
গত বছর, পাকিস্তান তেহরিক-এ-ইনসাফ(পিটিআই) পার্টির প্রধান ইমরান খান ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা লেগে আছে। সেই থেকে, দেশে দ্রুত নির্বাচন করার দাবিতে, ইমরান খান পর পর গণবিক্ষোভ সংগঠিত করেন। প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ওই পার্টির ‘জেল ভরো’ আন্দোলনের ফলে, পিটিআই-এর ৫০০ সক্রিয় কর্মী গ্রেফতার হন। ওই পরিপ্রেক্ষিতে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, “জিহাদি দেশে এবার গৃহযুদ্ধ হবে। এই সাম্প্রতিক ভিডিওতে ইসলামাবাদ-এ ইমরান খানের সমর্থকদের সমাবেশ দেখুন। পাকিস্তানের সেনার বিরুদ্ধে এই রকম পরিস্থিতি আগে কখনও সৃষ্টি হয়নি। জিহাদিরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে খতম হবে। জয় সনাতন।”
(হিন্দিতে মূল ক্যাপশন: अब होगा गृह युद्ध जिहादी देश में इस्लामाबाद में इमरान खान के सपोर्ट वालों की भीड़ की ताजा वीडियो देखो पाकिस्तान की फौज के खिलाफ ऐसा माहौल पहले कभी नही बना । आपस में ही लड़ मरेंगे ये जिहादी। जय सनातन)
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
ভাইরাল ভিডিওটির একটি প্রধান ফ্রেম নিয়ে বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। দেখা যায়, মেক্সিকোর রাজনীতিক সারা রোচা মেডিনা, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ওই একই ভিডিও তাঁর অফিসিয়াল সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে আপলোড করেন।
স্প্যানিশ ভাষায়, তিনি লেখেন, “মিশন সম্পন্ন হয়েছে। মেক্সিকো সিটিতে প্লাজা ডে লা কনস্টিটুসিওঁ নাগরিকদের সমাবেশে ভরে গেছে। তাঁরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে আওয়াজ তোলেন।”
পোস্টটি দেখতে ক্লিক এখানে।
২৭ ফেব্রুয়ারি, মেক্সিকো’র দ্য ইনস্টিটিউশনাল রেভোলিউশনারি পার্টিও তাদের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে ভিডিওটি টুইট করে।
ফেব্রুয়ারিতে, মেক্সিকো’র কংগ্রেস, ন্যাশনাল ইলেক্টোরাল ইনস্টিটিউট-এ (আইএনই) বেশ বড় মাপের পরিবর্তনের প্রস্তাবে সিলমহোর দেয়। সেটি হল একটি স্বয়ংশাসিত সংস্থা, যেটি দেশে নির্বাচন পরিচালনা করে। পরিবর্তনগুলির মধ্যে রয়েছে ব্যয় কমানো, কর্মী কমানো, এবং ওই সংস্থার নজরদারি হ্রাস করা। মেক্সিকো’র প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর আইএনই’র বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অদক্ষতার অভিযোগ এনেছেন। কিন্তু মেক্সিকো’র মানুষ মনে করছেন, ওই পরিবর্তনগুলির ফলে ওই নির্বাচনী সংস্থার ক্ষমতা কমে যাবে।
আমরা ওই সমাবেশের ভৌগোলিক অবস্থানটিও নির্দিষ্ট করতে পারি। সেটি ২৬ ফেব্রুয়ারি, মেক্সিকো’র সেন্ট্রাল জোকালো স্কয়ারে সংঘঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর-এর প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন সমবেত মানুষ।
রয়টর্স-এর একটি ভিডিও রিপোর্টে বলা হয়, “নির্বাচনী সংস্থার ক্ষমতা খর্ব করা ও গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হানার সরকারি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে মেক্সিকো’য় বিশাল জনসমাবেশ হয়। মনে করা হচ্ছে. প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর-এর সরকারের বিরুদ্ধে এটাই হল সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ।”
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’ও তাদের প্রতিবেদনে বলে যে, নির্বাচনী আইনে পরিবর্তন আনাকে কেন্দ্র করেই ওই বিক্ষোভ ঘটেছে। মনে করা হচ্ছে, ওই আইনের পরিবর্তনগুলি বেশ কঠোর। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, “লোপেজ ওব্রাডর-এর প্রস্তাবগুলি গত সপ্তাহে পাস হয়েছে। প্রস্তাবগুলি আইনে রূপান্তরিত হলে, কর্মীদের মাইনে ও স্থানীয় নির্বাচনী অফিসগুলি ও পর্যবেক্ষকদের জন্য আর্থিক অনুদান কমে যাবে। যে সব প্রার্থী তাঁদের নির্বাচনী প্রচারের খরচা দাখিল করতে ব্যর্থ হবেন, তাঁদেরকে দেওয়া আর্থিক সাহায্যও কমিয়ে দেওয়া হবে।”