সোশাল মিডিয়ায় ২০১৮ সালের ১৮ মে পশ্চিম মেদিনীপুরের (Paschim Medinipur) বাগডুবি গ্রামে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের সালিশি নিদানে মহিলার হেনস্থার অভিযোগের ছবি বিভ্রান্তিকর দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের (West Bengal Assembly Election) সময় জিইয়ে তোলা হয়েছে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ছবিতে এক মহিলাকে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) দলীয় কার্যালয়ের সামনে জুতোর মালা পরিয়ে কান ধরে ওঠবোস (squat) করতে দেখা যায়।
ছবিটি ফেসবুকে জিইয়ে তুলে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে নারী সুরক্ষার প্রশ্নে কটাক্ষ করা হয়েছে। ভোট প্রচারে তৃণমূল কংগ্রেসের 'বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়' প্রচারের সমালোচনা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজ্যের তৃতীয় দফার নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত হিংসার খবর প্রচারিত হয় গণমাধ্যমে। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলেও উলুবেড়িয়া দক্ষিণে বিজেপি পার্থী পাপিয়া অধিকারী ও আরামবাগে আক্রান্ত হন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুজাতা মন্ডল।
ছবির ক্যাপশন হিসাবে পোস্টটিতে লেখা হয়, "২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়ানোর জন্য বাংলার মেয়েকে জুতোর মালা পরিয়ে উঠবস করাচ্ছেন। এরা আবার বলে বাংলা নিজের মেয়েকে চায়! (এটা কোন রাজনৈতিক পোস্ট নয় আমি একজন নাগরিক (ভোটার) হিসাবে শুধু মনে করিয়ে দিলাম)"।
আপনারা এখানে পোস্টটিকে দেখতে পাবেন। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: বাংলার ভোট: সম্পাদিত আনন্দবাজার পত্রিকার দাবি তৃণমূল কংগ্রেসের জয়
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে ওঠবোস করানোর কারণ হিসাবে ওই মহিলা পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হন এই দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ওই মহিলাকে হেনস্থা করা নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বুম ছবিটিকে রিভার্স সার্চ করে ২০ মে ২০১৮ প্রকাশিত দ্য টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদনে দেখতে পায় ছবিটিকে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী পশ্চিম মেদিনীপুরের বাগডুবি গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ ওই মহিলার স্বামী গোপাল দাস আগে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন। কিন্তু ওই আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় সেবার আর সদস্য হিসেবে পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ হারান গোপাল দাস। পঞ্চায়েত ভোটের দিন ওই দম্পতির বিরুদ্ধে বিজেপিকে সমর্থনের অভিযোগ তোলে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস সদস্যরা। সংবাদের সূত্র অনুযায়ী ভোট চলাকালীন ওই মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ দখল করতে বাধা দেয় ও জুতো মারার হুমকি দেয়।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে ১৭ মে পঞ্চায়েত ভোটের ফল বেরনোর পরের দিন ওই মহিলাকে তূণমূল কংগ্রেস কর্মীরা দলীয় কার্যলয়ের সামনে হেনস্থা করে। সালিশি সভা ডেকে ক্ষমা চাওয়া, পরে কান ধরে ওঠবোস ও জুতোর মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরানের নিদান দেওয়া হয়। লোকসভা ভোটে বাগডুবিতে হেরে যায় তৃণমূল কংগ্রেস।
বিষয়টি নিয়ে ২০ মে ২০১৮ প্রকাশিত সংবাদ প্রতিদিনের মেদিনীপুর সংস্করণের ও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে ও এখানে।
আরও পড়ুন: ২০১৩ ছত্তীসগঢ় মাওবাদী হানা ছড়াল সম্প্রতি সুকমায় নিহত জওয়ানের দেহ বলে