সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় সেনার (Indian Army) এক জওয়ানের পিঠে 'পিএফআই' (PFI) লেখার এক ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে কেরলের কোল্লাম জেলার কাদাক্কল শহরে এই ঘটনাটি ঘটেছে যখন কিছু ব্যক্তি ভারতীয় সেনার এক জওয়ানকে আটক করে তার পিঠে নিষিদ্ধ সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার সংক্ষিপ্ত লেখাটি লিখে দেয়। এই বিষয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনও দেখা গেছে।
বুম যাচাই করে দেখেছে এই ঘটনাটি ভুয়ো এবং ভারতীয় সেনার জওয়ান শাইন কুমার দ্বারা ভুয়ো ভাবে সাজানো হয়। কাদাক্কল পুলিশ বুমকে জানিয়েছে এই সেনা জওয়ানকে গ্রেফতার করা হয়েছে ঘটনাটি ভুয়ো ভাবে সাজানোর কারণে।
সেনা জওয়ান শাইন কুমারের বন্ধু জোশী-ও একটি ভিডিওর মাধ্যমে শিকার করেছেন তিনি এই ঘটনাটি সাজানোর সাথে জড়িত এবং তিনি এই সেনা জওয়ানের পিঠে পিএফআই লিখেছিলেন। এই স্বীকারোক্তি নিয়ে মালায়ালম সংবাদমাধ্যম ২৪ নিউজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত করেছে।
এই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাতে ক্যাপশন সহ ছড়িয়েছে। একটি বাংলা সংবাদমাধ্যম এই ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করে লেখে,"কেরালায় সেনা জওয়ানকে মারধর করে পিঠে PFI লিখে দিয়েছে ইসলামিক মৌলবাদীরা #IndianArmySoldier #Attacked #IslamistAttack #Kerala #কেরালা #PFI #ইসলামিকমৌলবাদী #পিএফআই #বামসরকার #ভারতীয়সেনাজওয়ান #হামলা"
এই পোস্টের লিংক এখানে দেখা যাবে।
এই পোস্টের আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
সেনা জওয়ানের পিঠে পিএফআই লেখার প্রতিবেদন প্রকাশিত করেছে লেটেস্টলি নামক বাংলা সংবাদমাধ্যম। তাদের শিরোনামে লেখা, "Kerala: ভারতীয় সেনা জওয়ানের উপর নিষিদ্ধ ইসলামিক সংগঠনের হামলার অভিযোগ, জামা ছিঁড়ে লেখা হল PFI"
এই প্রতিবেদনের লিংক দেখা যাবে এখানে।
এই প্রতিবেদনের আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
হিন্দু ভয়েস নামক বাংলা সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনেও এই ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে, যার লিংক দেখা যাবে এখানে।
এই প্রতিবেদনের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
পিএফআই দুষ্কৃতীদের সেনা জওয়ানের ওপর হামলার ভুয়ো তথ্য প্রকাশিত হয়েছে এএনআই, আউটলুক ইন্ডিয়া , টাইমস নাউ , হিন্দুস্তান টাইমস , ইন্ডিয়া টুডে , ফ্রি প্রেস জার্নাল , এনডিটিভি এবং লাইভ মিন্ট সংবাদমাধ্যম ছাড়াও কিছু ডানপন্থী সংবাদমাধ্যম অপইন্ডিয়া এবং পঞ্চজন্যাতে।
এএনআই আরো বিশদে নিজেদের প্রতিবেদনে জানায়,"কেরালার কোল্লামে ছুটিতে থাকা একজন সৈনিক পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে এবং জানিয়েছে তাকে ৫-৬ জন দুষ্কৃতী আক্রমণ করেছে, যারা হামলার পরে, তার পিঠে পিএফআই লিখে দেয়।"
তথ্য যাচাই
সেনা জওয়ানকে আহত করার এই প্রতিবেদনগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর, বহু এক্স (প্রাক্তনে টুইটার) ব্যবহারকারীরা মালায়ালম সংবাদমাধ্যম ২৪ নিউজের একটি প্রতিবেদন টুইট করে যেখান থেকে জানা যায় এই গোটা ঘটনাটি সাজায় সেনা জওয়ান শাইন কুমার।
এই প্রতিবেদনে শাইন কুমারের বন্ধু জোশির একটি স্বীকারোক্তিও উপস্থিত রয়েছে যেটা তিনি কাদাক্কল পুলিশের কাছে করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন 'পিএফআই' লেখাটি তিনি নিজে লিখেছেন জওয়ান শাইন কুমারের পিঠে, এবং তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় এই ঘটনার পর।
এই স্বীকারোক্তির ভিডিওতে জোশি বলেন,"আমি তার মুখে ডিএফআই শুনি, তাই প্রথমে ডিএফআই লিখি, কিন্তু তারপর সে বলে পিএফআই তাই লেখাটি বদল করে পিএফআই করি। আমায় শাইন তাকে ঘুষি মারতেও বলে কিন্তু ওই সময় আমি মদ্যপ অবস্থায় ছিলাম এবং সেটা করতে পারিনি। তারপর সে বলে সে শুয়ে পড়বে এবং তাকে ধরে টানতে কিন্তু তার শরীরের ভার বেশি থাকার কারণে আমি তা করতে পারছিলাম না এবং শেষে টেপের সাহায্যে সে নিজেকে বেঁধে নেয়।"
দ্য নিউজ মিনিটও একই প্রতিবেদন প্রকাশিত করে বিশদে জানিয়েছে পুলিশ শাইন কুমার এবং জোশির মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে এবং দেখে সেই সময় মোবাইল ফোন দুটি একই জায়গায় উপস্থিত ছিল।
এই বিষয় আমরা দ্য টেলিগ্রাফ সংবাদমাধ্যমের ইপাপের আর্কাইভ থেকে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই যেখানে বলা হচ্ছে এই ঘটনাকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো সাম্প্রদায়িক তথ্য ছড়ানোর জন্য কেরলের বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে মুসলিম ইয়ুথ লীগ, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের যুব সংস্থা। এই প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে শাইন কুমার এবং তার বন্ধু জোশি পুলিশ হেফাজতে স্বীকার করেছেন এই গোটা ঘটনাটি সাজানো।
এই প্রতিবেদনের লিংক এখানে দেখা যাবে।
বুম কাদাক্কল পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর বিনিল ভিএসের সাথে যোগাযোগ করে এবং তিনি ২৪ নিউজের প্রতিবেদনের তথ্যগুলি সঠিক বলে জানিয়েছেন। "এই সেনা জওয়ান বিখ্যাত হওয়ার জন্য তার বন্ধুর সাথে এটি করেছিল। এই মুহূর্তে সেই সৈনিক এবং তার বন্ধু জোশি, পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তিনি (সৈনিক) জোশিকে তার পিঠে পিএফআই লিখতে বলেছিলেন। যে রং এবং ব্রাশ দিয়ে এটি লেখা হয়েছিল সেগুলি জোশির বাড়ি থেকে উদ্ধার করা গেছে। এই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এবং তাদের আদালতে পেশ করা হবে", বলে তিনি জানান।
বুম ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগ করে, যিনি আমাদের নিশ্চিত করেছেন "বিষয়টি পুলিশের তদন্তাধীন"। "সেনাবাহিনী এই বিষয় সহযোগিতা করছে।এই তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে", তিনি জানান।