প্রায় আট বছরের পুরনো একটি ক্লিপে, বিক্ষোভকারীদের সরাতে তুরস্কের পুলিশকে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। রাস্তায় অবস্থানরত বিক্ষোভকারীরা প্রার্থনা করার সময়, পুলিশ তাদের তুলে দিতে ওই পদক্ষেপ নেয়।
১৬ অক্টোবর ২০২০ তে, স্যামুয়েল প্যাটি নামের এক ফরাসি স্কুল শিক্ষকের শিরশ্ছেদ করার পরিপ্রেক্ষিতে ক্লিপটি শেয়ার করা হচ্ছে। প্যাটি তাঁর ক্লাসে প্রফেট মহম্মদের একটি ব্যঙ্গচিত্র দেখান। অনেকের মতে সেটি আপত্তিকর ছিল। আর সেই কারণে, চেচেন বংশোদ্ভূত এক ইসলামি চরমপন্থী, প্যাটির স্কুলের সামনেই তাঁর শিরশ্ছেদ করে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ বাকস্বাধীনতার আদর্শকে রক্ষা করার কথা বলার সময় ইসলামপন্থীদের সমালোচনা করেন ও ঘোষণা করেন যে, মহম্মদের ব্যঙ্গচিত্র আঁকা "বন্ধ হবে না"। মাকরঁর এই মন্তব্যের প্রতিবাদে অনেক মুসলমান সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ফরাসি দ্রব্য বয়কট করার ডাক দেন।
ভাইরাল ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে, সুরক্ষা বাহিনী রাস্তায় প্রার্থনারত বিক্ষোভকারীদের জলকামান আর কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে সরানর চেষ্টা করছে।
১.১৫ মিনিটের ক্লিপটি এই ক্যাপশনটি সহ শেয়ার করা হচ্ছে: "ইউকসেকোভার রাস্তায় প্রার্থনারত মুসলমানদের আক্রমণ করছে ফরাসি পুলিশ।"
ফেসবুকে ভাইরাল
ওই ক্যাপশনটি দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করলে দেখা যায়, মিথ্যে দাবি সহ ক্লিপটি সেখানেও শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির প্রধান ফ্রেমগুলি দিয়ে আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তার ফলে, তুরস্কের বেশ কিছু ওয়েবসাইট সামনে আসে। সেগুলিতে ওই ঘটনাটি সম্পর্কে লেখা হয়। সেই সঙ্গে যে ছবি ব্যবহার করা হয়, যেগুলি ভাইরাল ভিডিওটির ছবির সঙ্গে মিলে যায়। প্রতিবেদনগুলিতে বলা হয়, ঘটনাটি তুরস্কের ইয়ুকসেকোভায় ঘটে। ইউকসেকোভা জায়গাটি তুরস্কে, ফ্রান্সে নয়। অথচ, তেমনটাই দাবি করা হয়েছে ভাইরাল ক্যাপশনে।
২ নভেম্বর ২০১২ তে, 'হ্যাবারটার্ক'-এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, এক দল ছাত্র ইউকসেকোভার চেঙ্গিস টপেল স্ট্রিটে জমায়েত হয়ে অবস্থান করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, কারাগারে বন্দিদের অনশন ধর্মঘটের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, ছাত্ররা পিকেকে-র (কার্ডিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি) সমর্থনে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাঁদের হাতে ছিল ওকালান পতাকা। এবং পুলিশ তাঁদের চলে যেতে বললেও, তাঁরা সে জায়গা থেকে সরে যাননি। এরপরই পুলিশ তাঁদের ওপর জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।
আমরা ১২ নভেম্বর তারিখের ওই একই ভিডিওটিরও সন্ধান পাই। তুর্কি ভাষায় লেখা সেটির বিবরণে যা বলা হয়, তা এ রকম: "ইউকসেকোভায় শুক্রবারের প্রার্থনার সময় যা ঘটে, তা প্রার্থনাকারীদের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেয়।"
ভাইরাল ক্লিপে যে ঘটনাটি দেখা যাচ্ছে, আসল ভিডিওতেও সেটিই দেখানো হয়েছে।
২০১২-র ক্লিপ ও ভাইরাল ক্লিপটি আমরা মিলিয়ে দেখি। দেখা যায়, দু'টি হুবহু মিলে যাচ্ছে।
প্যারিসে ফরাসি শিক্ষক খুনের ঘটনার পর থেকে সম্পর্কহীন ভিডিও আর ছবি ব্যবহার করে মিথ্যে খবর ছড়ানো হচ্ছে। বুম সেগুলি আগেও খণ্ডন করেছে।