গলা অবধি বন্যা জলে দাঁড়িয়ে একটি বাচ্চা মেয়ের নারকেল গাছ ধরে বাঁচতে চাওয়ার ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভুয়ো দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে। ফেসবুকে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশের সাতক্ষীরাতে ঘূর্ণিঝড় আমপান পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাঙালি মেয়ের বাঁচতে চাওয়ার নির্মম আকুতি।
গত সপ্তাহের ঘূর্ণিঝড় আমপানের গতি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ও বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চল সাতক্ষীরা থেকে পটুয়াখালিতে ছিল সবচেয়ে বেশি। জলমগ্ন হয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা।
ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে দেখা যায় একটি বাচ্চা মেয়ে গলা অবধি জলে নিমজ্জিত অবস্থায় একটি নারকেল গাছের মাথা ধরে বাঁচবার চেষ্টা করছে। সকরুণ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সে ছবিটিতে।
ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "আম্ফান ঝড়ের এটাই হবে বিশ্বের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক ফটো। সাতক্ষীরায় প্রায় নারকেল গাছের মাথা ছুই ছুই জলের স্রোতে প্রাণে বাঁচতে মেয়েটি গাছকে শক্ত করে ধরে আছে। বাঁচার জন্যে প্রানপন লড়াই।''
ছবিটি একই ক্যাপশন সহ আমপান পরবর্তী সময়ে ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে।
২০১৫ সালের সেপ্টম্বর মাসে অসমে বন্যার ভীতিকর ঘটনা বলে দ্য হিন্দুর রাজনৈতিক সম্পাদক নিসতুলা হেব্বার ছবিটি টুইট করেছিলেন।
Very scary pic of the floods in Assam via @aashishSmehta pic.twitter.com/4c8icAQJsN
— Nistula Hebbar (@nistula) September 11, 2015
নিসতুলাকে ছবির সূত্র ধরে ইন্ডিয়াটুডে অসমে বন্য পরিস্থিতি বলে এই ছবিটি ব্যবহার করে।
আরও পড়ুন: আমপানে রাস্তার অ্যাসফল্ট আস্তরণ উঠে গেছে? ছড়ালো মালয়োশিয়ার পুরনো ছবি
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখে ছবিটি আমপান ঘূর্ণিঝড়ের কোনও দৃশ্য নয়। ২০০৬ সালে সুনামি: দ্য আফটারম্যাথ নামে দুই পর্বের একটি টিভি মিনিসিরিজের দৃশ্য।
২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত এনপিআর ও ইথোনিয়ার সাংবাদ মাধ্যেম পোস্টটাইমিসে ছবিটিকে সুনামি: দ্য আফটারম্যাথ মিনি সিরিজের দৃশ্য বলা হয়েছে।
এইচবিও ও বিবিসির যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরের সুনামির পটভূমিকায় কাল্পনিক এই মিনি সিরিজটি পরিচালনা করেছিলেন ভারত নাল্লুরি। গবেষণা ও সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে আবি মরগান কাহিনীটির চিত্রনাট্য লেখেন।
আবি মরগান এক সাক্ষাৎকারে জানান থাইল্যান্ডের ফুকেট ও খাও লাক-এ শুটিং করা হয়েছিল এই মিনি সিরিজের দৃশ্যের। তিনি আরও জানান সুনামি: দ্য আফটারম্যাথ কোনও ডকুড্রামা নয়, সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি কাহিনী। শিশু শিল্পী জাজমিন মারাসো মারাথা কার্টার চরিত্রে অভিনয় করেন।
৬ বছরের একটি শিশু সুনামির জলোচ্ছ্বাসে নারকেল গাছ ধরে বাঁচার চেষ্টা, পরে হারিয়ে যাওয়া, কর্তৃপক্ষের সুনামি সতর্কতা দেওয়া নিয়ে গাফিলতি ইত্যাদি বিষয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই মিনিসিরিজে। বুম ইউটিউবে এই দৃশ্যটির একটি ইউটিউব ভিডিও খুঁজে পেয়েছে। ২ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময়ের পরে দেখা যাবে নারকেল গাছ ধরে বাচ্চা মেয়ের বাঁচতে চাওয়ার দৃশ্যটি।
বুম ভাইরাল ছবি, শিশু শিল্পী জাজমিন মারাসোর মিনি সিরিজটির দৃশ্য তুলনা করছে। প্রত্যেকের ছবিতে মিল রয়েছে। ইনসেটে চিউইটেল ইজিওফার(Chiwetel Ejiofor)-এর কোলে জাজমিম মারাসো।
২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভারতমহাসাগরের অতলে ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্পের জেরে প্রবল সুনামির জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সমুদ্র সন্নিকটস্থ উপকূলবর্তী অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়ে যায় স্বাভাবিক জনজীবন।