কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু (Kiren Rijiju) সম্প্রতি একটি ভিডিও টুইট করে দেখিয়েছেন, নবনিযুক্ত শিক্ষামন্ত্রী আতিশি একটি দুর্দশাগ্রস্ত স্কুল পরিদর্শন করছেন। তারপরই তিনি অভিযোগ করেন, স্কুলটির দুর্দশা দিল্লি সরকারের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়ার (Manish Sisodia) অধীনে কী হয়েছিল, ভিডিওটি তার প্রমাণ।
রিজিজুর আরও অভিযোগ, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি শিক্ষা ক্ষেত্রে যে উন্নয়নের দাবি করে থাকে, তা নস্যাৎ হয়ে যায় যখন আতিশি স্কুলের দুরবস্থা নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেন।
বুম দেখেছে, দিল্লি পৌরনিগমের অধীন এই স্কুলটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিজেপির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। বিজেপির ১৫ বছরের নিয়ন্ত্রণ হটিয়ে দিল্লি পৌরনিগম আম আদমি পার্টিকে জয়ী করে এবং ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রীমতী ওবেরয় পুরসভার মেয়র নির্বাচনে জেতার পর আতিশি ওবেরয়কে নিয়ে পৌরনিগম পরিচালিত স্কুলগুলি পরিদর্শন করেন।
মার্চ মাসে মনীশ সিসোদিয়া ইস্তফা দেওয়ার পর আতিশির উপরেই শিক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব বর্তায়। উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ সামলানো সিসোদিয়া আবগারি বিভাগের দুর্নীতির দায়ে বর্তমানে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন। আতিশি জানিয়েছেন, সিসোদিয়া ফেরার আগে পর্যন্ত তিনিই শিক্ষা মন্ত্রকের কাজ দেখবেন।
১০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে আতিশিকে স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে এবং স্কুল চত্বর ঘুরে দেখতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে দিল্লির নবনির্বাচিত শিক্ষামন্ত্রী অবহেলার এবং রক্ষণাবেক্ষণের দুরবস্থার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে তিরস্কারও করেন।
রিজিজু ভিডিওটি টুইট করে ক্যাপশন লেখেন, “কেজরিওয়ালজি দাবি করেছিলেন, সিসোদিয়া নাকি দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষামন্ত্রী এবং দিল্লির স্কুলগুলি নাকি বিশ্ব মানের! আমাকে বলা হয়েছে, নতুন শিক্ষামন্ত্রী আতিশি কেজরিওয়াল এবং সিসোদিয়া উভয়কেই ফাঁস করে দিয়েছেন!”
টুইটটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
নিখিল ভারত মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী নেত্তা ডিসুজা এবং আরও বেশ কিছু কংগ্রেস সমর্থক একই স্কুল পরিদর্শনের অন্য একটি ভিডিও টুইট করে আম আদমি পার্টির পরিচালনাধীন দিল্লি সরকারের নিন্দা করেছেন।
সেই পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
রাজনৈতিক কুশলী সহদেব সালারিয়া এবং আরও কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারীও একই ভুয়ো দাবি সহ ভিডিওটি শেয়ার করেছেন।
এই পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, আতিশি একটি টুইটে ধরিয়ে দিয়েছেন যে, বিগত ১৫ বছর ধরে বিজেপি-ই দিল্লি পৌরনিগম শাসন করেছে, যত দিন না গত ফেব্রুয়ারি মাসে শেলী ওবেরয় মেয়র নির্বাচনে ওই দলকে পরাস্ত করেন। তত দিন ওই স্কুলও বিজেপির নিয়ন্ত্রণেই ছিল।
রিজিজুর টুইটের মিথ্যা ধরিয়ে দিয়ে আতিশি লিখেছেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক যে রিজিজু-জি জানেনই না যে এই স্কুলটি পৌরনিগমের নিয়ন্ত্রণে, যা গত ১৫ বছর ধরে তাঁরই দলের ছিল! যদি তাঁর দল আম আদমি পার্টিকে দমন করা ছাড়া অন্য কোনও কাজে তার সময় ব্যয় করতো, তাহলে হয়তো তার নিয়ন্ত্রিত পুর স্কুলগুলি এমন দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়তো না।”
টুইটটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আমরা আরও লক্ষ করেছি যে, রিজিজুর টুইট করা ভিডিওটি দিল্লির আম আদমি পার্টিরই ইউটিউব চ্যানেলের একটি সরাসরি সম্প্রচার থেকে তুলে নেওয়া, যেটি ২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল সম্প্রচার করা হয়েছিল। সেখানে এটাও দেখানো হয় কী ভাবে শিক্ষামন্ত্রী আতিশি এবং মেয়র শেলী ওবেরয় স্কুলের দুর্দশার জন্য কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করছেন।
দীর্ঘতর ওই ভিডিওটির ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে সেই দৃশ্যটি দেখা গেছে। ভিডিওটির ১০ সেকেন্ডের মাথায় স্কুলের কোড নম্বর ১২৫৩৪০৪ লেখা দেখা যায়।
এর পর আমরা দিল্লির শিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইট ঘেঁটে পৌরনিগম নিয়ন্ত্রিত স্কুলগুলির তালিকা সংগ্রহ করি। খোঁজখবর চালিয়ে দেখি, আলোচ্য স্কুলটি উত্তর-পূর্ব দিল্লির ওয়াজিরাবাদ এলাকায় অবস্থিত। নাম এমসিডি প্রাইমারি স্কুল (বয়েজ)।
এতে করে প্রমাণ হয় যে, স্কুলটি দিল্লি পুরসভার অন্তর্গত, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিজেপির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে ছিল।
বিজেপি দিল্লি পুরসভায় ক্ষমতাসীন ছিল ২০০৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত
অরবিন্দ কেজরিওয়াল পরিচালিত আম আদমি পার্টি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ২৫০ সদস্যের পৌরনিগমে ১২৮টি আসন পেয়ে দীর্ঘ ১৫ বছরের বিজেপি শাসনের অবসান ঘটায়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব প্যাটেল নগরের শেলী ওবেরয় দলের প্রার্থী হিসাবে মেয়র পদের নির্বাচনে জয়লাভ করেন। উল্লেখ্য ১৯৫৭ সালের দিল্লি পুরসভা আইনে এই পৌরনিগম গঠিত হয়। পূর্ব দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশন, উত্তর দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশন এবং দক্ষিণ দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনকে মিশিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ মিউনিসিপাল কর্পোরেশন গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে।