ছত্তীসগঢ়ের (Chhattisgarh) রায়পুরে রাস্তার মাঝখানে এক নাবালিকাকে এক ব্যক্তির নিগ্রহ করার দৃশ্য সম্বলিত একটি অস্বস্তিকর ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে অপপ্রচার করা হচ্ছে যে, ঘটনাটি সাম্প্রদায়িকতার (Communal Claims) কারণে ওই হিন্দু মেয়েটি (Hindu Girl) আক্রান্ত হয়েছে।
বুম রায়পুর জেলার পুলিশ সুপার প্রশান্ত আগরওয়ালের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছে, এই ঘটনাটির মধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ব্যাপার নেই, কেননা এ ক্ষেত্রে আক্রমণকারী ও আক্রান্ত দুজনেই একই সম্প্রদায়ের।
ভাইরাল হওয়া এই ১০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে একটি মেয়েকে রাস্তার মাঝখানে চুলের মুঠি ধরে টানতে-টানতে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে একটি লোককে, যার অন্য হাতে একটা ধারালো অস্ত্র রয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার পর নাবালিকা মেয়েটির রক্ত ঝরছে দেখা যাচ্ছে এবং তার পোশাকও রক্তাক্ত।
ভিডিও ক্লিপটি শেয়ার করে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, “ওই জানোয়ারটা মেয়েটিকে আক্রমণ করার পরেও নির্বিঘ্নে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে। দেড় ঘন্টা ধরে এই কান্ড চলেছে। মানুষরা কি সব মরে গেছে? আমার আরও রাগ হচ্ছে এই জন্যে l ছত্তীসগঢ়ের পুলিশ কী ঘুমোচ্ছে?”
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটি খোঁজ করে দেখেছে, ২০ ফেব্রুয়ারি এনডিটিভির নিউজ বুলেটিনটি ইউটিউবে আপলোড করা হয়।
রিপোর্টটিতে বলা হয়, ১৬ বছরের একটি মেয়ে ৪৭ বছরের একটা লোককে বিয়ে করতে রাজি না-হওয়ায় ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে মেয়েটিকে রাস্তার মাঝখানে লোকটি চুলের মুঠি ধরে টানতে-টানতে নিয়ে গেছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে-করতে। পুলিশ জানিয়েছে যে, রবিবার লোকটিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এক হাতে নাবালিকার চুলের মুঠি ধরে অন্য হাতে ধরা ছোরা উঁচিয়ে ওঁকার তিওয়ারি নামের এই লোকটির এই ভিডিও শনিবার সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
একই ঘটনার বিবরণ দিয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ১৯ ফেব্রুয়ারি।
সেই প্রতিবেদনে লেখা হয়, “কয়েক দিন আগেই ওঙ্কার দোকানে কাজ করা মেয়েটি কাজ ছেড়ে দেয়। টাকাপয়সার লেনদেন নিয়ে ওদের মধ্যে মতবিরোধ হয়ে থাকবে। শনিবার রাত্রে ওঙ্কার অস্ত্র নিয়ে ঢুকলে সেই মতবিরোধ চরম আকার নেয়। মেয়েটি তার পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার প্রতিবাদ করলে ওঁকার তাকে মারতে শুরু করে।”
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয় যে, মেয়েটির আঘাত গুরুতর, তার প্রচুর রক্তক্ষয়ও হয়েছে l সে এখন হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।
বুম এর পর রায়পুরের সিনিয়র পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট প্রশান্ত আগরওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বুমকে ঘটনাটির ওপর একটি প্রেস বিবৃতি পাঠিয়ে দেন l তিনি জানান, ওঙ্কার তিওয়ারির হাতে আক্রান্ত হওয়ার পর মেয়েটির ভাই গুধিয়াড়ি থানায় তার বোনকে ছুরিকাঘাতের একটি অভিযোগও ওঙ্কারের বিরুদ্ধে দায়ের করেছে।
ঘটনাটির পিছনে কোনও হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক বিরোধের কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার সে ধরনের আশঙ্কার কথা নাকচ করেন।