২০১৬-র একটি ক্লিপ এখনকার বলে শেয়ার করা হচ্ছে। ওই ক্লিপে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে একটি চিঠি পড়ে শোনাতে দেখা যাচ্ছে। চিঠিটিতে অভিযোগ করা হয় যে, ২০১৫-র বিহার নির্বাচনের আগে, আকবরউদ্দিন ওয়েইসি ও অমিত শাহর মধ্যে একটি গোপন চুক্তি হয়।
বিহারের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে, ওয়েইসির পার্টি অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) এই প্রথম ৫টি আসন জেতে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্লিপটি শেয়ার করা হচ্ছে। আকবরউদ্দিন ওয়াইসি হলেন অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভায় এআইএমআইএম পার্টির নেতা ও এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসির ভাই। ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) ওই নির্বাচনে জয়ী হয়।
১.২৩ মিনিটের ক্লিপটিতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসৌদিয়াকে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। আর সেখানে, কেজরিওয়াল গুজরাটের প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক যতীন ওঝার কাছ থেকে পাওয়া একটি চিঠি পড়ে শোনাচ্ছেন। চিঠিটিতে দাবি করা হয়েছে যে, বিহার নির্বাচনের আগে, বিজেপি নেতা অমিত শাহ ও আকবরউদ্দিন ওয়েইসির মধ্যে রাজ্যের মুসলমান অধ্যুষিত উত্তর ভাগে, ভোট 'পোলারাইজ' বা মেরুকরণ করার 'গোপন চুক্তি' হয়।
কেজরিওয়ালকে বলতে শোনা যাচ্ছে, "১৫ তারিখ রাত তিনটের সময় ওয়েইসি ও অমিত শাহর মধ্যে একটি মিটিং হয়। ওঝাজি বলছেন সেই মিটিংয়ে উনি উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এবং ঠিক হয়, শ্রী ওয়াইসি মুসলমান অঞ্চলে প্রার্থী দেবেন। সেখানে ৫ তারিখে ভোট হয়। এও ঠিক হয় যে, সেখানে শ্রী ওয়েইসি তাঁর ভাষণে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াবেন এবং ভাষণটি লিখে দেবেন অমিত শাহ নিজে। তার ফলে, সমাজে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে।"
ক্লিপটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়, "গুজরাটে, অমিত শাহর বাড়িতে, অমিত শাহ ও আকবরউদ্দিন ওয়াইসি বিহার নির্বাচন সংক্রান্ত পরিকল্পনা করেন।"
একই ভিডিও বাংলা ক্যাপশনেও ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "অরিবিন্দ কেজরিওয়াল মহাশয়ের, একটি ভিডিও আসাউদ্দিন ওয়াইসি ও অমিত শা র মিটিংয়ের।"
ফেসবুকে ভাইরাল
একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করলে দেখা যায় যে, একই বিভ্রান্তিকর ক্যাপশন সমেত ক্লিপটি সেখানেও শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
'অরবিন্দ কেজরিওয়াল', 'অমিত শাহ' ও 'ওয়েইসি' – এই কি-ওয়ার্ডগুলি দিয়ে সার্চ করলে, আমরা দেখি যে, ভাইরাল ক্লিপটি ২০১৬-র। তাতে, প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক যতীন ওঝার কাছ থেকে পাওয়া একটি চিঠি পড়ে শোনাতে দেখা যাচ্ছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। ওঝা পরে আম আদমি পার্টিতে যোগ দেন।
যে চিঠিটি কেজরিওয়াল পড়ে শোনান, তাতে ওঝা দাবি করেন যে, বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ ও এআইএমআইএম নেতা আকবরউদ্দিন ওয়েইসির মধ্যে ২০১৫-র বিহার নির্বাচনে, সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভোট বিভাজন করার একটি আঁতাত গড়ে ওঠে।
ভাইরাল ক্লিপটির ১.০২ মিনিটের মাথায়, ওই একই কথা শোনা যায়। কিন্তু আগের যে অংশটিতে কেজরিওয়াল চিঠিটি পড়ার সময় মিটিংয়ের তারিখটা উল্লেখ করেছিলেন, সেটি কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে ওঝা লিখেছিলেন, "১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫-য়, ভোর তিনটের সময়, শ্রী অমিত শাহর বাড়িতে, শ্রী অমিত শাহ ও শ্রী আকবরউদ্দিন ওয়াইসির মধ্যে যে মিটিং হয়, আমি সেটির প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।"
তাছাড়া, ওই চিঠিটি সম্পর্কে কেজরিওয়াল একটি লেখা পান। লেখাটি উনি টুইট করেন এবং বলেন, "এটা যদি সত্য হয়, তাহলে বিজেপি-মোদী-শাহর আসল রূপ বেরিয়ে পড়ল।" তাঁর প্রতিক্রিয়ায়, এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি মানহানির মামলা করার হুমকি দেন।
১১ জুলাই, ২০১৬-য় প্রকাশিত পিটিআই-এর রিপোর্টে বলা হয়, বিজেপির গুজরাট শাখা অভিযোগটি অস্বীকার করে বলে, "সংবাদ মাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ" করতেই ওঝা ওই দাবি করেছেন।